পড়া না পারায় পিটিয়ে ছাত্রীর হাত ভাঙলেন শিক্ষিকা

ঝালকাঠিতে পড়া না পারায় জোড়া বেত দিয়ে পিটিয়ে ছাত্রী সাদিয়া আক্তারের হাত ভেঙে দিয়েছেন এক শিক্ষিকা। সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের বেরপাশা মহিলা মাদ্রাসায় গত ১৮ জুন এ ঘটনা ঘটে।

সাদিয়া ওই মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। ঘটনার পর থেকে শিক্ষিকা জোহরা মোস্তারি মেরী মাদ্রাসায় অনুপস্থিত।

শিক্ষার্থীর পরিবারের অভিযোগ, ওই শিক্ষিকার পক্ষ থেকে কিছু টাকা নিয়ে বিষয়টি চেপে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। রোববার ঘটনাটি জানতে পেরে পুলিশ ও সাংবাদিক সাদিয়ার বাড়িতে গেলে তার পরিবার মুখ খোলে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন মাদ্রাসায় সাদিয়া আরবি পড়া দিতে না পারায় তাকে জোড়া বেত দিয়ে বেদম প্রহার করেন শিক্ষিকা মেরী। এতে শিশুটির ডান হাতের কনুইয়ের হার ভেঙে যায়। এরপর ওই শিক্ষিকা সাদিয়াকে শাসিয়ে বলেন, ‘বাড়িতে গিয়ে বলবে আছাড় খেয়ে হাত ভেঙেছে।’

এ বিষয়ে সাদিয়ার প্রতিবন্ধী বাবা শহীদ মোল্লা ও মা রীনা বেগম জানান, ‘বাড়িতে আসার পর সাদিয়া হাতের ব্যথায় ছটফট করতে থাকে। আমরা ঘটনা শুনে মেয়েকে হাসপাতালে নেওয়ার উদ্যোগ নেই। তখন ওই শিক্ষিকার স্বামী শামিম আকন আমাদের দুই হাজার টাকা দিয়ে চুপ থাকতে বলেন। আমরা টাকা নেইনি। তবে হাতের যন্ত্রণায় মেয়ে অতীষ্ঠ হয়ে উঠলে তিন দিন পর গোপনে তাকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে ডাক্তার আমাদের বিষয়টি জেলা প্রশাসক, পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানাতে বলেন। আমি অসহায় মানুষ। প্রশাসনের কাছে যেতে না পেরে এক সাংবাদিককে মোবাইল ফোনে ঘটনা জানাই।

এ ব্যপারে সোমবার (২৪ জুন) ওই শিক্ষিকার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার ঘর তালাবদ্ধ। মোবাইল ফোনেও তাকে পাওয়া যায়নি। মাদ্রাসায় গিয়েও পাওয়া যায়নি তাকে। এ সময় মাদ্রাসা সুপার শহীদুল ইসলাম জানান, শিক্ষিকা মেরী ক’দিন থেকেই অনপুস্থিত। আজ (গতকাল) তিনি অসুস্থতার কথা জানিয়ে মাদ্রাসায় আসেনি।

শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়া প্রসঙ্গে মাদ্রাসা সুপার বলেন, আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। ঘটনার পর আমি শিক্ষিকাকে ছাত্রীর বাড়ি গিয়ে চিকিৎসার জন্য সহায়তা করার অনুরোধ করেছিলাম। ঘটনার সময় মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ঢাকায় থাকায় তাকে বিষয়টি জানানো হয়।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষিকা মেরীর স্বামী শামিম আকন মোবাইল ফোনে জানান, শিশুটি পড়া না পারায় বেতের পিটুনি কনুইয়ে পড়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসার জন্য আমি কিছু টাকা দিয়েছিলাম, কিন্তু শিশুটির বাবা তা নেননি। এ বিষয়ে মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি সাফিয়া রহমান ডেইজি বলেন, ‘আমি ঢাকায়। এসে তদন্ত করে শিক্ষিকা দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

ঝালকাঠি থানার ওসি শোনীত কুমার গায়েন বলেন, মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে শিশুটির বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে ঘটনার আংশিক সত্যতা পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে মামলা নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।