বান্ধবীকে মদ খাইয়ে হত্যা করল বান্ধবী

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পৌর সদরের হাজরাহাটি গ্রামের কিশোরী দোলন আক্তারকে (১৫) মদ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা করা হয়। দুইদিন যেতে না যেতেই মামলা তুলে নিতে কিশোরীর পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে আসামিরা। এতে নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটছে দোলনের পরিবারের সদস্যদের।খবর জাগোনিউজের।

এ ঘটনায় শনিবার দুপুরে দোলনের বাড়ির সামনের রাস্তায় এলাকাবাসী জড়ো হয়ে দোলনের হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে।

গত সোমবার রাতে ভাঙ্গা উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামের মৃত লাবলু খরাতির ছোট মেয়ে কিশোরী দোলন আক্তারকে অতিরিক্ত মদ খাইয়ে অচেতন করে শ্লীলতাহানি করে তিন বখাটে যুবক।

অচেতন অবস্থায় দোলনকে উদ্ধার করে প্রথমে ভাঙ্গা ও পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুই দিন অচেতন থাকার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ব্যাপারে কিশোরী দোলনের মামা কাউন্সিলর ওমর আলী খরাতি বৃহস্পতিবার রাতে বাদী হয়ে কাইয়ুম, রহিম খরাতি, রাকিব ও দোলনের বান্ধবী কনা খরাতিকে আসামি করে ভাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

মামলা দায়েরের দুই দিন অতিবাহিত হলেও মূল আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি থানা পুলিশ। এরই মধ্যে মামলা তুলে নিতে বাদীসহ অসহায় পরিবারটিকে হুমকি দিচ্ছে বখাটেসহ কতিপয় প্রভাবশালী।

কিশোরী দোলনের মা কহিনুর বেগম বলেন, গত সোমবার বিকেলে গ্রামের পাশে কামার বাড়ি বৈশাখী মেলায় আমার মেয়ে দোলনকে তার বান্ধবী কনা আক্তার ফোন করে নিয়ে যায়। মেলার পাশে কনা আক্তারের বাড়িতে তার তিন বন্ধু কোমল পানীয়ের সঙ্গে মদ মিশিয়ে আমার মেয়ে দোলনকে পান করায়।

রাত ১১টা পর্যন্ত আমরা মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে সবাই পাগলের মতো চারদিকে খুঁজতে থাকি। গভীর রাতে কনা ও ওই তিন বন্ধু আমার মেয়েকে অচেতন অবস্থায় বাসার সামনে ফেলে রেখে যায়।

তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী অনেক আগেই মারা যাওয়ায় দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে কোনোরকম দিন চালাচ্ছি। আমাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে দোলনকে মাথায় পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরাতে চেষ্টা করে। আমি যত বারই হাসপাতালে নেয়ার কথা বলেছি আসামিরা বলেছে বেশি মদ খেয়ে ফেলেছে; একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে বলে হাসপাতালে নিতে বাধা দিয়েছে। মঙ্গলবার আমার মেয়ের জ্ঞান না ফেরায় আমি আমার ভাইদের সাহায্যে দোলনকে ভাঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি করি। ওখানকার ডাক্তাররা জানায়, এখানে দোলনের ভালো চিকিৎসা হবে না, দ্রুত ফরিদপুর নিতে হবে। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার মেয়ে মারা যায়। আমার মেয়েকে কনার সহায়তায় নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে তারা। আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।

দোলন হত্যা মামলার বাদী কাউন্সিলর ওমর আলী খরাতি বলেন, আমার বোন জামাতা মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্ট করে চার ছেলে-মেয়েকে মানুষ করছিল আমার বোন। মেলা চলাকালে কনা, রহিম, কাইয়ুম ও রাকিব আমার ভাগনিকে ঘরের ভেতরে আটকে রেখে কোমল পানীয়ের কথা বলে মদ খাওয়ায়। আসামিদের মধ্যে রহিম গত বছর মেলা চলাকালীন জালাল খরাতির স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে উত্ত্যক্ত করেছিল। ওই সময় তার বিরুদ্ধে ভাঙ্গা থানায় একটি মামলা হয়। এ বছর মেলার সময় কৌশলে ওরা আমার ভাগনিকে শ্লীলতাহানি করে মেরে ফেলেছে। আমি সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি করছি, অসহায় পরিবারটি যেন আসামিদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং সঠিক বিচার যেন পায়।

ভাঙ্গা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাঈদুর রহমান জানান, কিশোরী দোলন আক্তারকে হত্যার দায়ে থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার আসামি ওই এলাকার ওয়াদুদ খরাতির মেয়ে কনা আক্তারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকিদের ধরতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে। দোলনের পরিবারকে নিরাপত্তা দেবে পুলিশ।

এদিকে, এলাকাবাসী শনিবার সকালে দোলনের বাড়ির রাস্তায় জড়ো হয়ে হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে। এভাবে যারা মেয়েটিকে মেরে আবার প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।