প্রশ্নফাঁস: না ছাপিয়ে অনলাইনে কেন্দ্রে পাঠানোর চিন্তা

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষায় প্রশ্ন ছাপিয়ে কেন্দ্রে পাঠানোর বদলে অনলাইনেই প্রশ্ন পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষায় নতুন পদ্ধতি চালুর কথাও ভাবছে তারা। তবে এই নতুন পদ্ধতি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে ‘উচ্চ পর্যায়ের’ এক বৈঠক শেষে শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

নিজের চিন্তা ব্যাখ্যা করে সচিব বলেন, ‘আমি মনে করি এমন পদ্ধতি তৈরি করা প্রয়োজন যে পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ছাপানো হবে না ও বিতরণ করাও হবে না। তাহলেই আর ফাঁস হওয়ার সুযোগ থাকবে না।’

তবে এই চিন্তা চূড়ান্ত নয় জানিয়ে সচিব বলেন, ‘আগামী বছর থেকে কোন প্রশ্নপত্র ছাপানো হবে কি না তা নিয়ে ভাবতে হবে। হয়তো কোন ডিভাইজ দিয়ে সরাসরি পরীক্ষার হলে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।’

‘আমি যেটা মনে করি, প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়ার যে প্রক্রিয়া এখন আছে এ পদ্ধতিতে কোনভাবে প্রশ্নফাঁস ঠেকানো সম্ভব হবে না।’

গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষার প্রায় প্রতিটি বিষয়ের এমসিকিউ এর প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। পরীক্ষার আধা ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা আগে এসব প্রশ্ন পাওয়া যায়। প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত অভিযোগে পুলিশ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দেড় শতাধিক আটক করলেও তারা কোত্থেকে প্রশ্ন পেত, সেই রহস্যের কূল কিনারা হয়নি এখনও।

তবে সোমবার রাজধানীর গাজীপুর এবং রাজধানীর উত্তরখান থেকে যে পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন যেসব ফেসবুকের যেসব গ্রুপ বা পেজে প্রশ্ন পাওয়া গেছে তার একটির অ্যাডমিন বলে জানিয়েছে র‌্যাব। এরই মধ্যে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

এখন পর‌্যন্ত পুলিশ যাদেরকে আটক করেছে তাদের কাছ থেকে যে তথ্য পেয়েছে, সেটা হলো, পরীক্ষার দিন সকালে ট্রেজারি থেকে কেন্দ্রে প্রশ্ন পাঠানোর সময় ছবি তুলে তা অ্যাডমিনদের কাছে পাঠানো হয়। আর এই অ্যাডমিনরাই সেই প্রশ্ন ছড়িয়ে দেয়। তবে যারা প্রশ্নের ছবি তুলে পাঠায়, তারা এখনও শনাক্ত বা গ্রেপ্তার হয়নি।

শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন এর আগে বলেছিলেন, বর্তমান পদ্ধতিতে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো সম্ভব নয়। তবে নতুন কী পদ্ধতি, সেটি তিনি সেদিন জানাননি।

মন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে সচিব বলেন, ‘আমরা আজ বসেছি সবচেয়ে হাইয়েস্ট লেভেল। যেসব মন্ত্রণালয় আমাদের এ পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেসব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বর্তমান চলমান পরীক্ষা যেগুলো বাকি আছে এবং যেগুলো শেষ হয়েছে সেই পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে একটি পর্যালোচনা হয়েছে। ’

‘আজকের সভার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাকি পরীক্ষাগুলো ভালোভাবে শেষ করা এবং বাকি পরীক্ষাগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’

আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষায় নতুন কী পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। সচিব বলেন, ‘আগামীতে যেসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সেখানে কোন কর্মকর্তা, শিক্ষক বা কর্মচারীদের হাতে মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা হলের ত্রিসীমানার মধ্যে যদি কেউ থাকে তাহলে তাকে আইনের আ্ওতায় আনা হবে। ’

সেই সঙ্গে কারও মোবাইলে পাওয়া গেলে তাকে আইসিটি আইনের আওতায় বিচারের কথাও জানান সচিব।

‘সুষ্ঠু পরীক্ষা নিশ্চিত করার জন্য যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা আপনাদের (সাংবাদিক) ও অভিভাবকসহ সকলের সহযোগিতা চাই। কারণ এ পরীক্ষায় যারা অংশ নিচ্ছে তারাই আগামীতে এ দেশের নেতৃত্ব দেবে। তারা যেন আদর্শবান হিসেবে গড়ে উঠে।’

এক প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘যে পরিবর্তন আনা হবে তা আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষায় এপ্লাই করা হবে। সেই পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ব্যাংক বানানো হবে। আর তা করতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগবে। সুতরাং তা করতে গেলে আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার আগে সম্ভব নয়। ’

প্রশ্নফাঁসে জড়িত সন্দেহে যাদেরকে আটক করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে- জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৫২ টি মামলা হয়েছে। ১৫২ জনকে আটক করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া অব্যহত রয়েছে। আমরা বলেছি এ পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে এ প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে।’

নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা বা এমসিকিউ বাতিলের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে- জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘এমসিকিউ বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন তা আমাদের জন্য নির্দেশ। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বন্ধ করতে হয় সেই প্রক্রিয়ায় আমাদের আসতে হবে। এটা আমি হঠাৎ করে কিছু বলতে পারব না।’

যেসব বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে তা বাতিলের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে জবাবে সচিব বলেন, ‘এটা নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা যেভাবে সুপারিশ দেবে সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপত্বিতে সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, আইসিটি সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সব দপ্তর ও সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।