‘প্রধান বিরোধীদল না আসায় নির্বাচন জৌলুস হারাতে বসেছে’

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকছে। এতে এই নির্বাচন জৌলুস হারাতে বসেছে। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, নির্বাচনকে অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। আগামী উপজেলা নির্বাচন সার্বিকভাবে অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না, এই সত্যকে মেনে নিয়েই নির্বাচন করতে হবে।’

‘ধারণা করা যায়, চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রায় প্রত্যেকেই নির্বাচিত হবেন এবং ওই পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না, এটাই বাস্তবতা। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য শব্দ দুটির ঔজ্জ্বল্য থাকে না। তারপরও আনুষ্ঠানিকতার কারণেই নির্বাচন করে যেতে হয়।’

নির্বাচন কমিশনার আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, নির্বাচনের মৌলিক কাঠামো যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনের মৌলিক কাঠামো বলতে সংবিধান ও আচরণবিধিমালায় বর্ণিত সংশ্লিষ্ট সকলের দায়-দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পরিপালনের নির্দেশ মান্য করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতে চেয়েছি।’

মঙ্গলবার আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং ও সহকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মাহবুব তালুকদার এসব কথা বলেন। এ সময় সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।

মাহবুব তালুকদার লিখিত বক্তব্য দেন। মোট নয়টি পয়েন্টে তিনি বক্তব্য দেন। গণতন্ত্র, ভোটে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য, অংশগ্রহণহীন ভোটে ভোটারদের নাজুক অবস্থাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করলেও মূল আলো ফেলেছেন তিনি উপজেলা নির্বাচন নিয়েই।

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘গণতন্ত্র হচ্ছে ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের বেছে নেওয়া এবং তাদের দিয়ে জাতীয় বা স্থানীয় পর্যায়ে দেশ পরিচালনা। জাতীয় পর্যায়ের মতো স্থানীয় পর্যায়েও গণতন্ত্র একটি সুনির্দিষ্ট অবকাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু বিশেষ কোনো আদেশ-নির্দেশে যদি সেই অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আজ্ঞাবহ হয়ে পড়েন। এই অবস্থা কখনই কাম্য নয়। কিন্তু বর্তমানে উপজেলা পরিষদ যেভাবে দায়িত্ব পালন করার কথা, তা সম্ভব হচ্ছে না। আমি আগেও বলেছি, উপজেলা পরিষদ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী না হলে এর নির্বাচনও গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই তো নির্বাচন। নির্বাচন কখনো গণতন্ত্রহীনতাকে প্রশ্রয় দিতে পারে না।’

ভোটারদের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমার মনে হয়, নির্বাচনে যাঁরা ভোটার, বিশেষত উপজেলা নির্বাচনে যাঁরা ভোটার, তাঁদের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত না হলে এবং কার্যত ভোটারদের নিরাপত্তা বিধান করা না গেলে তাঁরা ভোটকেন্দ্রে আসতে উৎসাহিত হন না। নির্বাচনে ভোটারদের প্রাধান্য ও ভোটদানের স্বাভাবিকতার ওপরই নির্বাচনের সাফল্য নিভরশীল।’