ফেসবুক-টুইটারে নির্বাচনী প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা আসছে

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (নির্বাচন-পূর্ব সময়ে) ডিজিটাল প্রচারণার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিধান যুক্ত করে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংশ্লিষ্ট কমিটি।

তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশ পর্যন্ত প্রচারণায় ইলেকট্রনিক মাধ্যম, ডিজটাল ডিসপ্লে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ভাইবারসহ অন্যান্য মাধ্যমে প্রচারণা চালান যাবে না। কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থী এ ধরনের প্রচারণা চালালে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ‘আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি’র এক সভায় এসব বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়।

সূত্র জানায়, ওই সভায় চারটি আইন ও বিধিমালা সংস্কারের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকি তিনটি হচ্ছে- গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২, জাতীয় সংসদ নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী (প্রার্থিতার পক্ষে সমর্থন যাচাই) বিধিমালা।

কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আইন ও সংস্কার কমিটির সুপারিশ করা চারটি আইন ও বিধিমালার সংশোধনের খসড়া কমিশন সভায় তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কমিশনের অনুমোদন পেলে তা আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে। এরপর নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তা পাস করতে সংসদে তোলা হবে।

জানা গেছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে ফলাফলের গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত নির্বাচন-পূর্ব সময় হিসেবে ধরা হয়। এ সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচারণামূলক সভার অনুমতি নেয়ার ক্ষেত্রে নতুন বিধান যুক্ত করা হচ্ছে।

আচরণ বিধিমালার এ নতুন বিধানে বলা হয়েছে- কোনো প্রার্থী বা দল সভা করার অনুমতি চেয়ে লিখিত আবেদন করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। উক্ত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত না দিলে সভার অনুমতি দেয়া হয়েছে মর্মে গণ্য করা হবে। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা পর অনুমোদন পেয়েছে বলে গণ্য করা হবে।

নির্বাচন সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনার ও জেলার ভেতরে ডিসি সভা করার অনুমতি দেন। সভা করার লিখিত আবেদন প্রাপ্তির সময়ের ক্রমনুসারে অনুমোদন দেয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। এ বিধানের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অনুমোদন দেয়ার বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, আরপিওতে ৩০টির বেশি সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ, নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের অপরাধের সাজা বাড়ানো, ইলেকট্রোরাল ইনকোয়ারিতে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাখা, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অবসরের তিন বছর পর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বর্তমান বিধান বহাল রাখা, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিধান সহজ করে এক হাজার ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, উপজেলা অখণ্ডতার উপর গুরুত্বারোপ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন সংশোধনের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে উপজেলা ভেঙ্গেও সীমানা নির্ধারণ করা যাবে। জেলার আসন সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ কমবেশি করার বিধান রাখা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী আইন ও বিধিমালা ডিসেম্বরের মধ্যে আইন সংস্কারের প্রাসঙ্গিত খসড়া তৈরি এবং ফেব্রুয়ারির মধ্যে আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। ওই রোডম্যাপ থেকে পিছিয়ে থাকলেও ফেব্রুয়ারির মধ্যে খসড়া চূড়ান্ত করল এ কমিটি।