বগুড়ায় পাসপোর্ট কর্মকর্তার গোপনে একাধিক স্ত্রী, অতঃপর…

বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সাবেক সহকারী পরিচালক (এডি) বর্তমানে একই পদে শেরপুর জেলায় কর্মরত খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

রিনা পারভীন নামে এক গৃহবধূ রোববার দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক স্ত্রী থাকার কথা গোপন রেখে প্রতারণার মাধ্যমে তাকে বিয়ে, গর্ভপাত, হত্যার হুমকি ও নির্যাতনের অভিযোগে আদালতেও মামলা হয়েছে।

অনেক চেষ্টার পর ফোনে পাওয়া গেলেও এডি খোরশেদ আলম ব্যস্ততা দেখিয়ে এ প্রসঙ্গে পরে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।

বর্তমানে বগুড়া শহরের নিশিন্দারা উপশহরে ভাড়া বাসায় অবস্থানকারী রিনা পারভীন সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে বলেন, তিনি স্বামী পরিত্যাক্তা অসহায় নারী। ছেলে বিদেশে ও মেয়ে স্থানীয় কলেজে লেখাপড়া করে। ছেলের পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজে গত ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যান। সেখানে যাতায়াতের এক পর্যায়ে তৎকালীন এডি খোরশেদ আলম তাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেন।

দু’বার হজব্রত পালন ও নিজের স্ত্রী-সন্তান নেই দাবি করেন। তার (রিনা) ছেলেমেয়েকে নিজের সন্তানের মতো আগলে রাখার নিশ্চয়তা দেন। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ও তাদের অনুমতি নিয়েই ওই বছরের ২ জানুয়ারি বগুড়া সদরের তেলিহারায় কাজী শফিকুল ইসলামের মাধ্যমে কাবিননামা ও রেজিস্ট্রি করে এডি খোরশেদ আলমকে বিয়ে করেন।

শহরে সূত্রাপুর এলাকায় লাভলুর ভাড়া বাসায় সংসার করাকালে তিনি অন্তঃস্বত্ত্বা হলে গর্ভপাত ঘটানো হয়। খোরশেদ আলম তাকে না জানিয়ে মাগুরা জেলায় বদলি হন। ১৫ দিন পরপর বগুড়ায় আসতে থাকেন। হঠাৎ করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

মানবেতর জীবন যাপন করাকালে তিনি (রিনা) স্বামী খোরশেদ আলমের খোঁজে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি মাগুরা পাসপোর্ট অফিসে যান। তার সঙ্গে দেখা হলেই যৌতুক হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। অস্বীকৃতি জানালে বেধড়ক মারপিট করে পাসপোর্ট অফিস থেকে বের করে দেয়া হয়।

বিষয়টি মাগুরার জেলা প্রশাসক আতিকুর রহমানকে অবহিত করা হয়। এ ব্যাপারে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে লিখিত অভিযোগ করলে খোরশেদ আলম ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যার হুমকি দেন।

শোনা যায়, অধিদফতর থেকে অভিযোগের কপি গায়েব করা হয়েছে। হুমকির ব্যাপারে গত ৭ মার্চ বগুড়া সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ৬ এপ্রিল খোরশেদ বগুড়ার বাসায় এসে আবারও যৌতুকের টাকা দাবি করেন।

এমন করার কারণ জানতে চাইলে তিনি (এডি) তাকে হত্যার চেষ্টা করেন। পরিবারের লোকজন তাকে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।

রিনা পারভীন আরও জানান, খোরশেদের তালবাহানা ও যৌতুক দাবির কারণ খুঁজতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, এডি আগে আরও দুটি বিয়ে করেন। ওইপক্ষে সন্তান রয়েছে। ভুয়া ঠিকানা ও পরিচয়ে তাকে বিয়ে করেছেন। বর্তমানে শেরপুর জেলা পাসপোর্ট অফিসে এডি হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি ঢাকার মধ্য পেয়ারাবাগ, শান্তিনগর এলাকার মৃত মফিজুল হকের ছেলে।

উপায় না পেয়ে গত ২৩ মে বগুড়ার প্রথম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এডি খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে পিবিআই বগুড়া কার্যালয়কে নির্দেশ দেন। এসআই মনিরুজ্জামান তদন্তের নামে তাকে উল্টো হয়রানি ও রিপোর্ট দিতে টালবাহানা করছেন। নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ রিনা পারভীন প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতারক এডি খোরশেদ আলমের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই বগুড়ার এসআই মনিরুজ্জামান জানান, জুনের প্রথম সপ্তাহে আদালতের নির্দেশ পেয়েছেন।

তিনি বলেন, ওই গৃহবধূকে হয়রানি করা হচ্ছে এমন কোনো প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবেন না। ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, তদন্তে পাসপোর্ট অফিসের এডির বিরুদ্ধে আনা ওই গৃহবধূর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে আদালতে রিপোর্ট দাখিল করবেন।