বখাটেদের উৎপাত : প্রয়োজন সামাজিক প্রতিরোধ

মেযেদের উত্যক্ত করা বর্তমান সময়ে নিয়মিত ফ্যাশনে পরিনত হয়ে গেছে! এসব খবর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে খবরের কাগজে। মেয়েদেরকে উত্যক্তকারী কিংবা হয়রানিকারী বখাটেদের অপকর্মকে আমরা ইভটিজিং বলে থাকি। আসলে এতে তাদের ছোট করে দেখা হয়। মূলত এই হয়রানি এক ধরনের সন্ত্রাস। এ সন্ত্রাস কোন ভাবেই ছোট করে দেখা ঠিক নয়। বাংলাদেশে জাতীয় মহিলা আইনজীবীদের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এদেশে ১০ থেকে ১৮ বয়সী মেয়েদের ৯০ শতাংশ কোন না কোন ভাবে যৌন হয়রানির শিকার। আর এই যন্ত্রণাত্নক হয়রানি অনেকে সহ্য করতে না পেরে আত্নহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।

এই বখাটদের যন্ত্রনা ও ভয়ে অনেক নিরিহ মেয়েরা এখন ঘরের বাইরে যেতেও সাহস পাচ্ছে না। অনেকে পড়া-লেখা বন্ধ করে দিয়েছে। বখাটদের ভয়ে বাধ্য হয়ে অভিভাবকরা অপরিণত বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বখাটদের অশালীন আচরণ সহ্য করতে না পেরে সিমি, তৃষা, মহিমা, ফাহিমা, সাবিনা, পূর্ণিমা, পিংকি, রূমী, চাঁদমনির মতো মেয়েদের মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে আরো নতুন নতুন নাম। কিন্তু দেশের সরকার কি এসব প্রতিরোধে আন্তরীক হচ্ছেন? অপরাধীদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসন বা আইন-শৃংখলা রক্ষকারী কতৃপক্ষের তেমন কঠোরতা তো লক্ষ্য করছে না দেশের মানুষ। মাঝে মধ্যে উত্যক্তকারীদের পুলিশ গ্রেফতার করতে দেখা যায়। প্রশ্ন হলো, এদের গ্রেফতারই কি প্রকৃত সমাধাণ?

মেয়েদের উত্যক্ত করা, তাদের সাথে জবরদস্তিমূলক আচরণ করা, এমন কি সহিংসতায় আশ্রয় পশ্রয় দেয়ার ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে পড়া-মহল্লার পরিচিত প্রতিবেশীদের সামনেই। কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। বখাটে সন্ত্রসীদের অনেকেই পাচ্ছে রাজনৈতিক আশ্রয়। ফলে ক্রমেই বেপরোয়া হযে উঠছে বখাটে সন্ত্রাসীরা।

বিশ্বায়নের এই যুগে আমাদের নারী সমাজকে বখাটদের কবল থেকে রক্ষা করতে হলে শুধু পুলিশের কাছে আবেদন নিবেদন করলেই চলবে না, গড়ে তুলতে হবে প্রতিরোধের দেয়াল। সম্মিলিত ভাবে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের সবাইকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে বা ভেতরে, রাস্তাঘাটে যারা মেয়েদের উত্যক্ত করে তাদের প্রতিহত করতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ ও আইনের মাধ্যমে। আমাদের মনে রাখতে হবে বখাটে সন্ত্রসীদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এদের প্রতিরোধ করাও কঠিন নয়।

আবদুল হাই ইদ্রিছী : সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার, কবি। সম্পাদক- মাসিক শব্দচর