‘ফখরুল যুদ্ধাপরাধীর সন্তান, নিজেও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একজন যুদ্ধাপরাধীর সন্তান এবং ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিহিত করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্য‌ালয়ের সামনে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে দুপুরে এক গণঅনশন কর্মসূচিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমার সন্দেহ হয় যে, তারা একুশের চেতনায় বিশ্বাস করে? করে না। তারা কী একাত্তরের চেতনায় বিশ্বাস করে? করে না। যে স্বাধীনতার কথা তারা বলতে থাকে তার কতটুকু তারা বিশ্বাস করে?’

ওই বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে হানিফ বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব, বিভিন্ন সময় আপনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে না, ধারণ করে কে? কোন লজ্জায় বলেন আপনারা ? ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কারা ধ্বংস করেছিল?

আপনার দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এই দেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কুখ্যাত রাজাকার, আল বদর যারা কারাগারে আটক ছিলেন, দালাল আইন বাতিল করে তাদেরকে মুক্তি দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা বিরোধী শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করেছিল কে? কুখ্যাত রাজাকার আব্দুল আলিমকে মন্ত্রী বানিয়েছিল কে?

কারা স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতিষ্ঠা করেছিল? যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামীকে কারা রাজনীতিতে সুযোগ করে দিয়েছিল। কুখ্যাত রাজাকার প্রধান গোলাম আজমকে কে দেশে ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্ব দিয়েছিল। এ সবগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের? সেটাই বিশ্বাস করেন আপনি।’

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেব, আপনি নিজেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন- এ রকম নজির নেই। আপনার পরিবার সম্পর্কেও আপনার এলাকায় অভিযোগ আছে। আপনার বাবাও স্বাধীনতা বিরোধী অবস্থানে ছিলেন। এখন নিজেরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ঝান্ডা ধরতে চান।’

আপনার শরম লাগে বলতে? আপনিও একজন যুদ্ধাপরাধীর সন্তান, ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে, মুক্তিযোদ্ধার লেবাস ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তাবায়নে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। সেটা বারবার প্রমানিত হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ ভিন্নমত সহ্য করতে পারছে না বলে বিএনপি মাহাসচিবের বক্তব্যের সমালোচনা করে হানিফ বলেন, ‘২০০১ সালে নির্বাচনের পর আপনারা সারাদেশে গণহত্যা চালিয়েছেন। যেভাবে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল এর সঙ্গে একমাত্র গণহত্যাকে তুলনা করা যায়। তখন ২৬ হাজার নেতা কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। গণতন্ত্রের কথা বলেন কোন মুখে? আজকে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই আপনারা এখনও সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন।’

বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দেওলিয়া হয়ে গেছে দাবি করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত আমাদের ভেতরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। ঐ বিএনপি-জামায়াত আজকে রাজনৈতিকভাবে দেওলিয়া হয়ে গেছে। তাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা নেত্রী দূর্নীতির কারণে আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত ও বিদেশে পলাতক। এই বিএনপির কোন ভবিষ্যত নেই। যেভাবে জামায়াত আস্তে আস্তে নিংশেষ হয়ে গেছে ঠিক সেভাবে বিএনপি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে নি:শ্চিহ্ন হয়ে যাবে।’

‘সেই কারণে তারা সুযোগ পেয়ে বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করছে। নেতাকর্মীদের অনুরোধ করবো, এই সমস্ত বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। এরা এসে আমাদের কাঁধে ভর করে, আমাদের মাঝে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের কোন সহযোগী সংগঠনে ঠাই যেন না পায়, সে ব্যপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাউসারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, ডা. নুজহাত চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা।