প্রশ্নটি করেই মনে মনে লজ্জা পেলাম

সুলতানা রহমান : মেয়েটির বয়স এখন ষোলো। দুই বছর বয়সে পাবনা থেকে বাবা মা’র সঙ্গে নিউ ইয়র্ক আসে। কত বছর বয়স থেকে বাবার কাছে ধর্ষিত হচ্ছে-তা তার মনে নেই। মাকে বহুবার বললেও সে তা বিশ্বাস করেনি। এখন সে নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্কসে একটি হাই স্কুলের নাইনথ গ্রেডে পড়ছে।

বাবার কাছে ধর্ষিত হওয়ার বিষয়টি ক্লাসের দু একজন বন্ধুকে জানিয়েছে। তারা তা জানিয়েছে স্কুল অথরিটিকে। স্কুল কতৃপক্ষ জানিয়েছে চিলড্রেন’স সার্ভিসকে। তারা মেয়েটির বাসায় গিয়ে তদারকি করছে। কিন্তু মেয়েটির মা কিছুতেই অভিযোগ বিশ্বাস করতে চাইছে না।

মেয়েটিকে মিথ্যাবাদী বলছে। আর মেয়েটি দোভাষি মাজেদা এ উদ্দীনের কাছে স্বীকার করলেও বাবামার সামনে এলেই তা অস্বীকার করছে। মামলাটি এখন আাদালতে চলছে।

ব্রঙ্কসেরই আরেকটি পরিবারের নয় বছরের এক ছেলেকে ফস্টার হোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কয়েক মাস আগে। ছেলেটি স্কুলের বন্ধুদের বলেছে-রাতে ঘুমানোর সময় বাবা তার যৌনাঙ্গ নিয়ে খেলা করে। বন্ধুরা বলেছে স্কুলে। যথারীতি নিরাপত্তার জন্য শিশুটিকে সরকারি হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

এ্যস্টোরিয়ার আরেকটি বাঙ্গালী পরিবারের মেয়ের বয়স চৌদ্দ। বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে আপত্তিকর মেলামেশা নিয়ে বাবার অভিযোগ ছিলো বেশ কিছুদিন ধরে। কয়েকদিন আগে মেয়ের মোবাইলে বয়ফ্রেন্ডটির ফোন বাজতে দেখে বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত বাবার মতো ‘ঝাড়ি’ দিয়ে ফেসে গেলেন! মেয়ে নাইন ওয়ান ওয়ান এ দিয়ে পুলিশ ডেকেছে। অভিযোগ-বাবা নিয়মিত মাকে মারধোর করে। অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় বাবা এখন জেলে!

২৮ বছর বয়সি নওশীনকে সোমবার কারাদণ্ড দিয়েছে নিউ ইয়র্কের স্ট্যাটেন আইল্যান্ড আদালত। নিজের নবজাতক সন্তানকে হত্যা করায় এ রায় হয়েছে। ২০১৫ সালে অবিবাহিত অবস্থায় সে গর্ভবতী হয়। কিন্তু বিষয়টি নানা ভাবে সে আড়াল রাখে। শিশুটির জন্মের পর ময়লার ব্যাগে ভরে শিশুটিকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়।

একদিনে এতোগুলো ঘটনা শুনে আমি অসুস্থ বোধ করছিলাম। যার কাছে শুনছিলাম তিনি এসব নিয়ে আদালতে, হাসপাতালে, কাউন্সিল অফিসে বাংলাদেশিদের হয়ে দোভাষীর কাজ করেন।

বললাম-নিউ ইয়র্ক থেকে এতো গুলো বাংলা পত্রিকা প্রকাশিত হয়, টেলিভিশন চ্যানেল আছে বেশ কয়েকটা। এসব সেভাবে খবর হয়না কেন? প্রশ্নটি করেই মনে মনে লজ্জা পেলাম। আমিও এখন এখানকার একটি চ্যানেলে কাজ করি। কিন্তু এসব কমিউনিটি পত্রিকা, টেলিভিশন কিভাবে দিন আনতে পান্তা ফুরানোর দশায় আছে তা হাড়ে হাড়ে টের পাই।

অথচ আমেরিকাতে দ্রুত বর্ধনশীল ১০টি কমিউনিটির মধ্যে বাংলাদেশি কমিউনিটি রয়েছে। আর যাদের অধিকাংশই ইংলিশে দুর্বল। কিন্তু তাদের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ত্বশীল গণমাধ্যম এখানে তেমন ভাবে গড়ে ওঠেনি। আর তাই এখানকার বাঙ্গালী জীবনের নিত্যকার সুখ দু:খ, আনন্দ বেদনা থেকে যায় অজানা।

(লেখিকার ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)