ফ্রান্সের প্রেমিক প্রেসিডেন্টদের গল্প

হাইস্কুলের ড্রামা শিক্ষিকা ছাত্রের হাত ধরে এখন ফ্রান্সের ফার্স্ট লেডি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ফ্রান্সের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মনে ধরে তারই শিক্ষিকা ব্রিজিত ত্রগনিয়ক্সকে। বয়সে ২৫ বছরের বড়। নির্বাচনের আগে অসম বয়সী দু’জন মানুষের প্রেম ও বিয়ের ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। ফরাসি প্রেসিডেন্টদের এমন জটিল প্রেমের সম্পর্ক নতুন কিছু নয়। দেশটির আরও অনেক প্রেসিডেন্ট এমন প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েই সুখে সংসার করেছেন।

ব্যতিক্রমী প্রেমে ম্যাক্রোঁ-ব্রিজিত: ব্লন্ড চুল ও নীল চোখের ম্যাক্রোঁকে কাছের মানুষ ‘মানু’ নামেই ডাকেন। স্কুলে পড়ার সময় বরাবরই ক্লাস থেকে দেরি করে বেরোতেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষকের সঙ্গে গল্প করা। ফরাসি সাহিত্য ও নাট্যকলার শিক্ষক ব্রিজিত প্যারিসের একটি বেসরকারি স্কুলে পড়াতেন। স্কুলের অনুষ্ঠানের জন্য ড্রামা রচনার কাজে মানু তার শিক্ষকের সঙ্গে কাজটি করেন। একপর্যায়ে ম্যাক্রোঁ তার চেয়ে বয়সে ২৫ বছরের বড় ব্রিজিতকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি তা নাকচ করেন। তবে তাতে দমে যাননি ম্যাক্রোঁ। প্রেম জিইয়ে রইল সবুজ পাতার মতো। আর এ প্রেমের টানে পরিণত বয়সে সেই শিক্ষিকাকেই বিয়ে করেন ম্যাক্রোঁ। বর্তমানে ৩৯ বছরের ম্যাক্রোঁ দেশের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং ৬৪ বছরের ব্রিজিত দেশের ফার্স্ট লেডি।

‘সব নারীর প্রেমিক’ ফ্রাঁসোয়া ওলান্দ : বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দের চার সন্তান সেজোলেন রয়াল নামে এক রাজনীতিবিদ ও সাবেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর গর্ভে জন্ম নেয়া। তবে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর তিনি প্রেসিডেন্ট ভবনে বান্ধবী ভ্যালেরিয়ে থ্রিয়েরউয়েলার সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। পরে তিনি ফরাসি মডেল জুলি গায়েটের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। প্যারিসে মোটরবাইকে করে ওই তরুণীর অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার সময় এক ট্যাবলয়েড পত্রিকার ক্যামেরায় ধরা পড়েন ওলান্দ। প্রেমের কোনো ঘটনায় একজন প্রেসিডেন্ট রাস্তায় মোটরবাইক দাবড়ে বেড়াচ্ছেন, ভাবা যায়! অথচ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে মনিকা লিউনস্কির বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক বিরাট কেলেঙ্কারির জন্ম দেয়। অথচ ওলান্দের ক্ষেত্রে কিছুই ঘটেনি।

গোপন প্রেমে ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁ : ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁর প্রেম ছিল অ্যান প্যাজোঁ নামে এক নারীর সঙ্গে। মিতেরাঁর কাছ থেকে তিনি ১ হাজার ২১৮টি প্রেমপত্র পান। তাদের সম্পর্ক নিয়ে ‘লেটারস টু অ্যানি : ১৯৬২-৯৫’ এবং ‘ডায়েরি ফর অ্যানি : ১৯৬৪-৭০’ নামে দুটি বইও প্রকাশ পায়। ১৯৬৩ সালে অ্যান-মিতেরাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তখন অ্যানের বয়স ছিল ২০ বছর। আর মিতেরাঁ ছিলেন ৪৭ বছর বয়সী সিনেটর। তিনি ছিলেন বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক। স্ত্রীর নাম দানিয়েলি। মিতেরাঁ তার এ প্রেমের সম্পর্ক গোপন রাখতেন। প্রেমিকা অ্যানের গর্ভে মাজারিন নামে এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। গত মাসে সিএনএন ফ্রান্সের মানুষের ব্যক্তিগত জীবন ও সম্পর্কের বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের মতামত নেয়। এতে দেখা যায়, ফ্রান্সের লোকজন কম বয়সী পুরুষ ও বেশি বয়সী নারীর প্রেমের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের বদনাম বা কেলেঙ্কারিকে মোটেও আমল দেয়নি।

নিকোলাস সারকোজির বহু প্রেম : প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি নির্বাচিত হওয়ার পর স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটান। পরে তিনি ২০০৮ সালে মডেল ও পপ তারকা কার্লা ব্রুনিকে বিয়ে করেন। ব্রুনি তার তৃতীয় স্ত্রী। এর আগে ১৯৯৬ সালে সিলিয়া আতিয়াস ছিলেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী। ২০০৭ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। প্রথম স্ত্রী ম্যারি ডমিনিক কুলিওলির সঙ্গে সারকোজির দাম্পত্য জীবন ছিল ১৯৮২-৯৬ সাল পর্যন্ত।