প্রবাসীর স্ত্রীকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায়…

স্বামী প্রবাসে থাকার সুযোগে দেবরের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন রেহেনা বেগম। সেই দৃশ্য দেখে ফেলেন পাশের বাড়ির আত্মীয় আরশ আলী। পরে আরশ আলীর সঙ্গেও পরকীয়ায় লিপ্ত হন রেহেনা। তাদের অনৈতিক সম্পর্কের দৃশ্য দেখে ফেলেন রেহেনার জা চম্পা বেগম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রেহেনা ও আরশ আলী মিলে চম্পার ঘরে পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। ওই ঘরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান চম্পা। লোমহর্ষক ওই ঘটনার বর্ণনা এভাবেই আদালতে দিয়েছেন ঘাতক আরশ আলী।

ঘটনার পর সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয় বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের রহিমপুর পূর্বপাড়া গ্রামের রেহেনাকে। আর ৯ অক্টোবর রেহেনার পরকীয়া প্রেমিক গ্রামের মৃত হুছন আলীর ছেলে আরশ আলীকে (৪৫) আটক করে পুলিশ। আটকের পরদিন সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাকন দে’র কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আরশ আলী।

আরশ আলী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, তার খালাতো ভাই ওমান প্রবাসী। তার স্ত্রী রেহেনা বেগম (২৫) থাকেন দেশে। একদিন তিনি দেখতে পান রেহেনার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে তার দেবর কয়েছের। আরশ আলী রেহেনা ও কয়েছকে আপত্তিকর অবস্থায় ধরে ফেলেন। এ বিষয়ে রেহেনা আরশ আলীকে চুপ থাকতে বলেন এবং আরশ আলীর সঙ্গেও পরকীয়ায় লিপ্ত হন। তাদের মধ্যে ১৫/১৬ বার শারীরিক সম্পর্ক হয়। একদিন এ সম্পর্ক রেহেনার ভাবি চম্পা বেগম ও তার ছেলে ইমরান দেখে ফেলে। রেহেনার স্বামী দেশে আসলে এ বিষয়ে ঝগড়া হয়।

প্রায় সময় রেহেনার সঙ্গে ঝগড়া হলে চম্পা বেগম হুমকি দিতেন পরকীয়া প্রেমের ব্যাপারে। রেহেনা ও আরশ আলী মিলে চম্পা বেগমকে ভয় দেখানোর জন্য পরিকল্পনা করেন। ফলে কামাল বাজারের হুশিয়ার আলীর দোকান থেকে দুই লিটার পেট্রল ক্রয় করে আনেন। পেট্রল রেহেনা তার ঘরে লুকিয়ে রাখেন। গত ২৮ আগস্ট রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে রেহেনার ঘরের দরজায় গিয়ে টোকা দেন আরশ আলী। রেহেনা ঘুম থেকে উঠলে দুইজন মিলে চম্পা বেগমের ঘরের মূল দরজায় পেট্রল ঢালেন এবং আরশ আলী দূর থেকে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন লাগান।

আগুন দেখে রেহেনা দৌড়ে ঘরে ঢুকেন। আর আরশ আলী তার বাড়িতে যান। কিছুক্ষণ পর আরশ আলী লোকজনের আর্তচিৎকার শুনে নিজেও আগুন নেভাতে যানয়। গিয়ে দেখেন চম্পা বেগম ও তার ছেলে-মেয়েসহ ছয় জন আগুনে পুড়ে গেছে। এলাকার লোকজন তাদের ঘর থেকে বের করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়। পরবর্তীতে আরশ আলী আত্মগোপনে চলে যান। গত ৯ অক্টোবর আরশ আলীর দুলাভাই তাকে ফোন করে আসতে বললে তিনি সিলেটের হুমায়ুন রশিদ চত্বরে আসেন। সেখান থেকে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

আরশ আলী তার জবানবন্দিতে বলেন- আমি রেহেনার সঙ্গে মিলে অন্যায় কাজ করেছি, ক্ষমা চাই।

উল্লেখ্য, গত ২৮ শে আগস্ট রাত ১১টায় বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের রহিমপুর পূর্বপাড়া গ্রামে চম্পা বেগম ও তার স্বামী ফারুক মিয়া তাদের তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে রহিমপুর পূর্বপাড়া গ্রামে নিজ বসতঘরে দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আনুমানিক আড়াইটায় চম্পা বেগম তার ছোট ছেলেকে প্রস্রাব করাতে ঘুম থেকে সজাগ হলে দেখতে পান কে বা কারা হঠাৎ ঘরের সামনের স্টিলের দরজার নিচের ভাঙা অংশ দিয়ে বাইরে থেকে ঘরের ভেতরে কিছু নিক্ষেপ করার সঙ্গে সঙ্গে শব্দ হয়ে ঘরের ভেতরে দরজার পাশে রাখা সোফায় আগুন লেগে যায়।

এ সময় ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে আগুনে দগ্ধ হন চম্পা বেগম (৪৫), তার স্বামী ফারুক মিয়া (৫০), মেয়ে রিফা বেগম (১৮), ছেলে এমাদ উদ্দিন (১৪), ইমরান আহমদ (১২) ও নিজাম উদ্দিন (১০)। তাদের আর্তচিৎকারে পাশের ঘরে থাকা রাজু মিয়া (ফারুক মিয়ার ছেলে) ঘর থেকে বের হয়ে চিৎকার করলে আশেপাশের লোকজন এসে ঘরের দরজা ভেঙে আহতদের উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় এবং সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২ সেপ্টেম্বর সকালে চম্পা বেগম মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের মৃত আব্দুল মছব্বিরের ছেলে সফিক মিয়া বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, তার ভগ্নিপতি ফারুক মিয়ার পার্শ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দা মৃত হুসন আলীর ছেলে আরশ আলী (৩৭) ও আবরুছ আলী (৪৯) এবং ফারুক মিয়ার সৎ ভাই ফরিদ মিয়ার স্ত্রী রেহেনা বেগম (২৫) গংদের সঙ্গে কিছুদিন যাবৎ চম্পা বেগম ও তার স্বামী ফারুক মিয়ার শত্রুতা ও মনোমালিন্য চলে আসছে। আরশ আলী ও রেহেনা বেগমের অনৈতিক সম্পর্ক ও পরকীয়া প্রেমের বিষয়ে ফারুক মিয়া প্রতিবাদ করায় উক্ত বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সালিশ বৈঠক হয়। আর এই আক্রোশে আরশ আলী ফারুক মিয়াকে সপরিবারে খুন করার হুমকি দেন। আরশ আলীর অনৈতিক চলাফেরার বিষয়টি আবরুছ আলীকে ফারুক মিয়া অবহিত করলে আবরুছ তার বাড়িতে ফারুক মিয়াকে ডেকে নিয়ে অপমান ও গালিগালাজ করেন। এতে সন্দেহ হচ্ছে, আরশ আলী, আবরুছ আলী ও রেহেনা বেগম গংরা নিজে অথবা ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদেরকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে খুন করার উদ্দেশ্যে বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করে চম্পা বেগমকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।

বিশ্বনাথ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুদ্দোহা বলেন, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে।