বাংলাদেশ || হাতাশি রাঈ. সেলডন

[ব্রিটিশ কমনওয়েলথ অফ ন্যাশনস্এর এনসিপি টেন ওয়ান (NCP TEN 1) পলিটিক্যাল পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এবং কমনওয়েলথ বিশ্বের রাজনীতিবিদ হাতাশি ‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি ফলোআপ কলাম লিখেছেন। হাতাশির গবেষনা ও বিশ্লেষাত্মক কলামটি প্রকাশ করা হলো।]

১:
এশিয়া মহাদেশের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ। যা ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ রাষ্ট্রসমুহ এবং আরো কিছু মুক্ত ও দ্বীপ অঞ্চল নিয়ে গঠিত মহাভারত এর অংশ। ব্রিটিশ কমনওয়েলথ অফ ন্যাশনসের সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশে বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত একটি বদ্বীপ রাষ্ট্র। পিতৃতান্ত্রিক পারিবারিক ব্যবস্থায় সমাজ ও রাষ্ট্রে নারী ও পুরুষের সম-অধিকার রয়েছে বাংলাদেশে। ইসলাম প্রধান ধর্ম, অন্যসব ধর্মসমুহ হচ্ছে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ, আহমেদিয়া ও কাদিয়ানি, রায়েলিজম এবং কিছু উপজাতীয় ও আদিবাসী ধর্ম বিশ্বাস।

জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় আছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রম, কারিগরি বিদ্যালয়, উম্নুক্ত শিক্ষা, ইত্যাদি যাদের শিক্ষা প্রদানের ভাষা হচ্ছে বাংলা, ইংরেজী, আরবী। এছাড়া একাধিক অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। বাংলাদেশের সকল স্তরে সরকার বিনামুল্যে সকল প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সেবা প্রদান করে থাকে। এছাড়াও বহু বেসরকারী ও বানিজ্যিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষা প্রদানের সক্ষমতা 100%।

স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে। জেলা সদর ও উপজেলা উপজেলা পর্যায়ে নুন্যতম একটি করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে বিনামুল্যে চিকিৎসা ও ঔষুধ প্রদানের লক্ষ্যে। এছাড়া প্রতিটি গ্রামে একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে বিনামুল্যে চিকিৎসা ও ঔষুধ প্রদানের জন্য। আরো আছে বিভিন্ন পর্যায়ে বিনামুল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ প্রদানের জন্য রয়েছে বিভিন্ন হাসপাতাল, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, ক্লিনিক ও চেম্বাতসমুহ। এছাড়া বেসরকারী পর্যায়ে বহু হাসপাতাল, ক্লিনিক, চেম্বার রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের সক্ষমতা 100%। পরিবার পরিকল্পনা, বাল্য বিবাহ, জোর পুর্বক বা অনিচ্ছায় বিবাহ এইসব ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।

খাদ্য উৎপাদন ও বিতরনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পুর্ন। বস্ত্র শিল্পে স্বনির্ভর। ২০১৮ সাল নাগাদ জনগনের জন্য বাসস্থান সুবিধা নিশ্চিত করনে বাংলাদেশ এখনো অনেক পশ্চাদপদ।

সংবিধান মতে একই সাথে বাংলাদেশ গনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্র। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল – বিএনপি এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। এছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি – বিজেপি, জামায়াত-ই-ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল – বাসদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল – জাসদ, ইসলামী শাসনতন্ত্র – ইশা, ইত্যাদি সহ আরো বহু রাজনৈতিক দল রয়েছে যাদের অনেকেরই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট জনসমর্থন ও প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি আতংকগ্রস্থ, উত্তপ্ত, প্রতিহিংসা মুলক। সবচেয়ে বেশী অপরাধ কার্যক্রম তৈরী হয় রাজনৈতিক কার্যক্রমকে ঘিরে।

২ :
পেশাগত সততার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুন্য পার্সেন্ট (0%)। তবে এক্ষেত্রে শূণ্যের কোটায় পেশাগত সততার অবস্থায় একটি রাষ্ট্রকে মৃত বলা যাবে না কিন্তু ঘুমন্ত কিংবা দুর্নীতিগ্রস্থ কিংবা মিস গাইডেড ইত্যাদি বলা যেতে পারে। তবে মাইনাসের দিকে গেলে তাকে মৃতপ্রায় কিংবা মৃত বলা যাবে।

