বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও কাশ্মীরের স্বাধীনতা নিয়ে যা বললেন অরুন্ধতী

কাশ্মীর সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মুখ খুলেছেন বিশ্বখ্যাত লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট অরুন্ধতী রায়। তিনি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ঐতিহাসিক ভূমিকার প্রসঙ্গও সামনে আনেন।

গত শুক্রবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার আপফ্রন্ট অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কথা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি ১৯৭১ সালে পাকহানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতন ও গণহত্যার বিষয়টি তুলে ধরেন।

পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় ভারতের অবস্থান তুলে ধরে অরুন্ধতী প্রশ্ন রাখেন- গণহত্যার পাটাতনে দাঁড়িয়ে ভারতবাসী যদি পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে নিজ দেশের হস্তক্ষেপকে সমর্থন করে এবং তখনকার পূর্ববাংলার মানুষের বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথক রাষ্ট্র গড়ার পক্ষে দাঁড়ায়, তা হলে কাশ্মীর প্রশ্নে তাদের অবস্থান ভিন্ন কেন?

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বোমা হামলা নিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো পাল্টাপাল্টি বিমান হামলায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘাত বাড়তে থাকে। এখনও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে রয়েছে।
কাশ্মীর কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনা নিয়ে আলোচনা করতেই আলজাজিরার আপফ্রন্ট অনুষ্ঠানে অংশ নেন অরুন্ধতী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক মেহেদি হাসান।

ওই অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মেহেদি কাশ্মীর নিয়ে অরুন্ধতীর অবস্থান জানতে চান।

অরুন্ধতী বলেন, কাশ্মীর সেভাবেই পরিচালিত হওয়া উচিত, যেভাবে সেখানকার মানুষ চায়।

অরুন্ধতীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, যদি গণভোটের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরবাসী ভারত-পাকিস্তান আলাদা হয়ে সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চান, তা হলে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে আপনি সমর্থন করতেন কিনা?

এর জবাবে অরুন্ধতী কাশ্মীর প্রসঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতীয় মিত্র বাহিনীর ভূমিকার কথা টেনে বলেন, ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের মানুষ যখন পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসন-শোষণ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র গড়ে তোলার সংগ্রাম করছে। ওই সময় আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ণাঙ্গ সমর্থন দেয় ভারত।

৩ ডিসেম্বর আচমকা বিমান হামলার শিকার হয়ে ভারত ওই দিনই বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনীর সমর্থনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করে। তবে একই ভারত কাশ্মীরে সংঘটিত নিজ দেশের সেনাবাহিনীর নৃশংস ভূমিকা নিয়ে সোচ্চার নয়।

১৯৭১ সালে সংঘটিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ভারতীয়রা যদি বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের প্রশ্নে ভারতের হস্তক্ষেপ (অর্থাৎ) তখনকার পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নকরণ প্রক্রিয়ায় (যুক্ত) হওয়া সমর্থনযোগ্য… যেখানে ভয়াবহ গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে, সেখানে (ওই হস্তক্ষেপ) একেবারেই যথাযথ, তা হলে কাশ্মীর প্রশ্নে তাদের অবস্থানের ন্যায্যতা কী।

ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থনে যুদ্ধের দুই সপ্তাহের মাথায় ১৬ ডিসেম্বর পূর্বপাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজি আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

কমবেশি সব ভারতীয়ই পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশের পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার বাস্তবতাকে সমর্থন করে। তবে সেই ভারতীয়দের বেশিরভাগই কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতার বিপক্ষে।