ফুলের সৌরভ ছড়াচ্ছে বেরোবি

এইচ. এম নুর আলম, বেরোবি প্রতিনিধি : পৃথিবীতে এমন মানুষ নেই যে ফুলকে ভালবাসেনা। ফুলকে সৌন্দর্যের প্রতীক বলা হয়। ফুলকে অতি পবিত্র জিনিস মনে করা হয়। ফুল ছাড়া কোনো অনুষ্ঠান বা দিবস উদযাপন হয়না।

বিভিন্ন প্রকৃতির ফুলের সৌরভ বিভিন্নভাবে মন মাতায়। নানা প্রজাতির ফুল প্রকৃতিপ্রেমীদের নানাভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বর্তমান বিশ্বে ফুলের ব্যবসা সফল একটি প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা।

এই নানা প্রজাতির ফুল শোভা পাচ্ছে প্রতিটি দৃশ্যমান জায়গায়। শোভা পাচ্ছে প্রতিটি একাডেমিক ভবনের সামনে, প্রশাসনিক ভবনের উত্তর-দক্ষিণ, পূবপাশে। ফুলেল সৌরভ ছড়িয়ে আছে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে। সবচেয়ে মন কাড়ে প্রশাসনিক ভবনের পূবপাশে লাগানো পুষ্পনন্দন।

ফুল লাগানোর পরিকল্পনার ছকে পাল্টে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্য। দিয়েছে নিজস্ব রুপ আর শীতের সেই অপরুপ দৃষ্টিনন্দন প্রকৃতি। যেনন স্রষ্টা নিজ হাত দিয়ে গড়েছেন এই দৃশ্য। এই মনমাতানো দৃশ্যে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

নানা প্রজাতির ফুলের মধ্যে রয়েছে নাম না জানা অনেক চমৎকার নাম। এদের মধ্যে ডোরেন্ডা, চায়না রঙন, সবুজ চায়না কড়িফুল, হলুদ চায়না কড়িফুল, লাইলি-মজনু, রঙন, জবা, ডালিয়া, সিলভিয়া, ডেন্থারসহ আরো অনেক ফুল। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে সুশোভিত হয়ে রয়েছে পুষ্পনাড়ী।

জানা গেছে, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ নিয়ে গত ডিসেম্বর মাসে ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালক ড. গাজী মাজহারুল ইসলামকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। রংপুরের সুপরিচিত নার্সারী এম এগ্রো নার্সারী’র সঙ্গে চুক্তি করা হয় বিভিন্ন মেয়াদী ভিন্ন বৃক্ষ লাগানোর জন্য। এর মধ্যে রয়েছে স্বল্প মেয়াদী, মধ্য মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী। চারটি স্তরের প্রথম স্তরে এবং দ্বিতীয় স্তরে লাগানো হয়েছে তিন/চার এবং ছয়মাস মেয়াদী স্বল্পবয়সী ফুলগাছ। শীতকালীন ফুল ছাড়াও বসন্তকালেও শোভা বর্ধন করবে ফুলগুলো। নার্সারীর কেয়ারটেকার মোকসেদুল ইসলাম জানান, চারটি স্তরের দুটি স্তরে ফুল লাগানো হয়েছে। স্বল্প, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী বৃক্ষগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান স্থানে লাগানো হবে। স্বল্পমেয়াদী ফুলগাছের মধ্যে পরিচর্যা করলে সর্বোচ্চ ৬ মাস টিকবে। এদের মধ্যে ডেন্থার ৩ মাস, ডালিয়া ৬ মাস এবং সিলভিয়া প্রায় ১ বছর বাঁচবে। তবে নিয়মিত পরিচর্যা না করলে ( যেমন: পানি দেওয়া, ওষুধ দেওয়া) এর আগেই গাছগুলো মরে যেতে পারে। এর মধ্যে বেশ কিছু গাছের আয়ু শেষ হওয়ায় রিপ্লেস করতে হবে।

তিনি বলেন,তৃতীয় স্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের দুইপাশে পাতাবাহার ( কাঁটা মেহেদী) লাগানো হবে। মধ্যমেয়াদী হিসেবে কড়িফুল, সিলভিয়া লাগানো হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের যেভাবে বলবেন, সেভাবেই লাগাবো।

১০-১৫ প্রজাতির প্রায় ২০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এসব ফুলের মধ্যে কিছু গাছের ফুল কয়েকবার আসবে,ঝরে যাবে আবার ধরবে।

সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষে গঠিত কমিটির প্রধান ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, এটা সিজনারি পরিকল্পনা। পরিকল্পনা রয়েছে সকল মেয়াদী গাছ লাগানো। সেই লক্ষেই কাজ চলছে। আগামী সপ্তাহেই গাছ লাগানো কার্যক্রম গঠিত কমিটি সমাপ্ত করবে বলে তিনি জানান।

তিনি আরো বলেন, এটা ডেইলি বেসিস( নৈমিত্তিক) কাজ। প্রতিদিনের বিল প্রতিদিন পনিশোধ করে দেওয়া হয়।

সারা বছর ফুল লাগানো হবে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আপাতত শীত মৌসুমের ফুল লাগানো হয়েছে। তবে সৌন্দর্য বর্ধনে দীর্ঘমেয়াদী গাছ যেমন: পাতাবাহার, কাঁটা মেহেদী লাগানো হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করলে সারা বছর দীর্ঘ মেয়াদী ফুল লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নিতে পারে।

তিনি সকলকে বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বর্ধনে ফুল গাছগুলো লাগানো। তাই, কেউ যেনো ফুলগুলো না ছিঁড়ে।

এম এগ্রো নার্সারীর মালিক মুঈদ ইবনে ফেরদৌস ( শান্ত) বলেন, গঠিত কমিটি আমাদের কাছে চারা ( ফুলগাছ) ও লেবার চেয়েছে, আমরা দিয়েছি। আশা করি, আগামী সপ্তাহে বৃক্ষ লাগানো কার্যক্রম শেষ হবে। গত ৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল গাছ লাগানোর কাজ নিয়েছিলাম। নিয়মিত পানি দেওয়া, গোবর সার দিয়ে যত্ন করলে ফুলগাছ দীর্ঘদিন টিকবে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করলে দীর্ঘমেয়াদী ফুল গাছও লাগাতে পারে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৪ জুন বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনার একটি ধাপ হিসেবে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ‘গার্ডেনিং’ করা অন্যতম।