বস্তায় ঢুকিয়ে শিশুকে অমানুষিক নির্যাতন

ঝালকাঠি জেলায় চুরির অপবাদে এক শিশুকে বস্তায় ঢুকিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে গ্রামের সালিশকারীদের বিরুদ্ধে। সাগর হাওলাদার (১৩) নামের ওই শিশু এখন জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

সাগর সদর উপজেলার কীর্তিপাশা ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামের মৃত সুলতান হওলাদারের ছেলে। সে স্থানীয় আলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। গত ১৪ মে (রোববার) সন্ধ্যায় এ ঘটনাটি ঘটে।

এ ঘটনায় শুক্রবার (১৯ মে) পুলিশ আলিপুর গ্রামের সেলিম কারিগরের ছেলে হৃদয় কারিগর (১৯) ও মোনাজউদ্দিনের ছেলে জামাল হাওলাদারকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে।

ঝালকাঠি থানার পরিদর্শক তাজুল ইসলাম জানান, গত রোববার আলিপুর গ্রামের জামে মসজিদের ইমাম মোস্তফা কামালের দুই হাজার টাকা চুরি হয়। ওই দুপুরে ইমামের বাড়ির কাছের পুকুরে গোসল করছিল শিশু সাগর। সন্ধ্যায় এলাকার ১০/১৫ জন সাগরকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। বাড়ির কাছেই একটি খালের পাড়ে নিয়ে শিশুটিকে তারা লাঠি দিয়ে পেটায় বলে পরিবারের অভিযোগ।

শিশুটির বড় বোন রাবেয়া আক্তার সুমি বলেন, নির্যাতনকারীদের মধ্যে একজন তাকে উত্ত্যক্ত করত। তিনি প্রত্যখ্যান করায় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে ১০/১৫ জন মিলে তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়ে নির্যাতন করেছে।

হাসপাতালের বিছনায় শুয়ে শিশু সাগর বলেন, আমাকে বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে ওরা সারা শরীরে লাঠি দিয়ে মেরেছে। এরপর আর আমার মনে নাই।

সাগরের মা রাশিদা বেগম বলেন, অজ্ঞান অবস্থায় আমার ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। যারা আমার এইটুক ছেলেকে অমানুষের মতো নির্যাতন করেছে আমি তাদের বিচার চাই।

সাগরের বড় ভাই হানিফ হাওলাদার বলেন, ‘থানা পুলিশের কাছে আমরা যাইনি। আপনারা (সাংবাদিক) নিউজ করতে আসার পর পুলিশ আমাগো ডেকে মামলা করায়, দুইজন গ্রেপ্তার হয়। ওরা (আসামি) এখন আমাদের বাড়িছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে।’

ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনা শোনার পরই শুক্রবার সকালে অভিযান চালিয়ে ওই গ্রামের হৃদয় কারিগর ও জামাল হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শিশুটির বড় ভাই ইব্রাহিম হাওলাদার নয় জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে, বলেন তিনি।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার মেহেদী হাসান বলেন, শিশুটির ডান পায়ের হাড় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। এছাড়া হাতের কব্জি ও বাহুতে আঘাতের চিহ্ন আছে। তবে শিশুটি এখন শংকামুক্ত। তাকে সব রকম চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।