বর্জনের পরের দিনই নির্বাচনী প্রস্তুতি বৈঠকে মাহবুব তালুকদার!

নিজে একজন কমিশনার হয়েও অন্য কমিশনারা তার অধিকার খর্ব করছে- অভিযোগ করে সোমবার কমিশন বৈঠক ছেড়ে চলে যাওয়ার একদিন পরই আরেকটি বৈঠকে যোগ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। এদিন তিনি সিইসিসহ অন্যান্য কমিশনারদের সঙ্গে এক সারিতে বসেন। তবে তার মুখ ছিল ‘ভার’।

মঙ্গবলার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি উপলক্ষে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে অন্যান্যদের সঙ্গে তিনিও ছিলেন। অনুষ্ঠানে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা রয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাসহ অন্যান্য কমিশনাররা এদিন তাদের নানান দিকনির্দেশনা দেন।

এর আগে সোমবার কমিশনের ৩৬তম সভা শুরুর পর ১০ মিনিটের মাথায় মাহবুব তালুকদার বৈঠক ছেড়ে চলে যান। কারণ বৈঠকে তিনি ৫ দফা দাবিতে বক্তব্য দিতে চাইলে তাকে বক্তব্য দিতে দেয়া হয়নি বলে পরে তিনি প্রেস বিফ্রিং জানান।

সেদিন মাহবুব তালুকদার সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলেও অন্যান্যদের নিয়ে বৈঠক চালিয়ে যান সিইসি কে এম নূরুল হুদা। এ সময় কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বৈঠক উপস্থিত ছিলেন।

পরে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি চলে গেলেও সভায় কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। সারাদিন সভা চলেছে।’

সকালে বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বিকেলে প্রেস বিফ্রিংয়ে তিনি জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ৫ দফা প্রস্তাব দিতে চেয়েছিলেন মাহবুব তালুকদার। কিন্তু সেই সুযোগ না পাওয়ায় ‘নোট অব ডিসেন্টে (ভিন্ন মত) দিয়ে তিনি বেরিয়ে যান।

তার দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনী দায়িত্বে সেনাবাহিনীর কার্যপরিধি নির্ধারণ, সবার জন্য সমান সুযোগ রেখে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন, ভোটে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সরকারের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরতে চেয়েছিলেন।

তবে লিখিতভাবে এই দফাগুলো ৮ অক্টোবর ইসিকে জানিয়েছিলেন তিনি। সোমবার এ বিষয়ে আবারো বক্তব্য দিতে চেয়েছিলেন তিনি।

নোট অব ডিসেন্টে তিনি লিখেছেন, নির্বাচন কমিশন কোনোভাবেই আমার অধিকার খর্ব করতে পারে না, বাকস্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা আমার সংবিধানপ্রদত্ত মৌলিক অধিকার। এমতাবস্থায় অনন্যোপায় হয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট প্রদান করছি এবং প্রতিবাদ স্বরূপ কমিশন সভা বর্জন করছি। কমিশন সভায় তাকে বক্তব্য উপস্থাপন করতে না দেয়ার বিষয়ে কমিশনারদের ‘অভিন্ন অবস্থান’ তাকে ‘বিস্মিত ও মর্মাহত’ করেছে।

ওই পাঁচ দফা প্রস্তাব কমিশন সভার কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করারও অনুরোধ করেন এ নির্বাচন কমিশনার।

এর আগে গত ৩০ আগস্ট কমিশনের ৩৫তম সভায় ইভিএমন কেনার বিরোধিতা করে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জন করেছিলেন মাহবুব তালুকদার। সেই সময় এ খবর প্রকাশ পেলে তোলপাড় শুরু হয়। এরপর তিনি সংবাদ সম্মেলন করে জানান কেন সভা বর্জন করেছেন।