বন্যায় ২৩ জেলার তিন হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি

দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ২৩ জেলায় বন্যায় প্রায় তিন হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যার কারণে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

জানা গেছে, বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেছে।

এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনটি আংশিক, কোনটি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আসবাবপত্র, বই-খাতাসহ স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে শিশুদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে।

বিশেষ করে কিছু জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল-মাদ্রাসায় অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার্থীরা। স্কুল বন্ধ থাকায় এসব পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আগামী ১৯ নভেম্বর পিএসসি সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়ে ২৬ নভেম্বর শেষ হওয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, পানিবন্দি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পরীক্ষা নেয়া যায়নি। আগস্টে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা নেয়ার কথা। বন্যা পরিস্থিতি চলমান থাকায় সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে এই পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

তথ্য মতে, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় প্রাথমিক পর্যায়ের প্রায় ১ হাজার ৩৫৯টি প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রামে ৬৮৪টি, লালমনিরহাটে ২০৩টি, গাইবান্ধায় ১৭৮টি, রংপুরের তিন উপজেলায় ১৫৬টি, দিনাজপুরে ১৩২টি ও নীলফামারীতে ১০টি স্কুল পানিবন্দি রয়েছে।বিভিন্ন জেলায় এ বিভাগের শতাধিক স্কুলের কোনটির মাঠ, দেয়াল বা কক্ষের মেঝে নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এর আগে বন্যায় সিরাজগঞ্জ জেলার ২০০টি ও জামালপুরে ১৬১টি স্কুল পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়া মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, বান্দরবান এবং রাঙ্গামাটিতেও কিছু প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক আব্দুর রউফ বলেন, প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পুরোপুরি পাওয়া যায়নি। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি আরও জানান, পানি নেমে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হবে। সেপ্টেম্বরে এ বাবদ অর্থ বরাদ্দ ছাড় দেয়া হবে। তারপর নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। বন্যার কারণে সমাপনী পরীক্ষা পিছিয়ে যেতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

অন্যদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) স্থাপিত পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের হিসাবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৩ জেলায় ১ হাজার ২২৮টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।তার মধ্যে উত্তরাঞ্চলে ১ হাজার বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়া জামালপুরে ১৫৬টি বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) বিদ্যালয় শাখার পরিচালক এলিয়াস হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা পানিবন্দি হওয়ায় প্রতিদিন ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের তালিকা আসছে। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে তালিকার কাজ চলছে। পানি নেমে গেলে বিদ্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। জরুরি অবস্থা হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রাথমিক সংস্কার করা হবে বলে জানান তিনি।