প্রশ্নফাঁস: ‘টপটেন গ্রুপের’ খোঁজে র‌্যাব

এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের রহস্য জানতে চক্রের শেষ মাথার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার দাবি করেছে র‌্যাব। তারা বলছে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক ২৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ‘টপটেন’ নামে একটি গ্রুপের সন্ধান মিলেছে। এদেরকে পাকরাও করতে পারলেই সব কিছু স্পষ্ট হয়ে যেতে পারে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসির বেশিরভাগ বিষয়ের প্রশ্নই পরীক্ষার আগে আগে সামাজিক মাধ্যমে এসেছে। বিভিন্ন ফেসবুক এবং হোয়াটস অ্যাপের গ্রুপে রীতিমতো আগে ‘বিজ্ঞাপন’ দিয়ে ফাঁস হয়েছে এসব প্রশ্ন।

গত ৪ ফেব্রুয়ারী প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণার পর থেকে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পরীক্ষার্থী, শিক্ষক, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এমনকি ব্যাংকার সহ আটক হয়েছে ১৫২ জন। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে ট্রেজারি থেকে কেন্দ্রে প্রশ্ন পাঠানোর সময় ছবি তুলে বিভিন্ন গ্রুপের অ্যাডমিনদের কাছে পাঠানো হয়। আর তারাই এসব প্রশ্ন ছড়িয়ে দেয়।

তবে যারা প্রশ্নের ছবি তুলে সেগুলো পাঠায়, তারা রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাদের কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার বা শনাক্ত করা যায়নি।

র‌্যাব জানিয়েছে, চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত অভিযোগে ঢাকা থেকে চারজন, খুলনা মহানগর থেকে নয়জন, নাটোর থেকে ১০ জন, চট্টগ্রাম থেকে তিন জন, কুষ্টিয়া থেকে একজন এবং বগুড়া থেকে একজনসহ সারাদেশ ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। কিন্তু তাদের কারও মাধ্যমেই প্রশ্ন ফাঁস রহস্যের কেন্দ্রে পৌঁছা যায়নি।

এ ব্যাপারে র‌্যাব তিনের অধিনায়ক ইমরানুল হাসান বলেন, ‘টপটেন নামের একটি গ্রুপ রয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করতে পারলে মূলহোতাদের সম্পর্কে হয়ত কিছু তথ্য জানা সম্ভব হবে।’

তবে টপটেন গ্রুপ কারা সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই কর্মকর্তা কোনো তথ্য দেননি।

‘ফেসবুক গ্রুপ অ্যাডমিন’ও জানাতে পারেননি রহস্য

কারা এবং কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস করে সামাজিক মাধ্যমে আপলোডের জন্য পাঠায়, সেই রহস্যের কূল কিনারা করা যায়নি কথিত ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও।

সোমবার রাজধানীর উত্তরখান এবং গাজীপুর এলাকা থেকে পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এদের একজন ফেসবুকে প্রশ্ন ফাঁস করা হয় এমন একটি ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন বলে জানিয়েছিল বাহিনীটি।

এর মধ্যে সোমবার ভোর চারটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে উত্তরখানের কাচকুড়া এবং গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাবের তিনটি দল।

আটকদের মধ্যে হাসানুর রহমান ওরফে ‘রকি ভাই’ প্রশ্ন ফাঁস হয় এমন একটি ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন বলে জানিয়েছে র‌্যাব। অন্যরা হলেন ক্যামব্রিজ হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তানভীর হোসেন, একই স্কুলের অ্যাকাউন্টিং বিষয়ের শিক্ষক মো. ইব্রাহিম, সৃজনশীল কোচিং সেন্টারের শিক্ষক এনামুল হক এবং তাদের সহযোগী সজীব মিয়া।

হাসানুর রহমান একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তার ফেইসবুক আইডি ‘রকি ভাই’। তিনি চার বছর ধরেই প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত। তিনি চলমান এসএসসি পরীক্ষার সব বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁস করার কথাটি র‌্যাবের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাবের ভাষ্যমতে, যেন ধরা না পড়েন সে জন্য প্রতি বিষয়ের জন্য ‘রকি ভাই’ নতুন নতুন গ্রুপ খুলতেন। যেমন-গণিত পরীক্ষার জন্য ‘মোজ্জা’, ইংরেজী দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার জন্য ‘আড্ডা’ এবং পরবর্তী পরীক্ষাগুলোর জন্য ‘ব্লাড ডোনেশন-১’, ‘ব্লাড ডোনেশন-২’, ‘ব্লাড ডোনেশন-৩’ ইত্যাদি গ্রুপ খুলে প্রশ্ন ফাঁস করেছেন।

প্রতিদিন পরীক্ষা শেষে গ্রুপের নাম পরিবর্তন করত এবং গ্রুপ থেকে মেম্বারদের পরিবর্তন করে ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফার এর মাধ্যমে প্রাপ্তি সাপেক্ষে নতুন সদস্য সংযুক্ত করতেন।

পুলিশের আশা ছিল, রিমানন্ডে নিলে ‘রকি ভাই’ ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে প্রশ্ন ফাঁসের একেবারে কেন্দ্রীয় চরিত্রদের কাছে পৌঁছে যাওয়া যাবে বলে আশা করেছিল র‌্যাব ও পুলিশ।

এই আশায় মঙ্গলবার পাঁচ জন রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আদালত তাদেরকে এক দিনের রিমান্ডে দেয়। এরই মধ্যে এই একদিন শেষ হয়েছে এবং পাঁচ জনকে বৃহস্পতিবার আদালতে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।

তবে এই পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও প্রশ্ন প্রাপ্তি রহস্যের কূল কিনারা হয়নি বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জিজ্ঞাসাবাদে তারা অনলাইনে প্রশ্নপত্র পেয়ে থাকে জানিয়ে কাদের মাধ্যমে এসব প্রশ্ন আসে তাদের চিনতে না পারার দাবি করেছেন।

এই পাঁচ আাসামি বর্তমানে উত্তরখান থানা পুলিশের হেফজতেই রয়েছেন। তারা কী তথ্য দিয়েছেন- জানতে চাইলে উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রিমান্ডে গ্রেপ্তারকৃত আমাদেরকে জানিয়েছেন, তারা অনলাইনের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পেয়ে থাকেন। তারাও অনলাইনে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করে থাকেন। তবে মূল হোতারা কারা সে ব্যাপারে তারা কিছুই জানে না বলে দাবি করেছেন।’ ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বোর্ড কিংবা প্রেসের কোন কর্মচারীদের জড়িত আছে কি না, সে সম্পর্কেও তারা কোন তথ্য দিতে পারেনি।’-ঢাকাটাইমসের সৌজন্যে