বাংলাদেশের গমে ‘হুইট ব্লাস্ট’ ছত্রাক কিভাবে ছড়ালো?

বাংলাদেশে গমের ক্ষেতে হুইট ব্লাস্ট নামের ছত্রাকের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর ভারতের কৃষি বিভাগ বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় আগামী দু’বছর গম চাষ বন্ধ করে দিয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশের ভেতরের এলাকায় গমে এই সংক্রমণ কিভাবে হয়েছিল?

বাংলাদেশের গম গবেষণা ইনস্টিউটের পরিচালক নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা বিবিসি বাংলাকে বলেন, ২০১৫-১৬ সালে দক্ষিণাঞ্চলের সাতটি জেলায় প্রথম গমের ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়।

যশোর-মেহেরপুর থেকে শুরু করে বরিশাল-ভোলা পর্যন্ত এ রোগ ছড়ায়।
এটা ঠেকানোর জন্য এ্যাকশস প্ল্যান নেয়া হয় এবং সাময়িকভাবে গম চাষ নিরুৎসাহিত করা হয়।

এটা কিভাবে বাংলাদেশে এলো? এ প্রশ্নের জবাবে মি. দেববর্মা বলেন, বাংলাদেশে অনেক দিন ধরেই ধানে এ সংক্রমণ দেখা গেছে। ফলে প্রথমে মনে করা হয়েছিল যে ধান থেকেই হয়তো এটা গমে ছড়িয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা যায় যে দুটি দু ধরণের ছত্রাক।

কি ভাবে এলো তা আমরা ঠিক জানি না। এর ডিএনএ সিকোয়েন্সিং করে আমরা ল্যাটিন আমেরিকার একটা ছত্রাকের সাথে মিল আছে বলে দেখেছি।

তবে বাংলাদেশ দক্ষিণ আমেরিকা থেকে যে গম আমদানি করেছে তা থেকেই এই ছত্রাক ছড়িয়েছে বলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যে কথা বলছে, এ ব্যাপারে মি দেববর্মা বলেন – তারা এ ব্যাপারে কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পান নি।

তিনি বলেন ব্রাজিল থেকে একবারই কিছু গম আনা হয়েছিল এবং তা নিম্নমানের বলে কিছুটা ফেরত পাঠানোও হয়েছিল।

তবে তা খাবার গম, বীজ নয়। তবে এ নিয়ে তারা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রথম বছর ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে এই ব্লাস্ট সংক্রমণ হয়। কোন কোন ক্ষেতে ৯০ শতাংশ গমের ক্ষতি হয়েছে, তবে গড়ে ক্ষতি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ।

এর পরের বছরও এই রোগ ঠেকানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়, এবং ক্ষতি ৫ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়।

বাংলাদেশের অন্য জেলায় এই ছত্রাক ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই, কারণ এ নিয়ে কৃষকদের সচেতন করা হয়েছে, বলেন মি. দেববর্মা।

তবে ভারতের কৃষি বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে এই সংক্রমণ ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এ কারণেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকায় চাষ করা গম ইতিমধ্যেই জ্বালিয়ে নষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
তার জন্য কৃষকদের চার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণও দেয়া হয়েছে বলে তারা জানাচ্ছেন।

– বিবিসি বাংলা