ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

মুক্তিযোদ্ধা-ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে আজ বৃহস্পতিবার সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাঁর মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় তাঁর কফিন।

গত মঙ্গলবার দুপুরে তিনি রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন তাঁর কিডনিতে সমস্যা হচ্ছিল। এর আগে বাসায় পড়ে গিয়ে তাঁর পায়ে গোড়ালির একটি হাড় স্থানচ্যুত হয়। গত রোববার হাসপাতালে তাঁর পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা নাগাদ তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে দ্রুত হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। বেলা পৌনে একটার দিকে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

সেদিনই পিংক সিটির জামে মসজিদে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাঁর মরদেহ ল্যাব এইডের হিমাগারে রাখা হয়।

আজ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করা হয়। মরদেহ রাখা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসনের একজন সহকারী কমিশনারের নেতৃত্বে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এরপর নামে হাজারো মানুষের ঢল। স্পিকার, মন্ত্রী, সাংসদ, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, শিল্পী, সাহিত্যিক, বিভিন্ন সংগঠনসহ সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হন সদা হাস্যোজ্জ্বল প্রিয়ভাষিণী। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় তাঁর কফিন।

এ সময় তাঁর মেয়ে ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী পরিবারের পক্ষ থেকে মায়ের জন্য দোয়া চান। একই সঙ্গে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে ১৩ মার্চ বিকেল সাড়ে চারটায় ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নাগরিক শোক সভা হবে।

শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষ হওয়ার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। সেখানে শহীদজননী জাহানারা ইমামের কবরে পাশে তাঁকে শায়িত করা হবে।

১৯৪৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হন। স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেয়। এর আগে ২০১০ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পদক পান।

২০১৪ সালে একুশের বইমেলায় তাঁর আত্মজীবনী ‘নিন্দিত নন্দন’ প্রকাশিত হয়।