ফোর-জি সিম বদলের নামে ভয়াবহ প্রতারণা!

মোবাইলে ফোর-জি চালু হবে। দ্রুত গতিতে চলবে ইন্টারনেট। এমন প্রত্যাশা নিয়ে নিজের সিমটি ফোর-জিতে রিপ্লেসমেন্ট করতে রাজধানীর ফার্মগেটের গ্রামীণফোন সেন্টারে এসেছিলেন তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী শারমিন ইসলাম সৃষ্টি।

কিন্তু এসেই বিপত্তিতে পড়েছেন তিনি। কারণ প্রতিটি সিম রিপ্লেস করতে গ্রামীণফোন তাদের গ্রাহকদের কাছ থেকে নিচ্ছে ১১০ টাকা করে।এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে সিম রিপ্লেস না করে গ্রামীণফোন সেন্টার থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে শারমিন ইসলাম বলেন, আমি সামান্য কিছু দিন আগে এই গ্রামীণ সিমটি কিনেছি ১৫০ টাকা দিয়ে। এখন আবার সিমটি রিপ্লেস করতে কেন ১১০ টাকা দিতে হবে? তারা তো ইচ্ছা করলেই সিমটি অটোমেটিক রিপ্লেস করে দিতে পারে। একে তো আসা যাওয়ার হয়রানি, তারপর আবার টাকা।

তিনি বলেন, এখন তো সবখানে সিম ফ্রিতে পাওয়া যায়। সেখানে সামান্য ফোর-জিতে রিপ্লেস করতে এতো টাকা কেন লাগবে? এটা তো সকল গ্রাহকের সাথে চরম প্রতারণা। যে যেভাবে পারছে সে সেভাবে আমাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। দেশে কোনো বিচার নেই!

শুধু শারমিন ইসলামই নয় মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে সিম রিপ্লেস না করেই চলে গেছেন।

গ্রামীণফোন সেন্টারে ঘুরে গ্রাহক ও কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামীণফোন প্রতিটি গ্রাহকের কাছে থেকে সিম ফোর-জিতে রিপ্লেসের নামে ১১০ টাকা নিচ্ছে। তবে, তাদের স্টার কাস্টমারদের জন্য এই সেবা ফ্রি।

এদিকে, বাংলালিংক ও রবির কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে গ্রাহক ও কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাংলালিংক ও রবি ফোর-জি সিম রিপ্লেসের নামে প্রতি গ্রাহকের কাছে থেকে নিচ্ছে ১০০ টাকা করে। কেন এতো টাকা নেওয়া হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাস্টমার কেয়ারের দায়িত্বরতরা কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামীণফোনের বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি। রবির গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ২০ লাখ, বাংলালিংকের ৩ কোটি ২০ লাখ এবং টেলিটকের ৪৪ লাখ।

ফোর-জি সিমের রিপ্লেসমেন্টে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করাকে অনৈতিক বলে আখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন।

এদিকে, ফোর-জি সিম রিপ্লেসমেন্টের নামে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

সোমবার রাতে ঢাকা ক্লাবে মোবাইল অপারেটরগুলোকে ফোর-জি’র লাইসেন্স হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মন্ত্রী বলেন, আজ আমি অভিযোগ পেয়েছি সামান্য সিম রিপ্লেসের নামে ১১০ টাকা চার্জ করছেন। এটা তো ঠিক না। আমি আমাদের দায়িত্বরতদের সাথে কথা বলেছি, তারা বলেছে এটি নেয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।

মন্ত্রী আরো বলেন, কোনো কারণেই থ্রি-জি থেকে ফোর-জিতে যাওয়ার জন্য জনগণকে ১১০ টাকা দিতে হবে কোনো ভাবেই কাম্য নয়। আমরা অপারেটরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো আপনারা এমন কিছু করেন না যাতে জনগণের কাছে মনে হয় এটা অযৌক্তিক। এমন কিছু করেন না যাতে বিটিআরসিকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।

এদিকে, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ফোর-জি চালুর ঘোষণার সাথে সাথে অপারেটররা সিম রিপ্লেসমেন্ট শুরু করে। প্রথমদিকে বিনা পয়সায় সিম রিপ্লেসমেন্ট করলেও গত ১৪ ফেব্রুয়ারি তরঙ্গ বরাদ্দের পর থেকে বাজারে সিম রিপ্লেসমেন্ট করতে গ্রামীণফোন ১১০ টাকা, বাংলালিংক ও রবি ১০০ টাকা করে গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করছে। কিন্তু একই সিম পূর্বেই ক্রয় করার সময় গ্রাহকরা একবার অর্থ প্রদান করেছে।

কিন্তু বর্তমান সময়ে সরকার যেখানে ডিজিটাল ও প্রযুক্তিবান্ধব দ্রুতগতির ফোর-জি সেবা জনগণের মাঝে দিতে চাচ্ছে সেখানে রিপ্লেসমেন্টের নামে নতুন করে নতুন সিমের দাম গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা ন্যায় সঙ্গত নয় বলে আমরা মনে করি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, গ্রাহক তো একবার টাকা দিয়ে সিম কিনেছে। আবার থ্রি-জি থেকে ফোর-জিতে যেতে টাকা দিতে হবে কেন? ফোর-জির শুরুতেই এটা ভয়াবহ একটা প্রতারণা।

তিনি বলেন, প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে যদি এভাবে গড়ে ১০০ করে টাকা নেয়া হয় তাহলে কয়েক হাজার কোটি টাকা কোনো কারণ ছাড়া হাতিয়ে নিতে পারবে অপারেটরগুলো। কিন্তু আমাদের দেশে এটা দেখার কেউ নেই।

যার যেমন ইচ্ছা সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে কর্তৃপক্ষকে দেখিয়ে দিলেও কোনো এক অদৃশ্য ক্ষমতার বলে প্রতারকদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয় না।

যদিও এখন সব জায়গায় সিম ফ্রি পাওয়া যায়। সেখানে ফোর-জি সিমের রিপ্লেসমেন্টে অতিরিক্ত অর্থ আদায় অনৈতিক বলেও মত দেন তিনি।

সরকারের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে সিম রিপ্লেসমেন্টের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে যাতে কোনো অর্থ আদায় করা না হয়।