এখন পেশাগত সততা 0% বলতে যা বোঝায় সেটার পুর্ন ব্যাখ্যা হলো এমন যে, ব্যাক্তিগতভাবে পেশা জীবনে কেউ কেউ সৎ ও দক্ষ-অভিজ্ঞ হয়ে থাকতে পারেন বিভিন্ন কারনে। কিন্তু সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে এবং বাংলাদেশে অবস্থিত বৈদেশিক প্রতিষ্ঠানসমুহসহ এমন একটি ছোট কিংবা বড় প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে দুর্নীতি ও অসৎ কার্যক্রম হয়ে থাকে না। এমন কি বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে ক্ষুদ্র প্রশাসন ইউনিয়ন পরিষদসমুহ দুর্নীতি ও অসততার বাইরে নয়। নিয়মিত দুর্নীতি ও অসৎ কার্য্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, প্রতিটি মন্ত্রনালয়, সংসদ ও আদালত, গোয়েন্দা সংস্থা ও সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী কিংবা তদন্ত সংস্থা, এবং উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সবচেয়ে ক্ষুদ্র অফিসগুলোও। যত সংখ্যক মানুষ সরাসরি দুর্নীতি ও অসৎ কার্যক্রমের সাথে জড়িত তার চেয়ে বেশী সংখ্যক মানুষ এর উপকারভোগী ও সাহায্যকারী এবং তৎসম মানসিকতা ধারন করেন। যেহেতু দুর্নীতি ও সততার স্কেলে রাষ্ট্রকে পরিমাপ করা হচ্ছে সুতরাং রাষ্ট্রের অর্গান, দপ্তর, বিভাগ, প্রতিষ্ঠান ও সবশেষে ক্ষুদ্র একক অফিস সমুহই বিবেচ্য। সুতরাং বাংলাদেশ একটি দুর্নীতিগ্রস্থ রাষ্ট্র ও পেশাগত সততায় 0%। তবে এই অবস্থা থেকে উন্নতি করতে হলে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে সর্বপ্রথম এটি স্বীকার করে নিতে হবে। তারপর ম্যাসিভ ভাবে ও ম্যাসিভ লেভেলে এর টেকসই কোন সমাধান বের করতে হবে যেন সেটা পরবর্তীতে নিজেই নিজেকে টেকসই করতে পারে ও নিয়মিতভাবে চালিয়ে নিতে পারে – বিশেষ করে এমন কোন প্রাকটিস এবং/অথবা মেকানিজম যা ঐসব মানুষকে এমনভাবে প্ররোচনা দেবে যে, “এইকাজে কিংবা ঐখানে নিরাপদ (অথবা ঝুকিও আছে) কোটি টাকা পড়ে থাকলেও (কিংবা যে লোভ/লাভই থাকুক না কেন) আমি তাতে যাবোই না, ঐসব আমি চিন্তাও করি না, এইসব প্রাকটিসেই আমি যাবো না।” এবং সেই সাথে নৈতিক অবস্থান ও পেশাগত আচরনের প্রতি দক্ষ ও অভিজ্ঞ করে তোলা। সেইসাথে রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা না করে যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা (ও পছন্দ) মতো সম্ভব কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা ও সহযোগিতা করা। দুর্নীতি ও অসততার সেক্টরেও অজস্র মানুষের জীবন জীবিকা নির্ভরশীল বিশাল অংকের আর্থিক লেনদেন ও সাফলিংকের মাধ্যমে। ঘুষ, দুর্নীতি, অসততার মতো একটি সেক্টর যদি নিজে নিজেই চলতে পারে, নির্ভরশীল মানুষের জীবন-জীবিকা চালাতে পারে তবে সেটা বন্ধ করে ঐসব মানুষকে কেন চালাতে পারবে না সরকার? কিছু পরিবেশ, সময়, সোসাইটি, ব্যস্ততা আছে যা ঘুষ, দুর্নীতি, অসততা ডিমান্ড করে। সে ক্ষেত্রে সরকারের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলিতে এমন মেকানিজম ও প্রাকটিস তৈরী করা হোক যে সংশ্লিষ্ট সবাই সেই ঘুষ ও দুর্নীতি এবং অসততার অর্থ ও সম্পত্তি সরকারকে ফিরিয়ে দিবে কিংবা তার উপর ইন-চার্জ বা দায়িত্ব প্রাপ্ত হবার প্রভিশন থাকবে। তবে কোন অপরাধ নিশ্চয়ই বুদ্ধিমানের কাজ নয় এবং এইসব কাজ অনেক ঝুকিপুর্ন ও কষ্টসাধ্যও হয়ে থাকে। সরকারী সেক্টর ঠিক হয়ে গেলে বেসরকারী সেক্টর অটোমেটিকই ঠিক হয়ে যাবে। ঘুষ, দুর্নীতি, অসততার সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপরাধ ও অনিরাপদ এবং নিম্নমানের সেবা ও পন্যের বিষয়টি গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট।

প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রত্যেকের রিসোর্সই হচ্ছে তাদের শক্তি সে সরকারী হোক কিংবা বেসরকারী যা একটি প্রতিষ্ঠানকে নিরাপত্তা দেয়। তেমনিভাবে পেশাগত সততা একটি প্রতিষ্ঠানের অনেক বড় একটি শক্তি ও রিসোর্স, একইভাবে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা।

