ফ্রান্সের অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠার রহস্য কী?

বিশ্বকাপ মঞ্চে বেশ কিছু সময় অনুজ্জ্বল ছিল ১৯৯৮ এর বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স। দেশীয় কোচের নেতৃত্বে রাশিয়া বিশ্বকাপে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে দলটি। বেলজিয়ামকে হারিয়ে পৌঁছে গেছে ফাইনালে। ফ্রান্সের আক্রমণভাগ যথেষ্ট দম্ভ করার মত। তারপরও স্যামুয়েল উমতিতি ও রাফায়েল ভারানের নেতৃত্বে তাদের অসাধারণ রক্ষণভাগ বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে।

সেন্টার ব্যাক উমতিতির একমাত্র গোলে ভর করে মঙ্গলবার বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে বেলজিয়ামের গোল্ডেন জেনারেশনকে বিদায় করে দিয়েছে বিশ্বকাপের শিরোপা দৌড় থেকে। এখন তারা তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে অংশগ্রহণের অপেক্ষায় আছে।

নক-আউট পর্বে টানা তৃতীয় জয়ে ফ্রান্সের হয়ে ভূমিকা রেখেছেন একজন ডিফেন্ডার। অথচ ১৯ বছর বয়সী সেনসেশন কিলিয়ান এমবাপে এবং ২০১৬ ইউরো টুর্নামেন্টের গোল্ডেন বুট জয়ী আঁতোয়ান গ্রিজমানের অন্তর্ভুক্তিতে সমৃদ্ধ ফ্রান্সের আক্রমণভাগ।

রাইট ব্যাক বেঞ্জামিন পাভার্ডের দূরপাল্লার প্রচেষ্টা এবং লেফট ব্যাক লুকাস হার্নান্দেজের নিখাদ ক্রসের ভিত্তিতে শেষ ষোলর লড়াইয়ে আর্জেন্টিনার সঙ্গে ২-২ গোলে ম্যাচ ড্র করতে সক্ষম হয় ফ্রান্স। টুর্নামেন্টে ওই ম্যাচেই প্রথম দিদিয়ের দেশ্যমের দল পিছিয়ে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত এমবাপেকে আবর্তন করে দুর্দান্ত এক অভিযান ফ্রান্সকে ৪-৩ গোলের রোমঞ্চকর এক জয় এনে দিয়েছিল। ওই একটি ম্যাচেই ফ্রান্সের রক্ষণভাগকে কিছুটা নড়বড়ে মনে হয়েছিল।

এরপর লুইস সুয়ারেজের উরুগুয়ের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয় পাওয়া কোয়ার্টার ফাইনালে ভারানের হেডের গোল প্রথমে লীড এনে দেয় ফরাসিদের। ম্যাচে সুয়ারেজ আপ্রাণ চেষ্টা করেও ভাঙ্গতে পারেনি লেস ব্লুসদের জমাট রক্ষণবুহ্য।

সর্বশেষ গত রাতে সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত সেমিফাইনালে এডেন হ্যাজার্ড, কেভিন ডি ব্রুইনা ও রোমেলু লুকাকুর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে ফ্রান্সের রক্ষণভাগে। যার সুফল হিসেবে ষষ্ঠবারের মত বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে ফ্রান্স।

মঙ্গলবারের পারফর্মেন্সটি ফ্রান্সের রক্ষণভাগের সেরা পারফর্মেন্স কিনা প্রশ্ন করা হলে জবাবে দেশ্যম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই ম্যাচে রক্ষণভাগের পারফর্মেন্স ছিল অসাধারণ। আমাদেরকে বেশ দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করতে হয়েছে। কারণ বেলজিয়ামের কৌশলগত দারুণ দক্ষতা রয়েছে। তাদেরকে কোন সুযোগ দেয়া যাবে না, এমন একটি কৌশল নিয়ে আমরা সফল হয়েছি। কারণ ব্রাজিল দলের ন্যায় আমাদের প্রত্যেকে একত্রে উঠা-নামা করেছে।’

ফ্রান্সের রক্ষণকে খুব কমসংখ্যক বার পরাস্ত করা গেছে। অধিনায়ক হুগো লরিস অবশ্য উরুগুয়ে এবং বেলজিয়ামের বিপক্ষে উভয় ম্যাচেই বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আক্রমণ প্রতিহত করেছেন। দেশ্যমের সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্য সব মহলের প্রশংসা লাভ করতে পারেনি।

বেলজিয়ামের গোলকিপার থিবাউট কটুইস এই ফলাফলকে ‘ফুটবলের জন্য লজ্জাস্কর’ বলে মন্তব্য করেছেন। অবশ্য ইউরো ২০১৬ ফুটবলের ফাইনালের চেয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছানো অনেক বেশি কঠিন।

দুই বছর আগে নিজেদের মাটিতে পর্তুগালের কাছে পরাজিত হওয়া ফ্রান্স এবার ফলাফলের পরিবর্তন ঘটাতে চান। ভারনের অন্তর্ভুক্তিই এই ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। মাত্র ২৫ বছর বয়সে রিয়ালের হয়ে চতুর্থ চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জয়ী এই ফুটবলার দুই বছর আগের ওই ম্যাচে দলের হয়ে খেলতে পারেননি উরুর ইনজুরির কারণে।

রিয়ালের প্রতিপক্ষ ক্লাব বার্সেলোনার উমতিতির সঙ্গে তিনি জাতীয় দলে বেশ শক্তিশালী একটি পার্টনারশিপ গড়ে তুলেছেন। যার প্রতিফলন দেখা যায় মাঠের লড়াইয়ে। ভারানে বলেন, ‘২০১৬ টুর্নামেন্টের দলটিও চৌকস ছিল। তবে এখন দলটি আরো বেশি পরিপক্ব, বেড়েছে অভিজ্ঞতাও।’

দুই বছর আগে উমতিতি অবশ্য আন্তর্জাতিক অভিষেকের সুযোগ পেয়েছেন ভারানের ঘাটতি পূরণের জন্য। ফাইনালে আর কোন হতাশায় পড়তে চান না তিনি। উমতিতি বলেন, ‘আমি ভাগ্যবান কেউ নই। ইউরোর ফাইনালে আমরা জয় পাইনি। যে কারণে বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছানোটা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি আসন্ন ফাইনাল ম্যাচটি হবে আলাদা এবং আমরা ফ্রান্সে শিরোপা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারব।’