বসে নেই বিএনপি, গোপনে তিনশ’ আসনে প্রার্থীর তালিকা

সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরে হলে তার তিন মাস আগে তফসিল ঘোষণার বাধ্যবাধকতা আছে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির হাতে খুব বেশি সময় নেই। আর দলের চেয়ারপারসন নির্বাচনের আগে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন- এ দুই ইস্যুতে আন্দোলনে যাওয়ার বিকল্প দেখছে না দলটি। তাই মাঠে নামার আগেই তিনশ’ আসনে একক প্রার্থীর নামের তালিকা হাতে রাখা হবে। যাতে আন্দোলনে সফল হলে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে সময়ক্ষেপণ না হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ তালিকা থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারে। দলের নীতিনির্ধারণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তিনশ’ আসনে একক প্রার্থীর তালিকা করছে বিএনপি। দুটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ, দশম সংসদ নির্বাচনের আগে চূড়ান্ত করা প্রার্থীর তালিকা ও তৃণমূল সফর শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের দেয়া তালিকা- এ চার রিপোর্টের ভিত্তিতে একক প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

এ তালিকায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের স্ত্রী ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সম্ভাব্য কোন আসন থেকে প্রার্থী হবে তা এখনই নির্দিষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। একক প্রার্থীর তালিকা শেষে জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা হবে।

সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য দুটি আলাদা বেসরকারি সংস্থাকে জরিপ চালানোর দায়িত্ব দেয় বিএনপি। সংস্থা দুটি চার মাস ধরে দেশব্যাপী জরিপ চালায়। জরিপ রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রতি আসনে তিনজন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা করা হয়। আলাদা দুটি জরিপের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা ও দশম সংসদ নির্বাচনের আগে করা তালিকা এবং তৃণমূল সফর শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের দেয়া সুপারিশ- এই চার রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে একক প্রার্থীর তালিকা করা হচ্ছে।

একক প্রার্থী বাছাইয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় গুলশানে গত সপ্তাহে দু’দিন বৈঠকও করেছেন। অত্যন্ত গোপনে এ তালিকার কাজ করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এমনকি এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা না বলারও নিদের্শনা রয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার মতো প্রস্তুতি বিএনপির সব সময়ই আছে। প্রতিটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিএনপির একাধিক যোগ্য ও ত্যাগী নেতা রয়েছেন। তিনশ’ আসনে প্রার্থী ঠিক করার ক্ষেত্রে বিএনপির কোনো সমস্যা নেই।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিই হচ্ছে প্রথম। এছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনেরও দাবি আমাদের। এসব আগে সমাধান করতে হবে। সরকারকে সংলাপে বসতে হবে।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি ও মার্চে দুটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে আলাদাভাবে জরিপ চালায় বিএনপি। তারা আড়াইশ’ আসনে জনপ্রিয় ও ক্লিন ইমেজের তিনজন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম তালিকাভুক্ত করে। বাকি ৫০টি আসনে একক প্রার্থীর নাম তালিকাভুক্ত করে বলা হয়, এসব আসনেও একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছে। তবে একক প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তারা সবচেয়ে জনপ্রিয় ও একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য। মামলার কারণে যদি এসব নেতার প্রার্থিতার ক্ষেত্রে সমস্যা হয় তাহলে স্ত্রী-সন্তানদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিতে পরামর্শ দেয়া হয় জরিপে।

দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উচ্চ আদালতের আদেশে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বলে আশা করছেন বিএনপি নেতারা। খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারলে ফেনী-১ ও বগুড়ার একটি আসনসহ মোট ৫টি আসনে অন্য কোনো প্রার্থী রাখবে না বিএনপি। এছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান সিলেটে এবং প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান মাগুরা-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। তাই এ দুই আসনেও অন্য প্রার্থী না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেভাবে ছক করে এগোচ্ছে, বিএনপিও বসে নেই। বিএনপি এখন বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি। তারপর থাকবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি। সরকার খালেদা জিয়াকে সহসাই মুক্তি দেবে না এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিও তারা মানবে না- এটা দলের সিনিয়র নেতারা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেন। এজন্য বিএনপির সামনে আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ নেই।

তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরে হলে তার তিন মাস আগে তফসিল ঘোষণার বাধ্যবাধকতা আছে। বিএনপির হাতে যে বেশি সময় নেই তা আমরা অনুধাবন করছি। তাই আন্দোলনে যাওয়ার আগে তিনশ’ আসনে একক প্রার্থীর নামের তালিকা হাতে রাখা হবে। যাতে আন্দোলনে সফল হলে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে সময়ক্ষেপণ না হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ তালিকা থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারে সেজন্যই এ প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই একক প্রার্থীর তালিকা তৈরির কাজ শেষ হবে। এছাড়া তালিকাভুক্ত নেতাদের আন্দোলনের সময়ও কাজে লাগানো হবে। দাবি আদায়ের আন্দোলনে সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের লোকবল মাঠে নামানোর নির্দেশ দেয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে আন্দোলন জোরদার হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।