প্রযুক্তির অপব্যবহার আতঙ্কে মানুষ!

মুনসুর রহমান : ‘আবিষ্কার নির্দিষ্ট কোনো স্থান বা পাত্রের জন্য নয়, তাই এর অপব্যবহারের মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি ও সমাজই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে’। এর অপব্যবহার পৃথিবীর সব জায়গায়ই কম বেশি ঘটে। বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বিজ্ঞানের আবিষ্কারকে মানুষ নানা ধরনের অপকর্মে ব্যবহার করছে। এ রকম অগণিত অপরাধমূলক কাজ আমাদের সমাজের নানা স্তরে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই তথ্য-প্রযুক্তির অবদানকে মানবকল্যাণে ব্যবহার করতে হলে সরকারকেই উপযুক্ত আইনি সুরক্ষা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে শহর বা স্কুলের ৬০ শতাংশ ছেলেমেয়েই আজ যে নীল ছবিতে আসক্ত হয়েছে, সে নীল ছবির শুরুটা হয়েছিল ‘ইরোটিক নভেল’-র হাত ধরেই। আর এই নীল ছবির কারণেই প্রযুক্তির অপব্যবহার আতঙ্কে মানুষ! তাই সন্তানের হাতে বড় বড় উন্নত মোবাইল বা ট্যাব দেওয়ার আগে একটু ভাবুন, সে এর নিরাপদ ব্যবহার করতে পারবে কি না। তা না হলে নতুন প্রজন্মের মেধার অপচয় ঠেকানো যাবে না, অপরাধও আরো বেড়ে যাবে। ফলে তরুণ প্রজন্ম শারীরিক অবক্ষয়ের পাশাপাশি মানসিক অবক্ষয়ের শিকার হচ্ছে।

বিশ্বে প্রতিদিন ৭০০ মানুষ আত্মহত্যা করছে শুধু তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহারের শিকার হয়ে। পাশাপাশি এটি বর্তমান প্রজন্মকে অনেকটা নেশাগ্রস্ত করেছে। ফলে প্রজন্ম বইমুখী না হয়ে সময় দিচ্ছে ফেসবুকে, মোবাইলে ও ইন্টারনেটে। কেউ কেউ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানছে। যেমন: কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর আর আমরা হালে দেখেছি রংপুরে। ব্যাপক এলাকাজুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্থাপনাগুলোয় যে হামলা হলো তার পেছনেও আছে তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার।

আধুনিকতার নামে অনেক নগ্ন বিষয়ও চলে আসছে। এর ফলে সমাজ-রাষ্ট্র দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি ২০১৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সাইবার আক্রমণের শিকার বিশ্বের শীর্ষ দুইটি দেশ হচ্ছে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মজার ব্যাপার হলো সাইবার আক্রমণের উপকরণ মলওয়্যার, ভাইরাস, মাইএসকিউএল ইনজেকশন ইত্যাদির উৎপাদন এই দুইটি দেশেই তুলনামূলকভাবে বেশি। সমগ্র পৃথিবীর ৪০ শতাংশ মলওয়্যার রাশিয়া থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়ানো হয়। এ গুলোর ফলাফল হিসাবে বর্তমান পৃথিবীতে প্রতি দিনে প্রায় ছয় লাখেরও বেশি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হচ্ছে।

এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ৫৯ শতাংশ চাকরিজীবী তাদের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরও পুরাতন প্রতিষ্ঠানের ডেটাবেস থেকে তথ্য চুরি করতে তৎপর হন। যেহেতু তথ্য যুক্তিতে দক্ষ ব্যক্তিরাই এই অপরাধমূলক কাজ বেশি করে থাকেন সে ক্ষেত্রে তারা নিজেদের গোপনীয়তার ব্যাপারে বেশ সচেতন এবং পরিণামে তাদের অনেকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। তাই তথ্য-প্রযুক্তি শুধু কল্যাণের জন্য এই মনোভাবটা মানুষের ভেতর জাগিয়ে ব্যক্তি পর্যায়েও নৈতিকতা রেখে তৃণমূলের সব শ্রেণির মানুষের কাছে এই সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার সবার জানা না থাকায় সম্ভব হচ্ছে না।

তাই স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই সর্বনাশা আন্তর্জাতিক চক্রান্ত থেকে বাঁচানোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এবং ক্ষতিকর সাইটগুলো বন্ধ অথবা প্রবেশাধিকার রোধ করতে হবে। অন্যথায় আমরা অচিরেই অসভ্যতার আঁধারে ডুবে যাব। আর তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার এর জন্য আবিষ্কার ও আবিষ্কারক কোনোটিই অপরাধী নয়, অপরাধী হচ্ছে ব্যবহারকারীরা। তাই তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধের মাধ্যমে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা কামনা করে আজকের লেখা সমাপ্ত করলাম।

লেখক : মুনসুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখা।