বাংলাদেশের বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতায় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার দেশটি জানিয়েছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতায় উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা ছিল। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের বার্ষিক কংগ্রেশন্যাল-ম্যান্ডেটেড হিউম্যান রাইটস রিপোর্টে এই উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বেগ জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ সংবিধানে বাকস্বাধীনতার অধিকার দেওয়া হয়েছে কিন্তু সরকার অনেক সময় এই অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ব্যর্থ হয়। ওই সময়ে বাকস্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা ছিল উল্লেখযোগ্য। অনেক সাংবাদিক হয়রানি ও রোষানলের ভয়ে সরকারের সমালোচনার ক্ষেত্রে স্বআরোপিত সেন্সরশিপ আরোপ করছেন।

সংবিধানের সমালোচনাকে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে সংবিধানে গণ্য করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অপরাধের শাস্তি তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

২০১৬ সালে অনেক বড় মাপের নেতা ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাংবাদিক কনক সারওয়ার। সরকার মান্না ও সারওয়ারের বিরুদ্ধে মামলা চালায়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, অনেক মুক্ত সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রভাবে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করছে। বেসরকারি কোম্পানিগুলোকেও বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করতে এসব সংস্থা চাপ দিচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম ভিন্ন মত ধারণ করে। তবে রাজনৈতিক পক্ষপাত ও স্বআরোপিত সেন্সরশিপ এখনও একটি সমস্যা। বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে সরকার বিজ্ঞাপনকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংস আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। দৃশ্যত তা আন্তর্জাতিক সহিংস চরমপন্থা দ্বারা অনুপ্রাণিত। এছাড়া অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ১১ নভেম্বরের একটি সংবাদের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ওই খবরে বলা হয়েছে, ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে দেওয়া ফেসবুক পোস্টের গুজবে রংপুরে স্থানীয় মুসলমানরা ৩০ হিন্দু বাড়ি ভাঙচুর ও জ্বালিয়ে দেয়।

এনজিওদের মতে, বাংলাদেশে বর্ণ ও ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাগুলো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, অনেক দলিতের (নিম্ন বর্ণের হিন্দু) ভূমি, পর্যাপ্ত আবাসন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুবিধা বঞ্চিত।

প্রতিবেদনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মানবাধিকার ইস্যু ছিল সরকারি নিরাপত্তাবাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, বেআইনি আটক ও গুম এবং নাগরিক স্বাধীনতায় বিধিনিষেধ।

জবাবদিহিতার ঘাটতির কারণে মত প্রকাশ, সংবামাধ্যম ও এনজিও কর্মকাণ্ডে বাধা, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের স্বাধীনতায় বাধা, দুর্নীতি, লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ, উপজাতি, যৌনাচার ও লিঙ্গ পরিচয়ভিত্তিক বৈষম্য বিরাজ করছিল। মানবপাচার গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা রয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের অধিকারে বাধা এবং শিশুশ্রম রয়েছে মারাত্মকভাবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্যাতনের ঘটনায় নিরাপত্তাবাহিনী দায়মুক্তি পাচ্ছে বলে খবরে জানা গেছে। নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে হত্যা ও নিপীড়নের ঘটনায় সরকার তদন্ত ও বিচারের পদক্ষেপ নিয়েছে খুব কম। পুলিশ ও নিরাপত্তা সেবার প্রতি জনগণের অবিশ্বাসের কারণে সরকারি বাহিনীর কাছে সহযোগিতা চাওয়া বা অপরাধের ঘটনার খবর জানানোর প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে।