বন্দুকযুদ্ধের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দেখছে বিএনপি

জনগণ এখন সব সময় আতঙ্কের শিহরণ অনুভব করছে উল্লেখ করে বিএনিপর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘গুম খুনের কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী সেই সব চিহ্নিত কর্মকর্তাদের দিয়েই বেআইনিভাবে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করাই সরকারের উদ্দেশ্য। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচনের সুখবর আওয়ামী ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে নেই। মানুষকে ভয় পাইয়ে দেয়ার নতুন প্রকল্প নিয়েছে। এটি তাদের সুদূরপ্রসারী নীলনকশা।’

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী আহমেদ।

তিনি বলেন, বিচারবর্হিভূত হত্যার নামে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানুষ হত্যা প্রাত্যহিক কৃত্যে পরিণত হয়েছে। যা মানবধিকারের পরিপন্থী ও আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। মানবধিকারের এ রক্তাক্ত মূর্তি দেশবাসীর মধ্যে ভয়ের শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। এ অনাচারের সরকারি প্রশাসনের মানবতার অধঃপতন আরও নিচের দিকে নামছে।

রিজভী বলেন, দুদিন আগেও আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। বেআইনিভাবে মানুষ হত্যার অধিকার কারও নেই। গুম, খুন ও বিচারবর্হিভূত হত্যার মাধ্যমে অপরাধ দমন করা সম্ভব নয়। বেআইনি মৃত্যূদণ্ড অপরাধ দমনের মানদণ্ড হতে পারে না। গতরাতেও চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী, নেত্রকোনা, দিনাজপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১০ জনকে ক্রসফায়ার দেয়া হয়েছে। আমরা আশঙ্কা করেছিলাম এর পিছনে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। সেটি এখন ফুটে ওঠতে শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, আসলে মাদক নির্মূলের নামে বিচারবর্হিভূত হত্যার যে হিড়িক চলছে এর গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হচ্ছে মাদকবিরোধীদের নির্মূল করতে গিয়ে টার্গেট করে বিরোধীদলের তরুণ নেতা-কর্মীদের মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করে মেরে ফেলা। গতরাতে নেত্রকোনায় কথিত ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে ছাত্রদলের সদস্য আমজাদ হোসেনকে।

রিজভী বলেন, এ রমজান মাসে কর্দমাক্ত খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যে জনজীবনে নাভিশ্বাস এবং আইনশৃঙ্খলার করুণ পরিণতিতে দেশের বেহাল অবস্থা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই দৃষ্টি ফেরানোর কৌশলে লিপ্ত রয়েছে কি না সে প্রশ্নই জনমনে উকি দিয়েছে।

তিনি বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে নই আমরা। অপরাধীদের গ্রেফতার করুন, আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করুন, আইনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করুন। দেশের প্রচলিত আইনেই তো মাদক প্রতিরোধ সম্ভব। কিন্তু তা না করে সারাদেশে বন্দুকের অপব্যবহারে মানুষ হত্যা কোনো সভ্য সমাজের কাম্য হতে পারে না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, মাদকবিরোধী অভিযানের নামে কাদেরকে ধরা হচ্ছে, মাদকের গডফাদারদের নয়, চুনোপুঁটিদের। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত সাড়ে ৯ বছরে মাদকে ছেয়ে গেছে দেশ। গোটা যুব সমাজকে ধ্বংস করতে পরিকল্পিতভাবে মাদকের বিস্তার ঘটানো হয়েছে। এর পেছনে দায়ী ব্যক্তিরা হলেন সরকার দলীয় এমপি বদির মতো রাঘব-বোয়ালরা। যারা মাদক ব্যবসার মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা আবার তাদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করতে দেখা গেছে।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমে তো ধারাবাহিকভাবে জেলা ওয়ারি রাঘব বোয়ালদের নাম প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি পুলিশের কিছু উচ্চ পর্যায়ের লোকেরাও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, সেগুলো গণমাধ্যমে এসেছে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে নানা চ্যানেলে মাদক এসে ঢুকছে বাংলাদেশে। এ চ্যানেল গুলোর উৎস মুখ বন্ধ করতে পারেনি কেন সরকার? মাদকের আসল গডফাদারদের ধরছেন না কেন? সেখানেই আপনাদের উদ্দেশ্য পরিস্কার হয়ে যায়।

ক্রসফায়ারের নামে বেআইনি হত্যা বন্ধের জোর দাবি জানিয়ে সকল বিচার বর্হিভূত হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন বিএনিপর এই নয়াপল্টনের মুখপাত্র। একই সঙ্গে দেশি-বিদেশি সকল মানবধিকার সংগঠন, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজকে গুম, খুন ও বেআইনি বিচারবর্হিভূত হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, আব্দুস সালাম আজাদ, সহ দফতর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।