প্রবাসী স্বামীর অর্থ হাতিয়ে কোথায় যান স্ত্রীরা?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই বিশ্বে শ্রম বাজারে ব্যাপক চাহিদা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের মানুষ কর্মের খোঁজে বিদেশে যাওয়া শুরু করে। ফলে দেশের বৈদেশিক আয় বাড়ে, স্বক্ষমতা অর্জনের পথেও এগুনো শুরু করে।

কিন্তু, যেসব মানুষ বিদেশে যাচ্ছেন তারা যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন, তেমনি কাউকে কাউকে আবার দালাল চক্রে পড়ে সর্বস্বও হারাতে হচ্ছে। এতো গেলো অন্যের দ্বারা প্রতারণার শিকার হওয়া। কিন্তু, নিজ ঘরেও তারা প্রতারণার যে শিকার হন না, তাতো নয়। অনেকেই যুবতী স্ত্রী ঘরে রেখে বিদেশে যাওয়ার কারণে, তাদের স্ত্রীরা পরকীয়ায় জড়িরে তার সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাচ্ছেন। এসব সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রের মাথা ব্যথা তেমন দেখা যায় না।

প্রতি বছরই এমন কয়েক হাজার সমস্যার সমাধান গ্রাম্য সালিশ ও বিভিন্ন এনজিও মাধ্যমে সমাধান করা হয়। যার ফলে, সেগুলো মিডিয়ায় আসে খুব কম। এই সব সামাজিক ব্যাধির কারণে সামাজিক অবক্ষয় ভয়ঙ্কর ধারণ করবে বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।

শুধু ঝিনাইদহ জেলাতেই এই সমস্যা মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বর ও থানা পুলিশ। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গোবিন্দপুরের বাবুল দীর্ঘদিন ধরে বিদেশ। তিনি নিজের কষ্টার্জিত টাকা পাঠাতেন স্ত্রী সাগরির কাছে। তিল তিল করে জমানো স্বামীর টাকা নিয়ে এক সময় সগারিকা নিরুদ্দেশ হন বাবার বাড়ির গ্রামের মধ্য বয়সি এক পুরুষের সঙ্গে।

সদর উপজেলার গোবরাপাড়া গ্রামের সাবদার হোসেনের স্ত্রী রেহানা খাতুন স্বামীর পাঠানো টাকা পয়সা নিয়ে চলে যায় একই গ্রামের নইমুলের ছেলে পিন্টুর সাথে। নগরবাথান যাদবপুর গ্রামের সুজনের স্ত্রী স্বামীর পাঠানো ১০ লাখ টাকা নিয়ে অন্যের ঘরে ওঠে।

হরিণাকুন্ডু উপজেলার সোনাতনপুর গ্রামের সফিউর রহমানের স্ত্রী রোজিনা খাতুন স্বামীর পাঠানো ৫ লাখ টাকা ও সোনার গহনা নিয়ে স্বামীর ঘর ছাড়ে। ঝিনাইদহের ডাকবাংলা বাজারের মাগুরাপাড়ার আনিছুর রহমান থাকেন ওমানে। দুই বছর আগে সোনালী খাতুনের সাথে আনিছুরের বিয়ে হয়। এই দম্পতির ঘরে ৮ মাসের একটি বাচ্চাও আছে। অথচ স্ত্রী সোনালী খাতুন স্বামীর পাঠানো অর্থ নিয়ে ফুফাতো ভাই তাজমুলের হাত ধরে নিরুদ্দেশ হয়েছেন।

তথ্যানুসন্ধান করে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন গ্রামে হরহামেশে এমন ঘটনা ঘটছে। কোন কোন স্ত্রী পারিবারিক মধ্যস্থতায় স্বামীর ঘরে ফিরলেও অনেক স্ত্রী আবার ফিরছেন না। এ নিয়ে থানা কোট কাচারি করছেন সাবেক স্বামীর স্বজনরা।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দীন জানান, তার ইউনিয়নে এ রকম প্রায় ৩/৪টি ঘটনা ঘটেছে। স্বামী বিদেশ থাকার কারণে স্ত্রীরা অন্যের সাথে চলে যাচ্ছেন। সামাজিক বন্ধনের অভাব ও ধর্মীয় অনুশাসনের অভাবে এমনটি ঘটছে বলে তিনি মনে করছেন।

চট্টগ্রামে পরকীয়া সম্পর্কের টানে ২ সন্তানের বাবার হাত ধরে ৩ সন্তানের জননী প্রবাসীর স্ত্রী পালিয়ে যান
ঝিনাইদহের সাগান্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আল মামুন বলেন, তার ইউনিয়নেও ২/১টি এমন ঘটনা আছে। তিনি মনে করেন স্বামী বিদেশ থাকায় জৈবিক কারণে এমন ঘটনার সূত্রপাত।

ঝিনাইদহের ডাকবাংলা পুলিশ ক্যাম্পের এসআই হাসানুজ্জামান জানান, শুক্রবারও (৫ জানুয়ারি) এমন একটি সামাজিক বিরোধের মিমাংসা করা হয়েছে তার দপ্তরে। মেয়েটি আগের স্বামীর ছেড়ে পরের স্বামীর কাছে যেতে ইচ্ছুক হওয়ায় সে ভাবেই ঘটনার সমাধান করা হয়েছে।

জেলা নারী ও শিশু আদালতের বিশেষ আইন কর্মকর্তা অ্যাড. আব্দুর রশিদ জানান, এ ধরনের কেসগুলো গ্রাম আদালত বা ইউপি চেয়ারম্যানরাই বেশি মিমাংসা করে থাকেন।

ধর্মীয় নেতাদের ভাষ্যমতে, যুবতী স্ত্রী রেখে দেশের বাইরে যাওয়া ঠিক নয়। আর সে কারণে শুধু ঝিনাইদহ কেন, প্রায় জেলাই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।

ঝিনাইদহ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি ব্যুরোর সহকারী পরিচালক সবিতা রানী মজুমদার জানান, ১৯৭৬ সাল থেকে ঝিনাইদহের মানুষ কর্মসংস্থানের খোঁজে বিদেশে যাওয়া করে, ২০১৭ সালে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই জেলা থেকে ৬০ হাজার ৭৮৭ জন পুরুষ ও ৬ হাজার ৭৫৬ জন নারী বিদেশে কাজ করছেন। সর্বমোট জেলা থেকে ৬৭ হাজার ৫৪৩ জন বিদেশে অবস্থান করছেন।