দুর্নীতি ও সততার এই জায়গায় বাংলাদেশকে ব্যাপকভাবে কাজ করতে হবে। এটা শুধু সবাইকে নিজনিজ জায়গায় থেকে করতে অনুরোধ করলে হবে না বরঞ্চ সচেনতা সৃষ্টি করতে হবে, একটি ম্যাকানিজন তৈরী করতে হবে যাতে সবার ডেডিকেট হওয়াটা খুব জরুরী নয় কিন্তু গুড প্রাকটিস এবং দুর্নীতিকে “না’ বলবার জায়গাটা।

যেহেতু এখন বাংলাদেশ ইকোনমিক জিও ডিভিডেন্ট অবস্থানে থাকা একটি রাষ্ট্র এবং দ্রুত জনসংখ্যা বর্ধনশীল সময়ে পরিবার পরিকল্পনা নীতিতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন এবং ভবিষ্যৎ পেক্ষাপটে কমিয়ে আনাটাও অবশ্যই প্রয়োজন। তাই এই ডিভিডিয়েন্ট স্কেল ব্যবহার করতে পারলে উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও উন্নতিতে ভরপুর ও টেকসই হবে বাংলাদেশ।

যখন বলা হয় কেমন বাংলাদেশ চাই ও অনেক মতামত আমরা পেয়ে থাকি। কিন্তু সেগুলি থেকে প্রয়োজন, উপযোগিতা ও সম্ভাব্যতাগুলি আমরা বের করবার ও বিশ্লেষন করবার চেষ্টা করি না। যেমন কেউ একজন বললেন, কোন যুক্তিযুক্ত, সাম্ভাব্য ও প্রয়োজনীয় বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করার কথা। কিন্তু কিভাবে সেই বিষয়টিতে সচেতনতা সৃষ্টি করবেন? ঠিক কোন জায়গায় ও‌ কিভাবে? সব সচেতনতা সৃষ্টি করা কি একই ধরনের? পেশাগত, ব্যাক্তিগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ধরনের ও স্তরের এবং বিভিন্ন বিষয়ের উপরে সচেতনতা আছে। বিভিন্ন নেটওয়ার্কে অপরাধী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রন দুর্বল করে দিতে হবে। দক্ষ, অভিজ্ঞ, যোগ্য ও সৎদের অর্থায়ন ও ক্ষমতায়ন করতে হবে।

মানবাধিকার লংঘন বাংলাদেশে নিয়মিত ঘটনা ও সাধারন ব্যাপার। মানবাধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পশ্চাৎপদ, দুর্বল, নাজুক ও আক্রান্ত। সবচেয়ে বেশী ও বড় মানবাধিকার লংঘিত হয় রাজনৈতিক বলয় ঘিরে। কারন বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি আতংকগ্রস্থ, উত্তপ্ত, প্রতিহিংসা মুলক ও প্রতিশোধ পরায়ন।

পরিশেষে, আসল কথা হলো প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশ এইসব ক্ষেত্রে উন্নয়ন করতে চায় কিনা এবং জঙ্গিবাদসহ এইসব জাতীয় সমস্যাগুলি থেকে বেরিয়ে আসতে চায় কিনা অপরের দাসত্ব/পরনির্ভরশীলতা ছাড়াই? যদি চায় তবে খুব বোধ্যগম্য, খুব সম্ভব, খুব কঠিন নয় এমন কিছু একশান প্ল্যানই বর্নিত হয়েছে।

মানুষের মৌলিক অধিকার গ্রুপের অন্যতম মৌলিক অধিকার বাসস্থান অর্থাৎ আবাসন নিশ্চিত করনে বাংলাদেশ অনেক পশ্চাৎপদ আছে। অসংখ্য পরিবারের নুন্যতম আবাসনটুকুও নেই, অনেকের কোন মতে কুড়ে ঘর আছে যা হয়তো হাজার হাজার বছর পুর্বের মুলধারার আবাসন, আবার গ্রাম গঞ্জে শহরে অনেকের নিজস্ব জায়গা জমিতে ঘর-বাড়ি আছে কিন্তু বিদ্যুৎ নেই, ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই – সব মিলিয়ে বর্তমান আর্ক সভ্যতায় একদম মার্জিনাল আবাসন বলতে যা বোঝায় সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তদপুরি যৌথ পরিবার এখন আর টিকছে না এবং একক পরিবার গঠনেই বেশী আগ্রহী সবাই। আবাসন ক্ষেত্রেও বর্তমানে একই সাথে উন্নয়ন খুব জরুরী ছিলো হয়তো।

১৮-১৯ জুলাই ২০১৮ ইং
বড় ভাটরা, বাংলাদেশ।


(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। আওয়ার নিউজ বিডি-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)