প্রথমবারের মত ইসরায়েলের নাগরিকত্ব পাচ্ছেন তরুণ বাংলাদেশি চিকিৎসক

ডা. শাদমান জামান নামে এক বাংলাদেশি তরুণ ইসরায়েলে আশ্রয় নিয়ে নাগরিকত্বের আবেদন করেছেন। ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইসরায়েল ভ্রমণে আসেন। বলা হচ্ছে ইসরায়েলে বৈধভাবে বেড়াতে আসা তিনিই প্রথম বাংলাদেশি।

জেরুজালেম পোস্ট এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এক সাক্ষাৎকারে জেরুজালেম পোস্টকে তিনি জানিয়েছেন কি করে ইসরায়েলের ঘোরবিরোধী একটি মুসলিম দেশে বড় হয়েও তিনি ইসরায়েলের পক্ষে সরব হয়েছেন এবং ইহুদি ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসরায়েলের নাগরিকত্ব নেবার পরিকল্পনা করেছেন।

ডা. শাদমান জামান জেরুজালেম পোস্টকে জানিয়েছেন ইহুদি বিদ্বেষী দেশে বড় হয়ে, ইহুদি বিদ্বেষে পরিপূর্ণ পাঠ্যপুস্তকে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের কুৎসা পড়েও তিনি ইহুদিবাদে আগ্রহী হয়েছেন। তার কারণ তার পরিবার ছিলো এ ব্যাপারে যথেষ্ঠ উদার।

তারা শাদমানের উপর ইসরায়েল বা ইহুদি ধর্ম নিয়ে কোনো বাধা ধরা ধ্যান ধারনা চাপিয়ে দেননি। বরং তার দাদা দেশের বাইরে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে ইহুদি ধর্ম এবং ইসরায়েল সম্পর্কিত বই এনে দিয়েছে তাকে পড়বার জন্য।

শাদমানের দাদা নিজেও ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করেছেন। ইসরায়েলে ঘুরতে আসবার প্রচণ্ড ইচ্ছা ছিলো তার। তবে সে ইচ্ছে তিনি পূরণ করে যেতে পারেননি। মারা যাবার আগে শাদমানের দাদা তাকে বলে যান, প্রথম দেশ হিসেবে তার উচিৎ হবে ইসরায়েল ভ্রমণ করা।

শাদমান জেরুজালেম পোস্টকে বলেন “আমার দাদা তার প্রজন্মের প্রথম মানুষ যিনি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি এবং রক্ষার দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু আরব দেশগুলোর সাহায্য পাওয়ার আশায় বাংলাদেশ সরকারের ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেনি। অথচ ইসরায়েল ১৯৭২ সালেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশ সেই স্বীকৃতিকেও প্রত্যাখ্যান করে।”

শাদমান জামান বলেন- “আমি যে স্কুলে পড়তাম সে স্কুলের সিলেবাস ক্যামব্রিজের কারিকুলাম অনুসরন করতো, অথচ তার মধ্যেও এমন বইও ছিলো যেখানে লেখা ছিলো- ইহুদিরা সাক্ষাৎ শয়তানের প্রতিচ্ছবি। আমার ভাগ্য ভালো যে আমার পরিবার এই একই রকম মতামত পোষণ করে না।”

ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো রকম কূটনৈতিক যোগাযোগ না থাকার পরও শাদমান জামান প্রথম বাংলাদেশি যিনি বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়েই ইসরায়েলে ঘুরতে আসেন এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থাতেই তিনি ইসরায়েলের সমর্থনে নানান রকম কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে বাংলাদশে তার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়।

তার বাবা মা শেষ পর্যন্ত তাকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেন। লন্ডনের কুইন ম্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় জিওনিস্ট অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন শাদমান। তবে এর জন্য নানান রকম হুমকির মুখেও পড়তে হয়। শাদমান জেরুজালেম পোস্টকে জানিয়েছেন মোট ২৭ বার তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে।

তারপরও তিনি দমে জাননি। সেখানে থেকেই জিওনিস্ট ফেডারেশন গ্রেট বৃটেনের এক প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে সম্প্রতি আবারও ইসরায়েলে যান শাদমান। এবার তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে ইসরায়েলে থাকাবার এবং পড়ালেখা করবার আবেদন করেন। তার আবেদনে সাড়াও দিয়েছে ইসরায়েল সরকার।

শাদমান জামান ইহুদি ধর্মের পক্ষে নানান প্রচারণায় অংশ নিয়ে লন্ডনে বসবাসরত ইহুদি গোষ্ঠীর নজরে আসেন। তাকে তারা নিজেদের একজন মনে করে এবং তাদের সাথেই থাকবার আমন্ত্রণ জানায়। ইহুদিদের এই অভাবনীয় আতিথেয়তায় মুগ্ধ শাদমান চার মাস আগে ইহুদি ধর্মে ধর্মান্তরিত হন।

শাদমান বলেন- “ইহুদি ধর্ম সত্যিকারের ধর্ম। ইহুদি ধর্ম থেকেই প্রাথমিকভাবে নানান আচার আচরণ পরবর্তিতে ইসলাম ধর্মে এসেছে।” আপাতত ইসরায়েল থেকে অন্য কোথাও যাবার ইচ্ছে নেই শাদমানের। তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্বও ত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন।

পেশা হিসেবে চিকিৎসক হবার ইচ্ছে নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে শাদমান জামান পিএইচডি করবার আবেদন করেছেন ইসরায়েলে। তার পরিকল্পনা হচ্ছে বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন।

তিনি বলেন-“ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হলে দুই দেশের জন্যই সেটা মঙ্গলজনক হবে। আমি প্রচুর শত্রু বানিয়ে ফেলেছি এর মধ্যেই। কিন্তু তাতে কিছুই আসে যায় না কেননা আমি সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”