বাহরাইনকে ১০-০ গোলে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ

আগেরদিনই অধিনায়ক মারিয়া মান্দা, কোচ গোলাম রব্বানি ছোটনরা জানিয়েছিলেন, প্রথম ম্যাচেই নিজেদের শক্তি প্রদর্শণ করতে চায় বাংলাদেশ। বাহরাইনকে পেয়ে সেই শক্তিরই পরীক্ষা করে নিলো বাংলাদেশের কিশোরীরা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিকে তারা রীতিমত উড়িয়ে দিয়েছে ১০-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে।

কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বাহরাইনের জালে রীতিমত গোলউৎসবে মেতে ওঠে মারিয়া মান্দা-আখি খাতুনরা। ম্যাচের শুরু থেকেই বাহরাইনের রক্ষণ ভেঙে চুরমার করে দেয় বাংলাদেশের মেয়েরা। যার ফলশ্রুতিতে এলো বিশাল এই জয়। বাহরাইনের মেয়েরা কোনো প্রতি আক্রমণই গড়তে পারেনি বাংলাদেশের রক্ষণে। ফলে, পুরোটা ম্যাচই বলতে গেলে দর্শক হয়ে থাকতে হয়েছে বাংলাদেশের গোলরক্ষককে।

দুই বছর আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবলের বাছাই পর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্বে উঠেছিল বাংলাদেশ। লাল-সবুজ জার্সিধারী কিশোরীরা সেই শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার লড়াইয়ের মিশনটা শুরু করেছে বেশ ভালোভাবেই। অন্যদিকে দুই ম্যাচ মিলে বাহরাইনের মেয়েরা হজম করলো ১৮ গোল।

বাংলাদেশের হয়ে ২টি করে গোল করেন আনুচিং মোগিনি, শামসুন্নাহার জুনিয়র এবং অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা, ১টি করে গোল করেন আনাই মোগিনি, সাজেদা, শামসুন্নাহার সিনিয়র এবং তহুরা।

ম্যাচের নবম মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো বাংলাদেশ। তহুরা খাতুনের ক্রস থেকে বক্সের মধ্যে বল পান আনাই মোগিনি। ফাঁকায় বল পেয়েও পোস্টের ওপর দিয়ে মেরে সুযোগ নষ্ট করে দেন তিনি। ১১তম মিনিটেই গোলের দেখা মেলে বাংলাদেশের। ডান প্রান্ত দিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে আনাই মোগিনির বাঁকানো শট চলে যায় বাহরাইনের জালে।

১৬ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ফেলে বাংলাদেশের কিশোরীরা। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে মারিয়া মান্ডার চোখ ধাঁধানো শট জড়িয়ে যায় বাহরাইনের জালে। ১৯ মিনিটে ব্যবধান দাঁড়ায় ৩-০। বক্সের মধ্যে শামসুন্নাহার জুনিয়রের ছোট ক্রসে আনুচিং মোগিনি ডান পায়ের আলতো টোকায় বল বাহরাইনের জালে পাঠিয়ে দেন।

২৭ মিনিটে ব্যবধান হতে পারতো ৪-০। কিন্তু ঋতুপর্ন চাকমার জোরালো শট বল জালে প্রবেশ করলেও অফসাইডের বাশি বাজান রেফারি। এর দুই মিনিট পর আরও একটি গোল বাতিল হয়ে যায়। শামসুন্নাহার জুনিয়র করেছিলেন গোলটি। রেফারি এখানেও অফসাইডের অজুহাত তুলে দেন।

৩৫ মিনিটে আরও একটি গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়। বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়া ঋতুপর্ন চাকমার শট গোলরক্ষক ঠিকমতো ফেরাতে পারেননি। সামনে বল পেয়ে আনুচিং বল জড়িয়ে দেন জালে। কিন্তু সাইড রেফারি ফ্ল্যাগ তুলে জানিয়ে দেন এটা ছিল অফসাইড।

তবে প্রধমার্ধেই ব্যবধান ৫-০ করে ফেলে বাংলাদেশ। প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে পঞ্চম গোল করে কিশোরীরা। আনাই মোগিনির ক্রসে শামসুন্নাহার জুনিয়রের হেড চলে যায় বাহরাইনের জালে।

দ্বিতীয়ার্ধে আরও ৫বার মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির জালে বল জড়ায় বাংলাদেশের মেয়েরা। ৫৫ মিনিটে ৬-০ ব্যবধান করেন সাজেদা আক্তার। মাঝমাঠ থেকে ডিফেন্ডার আখি খাতুনের ক্রস খুজে নিয়ে বল নিয়ন্ত্রণে নেন বদলি ফরোয়ার্ড সাজেদা। ঠান্ডা মাথায় বাহরাইনের গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন এ ফরোয়ার্ড।

দুই মিনিট পর আবারও গোল। এবারও গোলের যোগানদাতা আখি। তার জোরালো শর্ট বক্সের মধ্যে পেয়ে শামসুন্নাহার জুনিয়র যে শটটি নিলেন, তা প্রথমে বাহরাইন গোলরক্ষক ফিরিয়ে দিলেও ফিরতি বলে দারুণ এক শটে জালে জড়িয়ে দেন ছোট শামসুন্নাহার। হয়ে যান ৭-০।

৫৮ মিনিটে পেনাল্টি পায় বাংলাদেশ। ব্যবধান হয়ে যায় ৮-০। এ সময় গোলদাতা শামসুন্নাহারকে বক্সের মধ্যে ফেলে দেয় বাহরাইনের দানা বাসেম। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। কিন্তু এর প্রতিবাদ করায় তাকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। ১০ জনের দলে পরিণত হয় বাহরাইন। স্পট কিক থেকে গোল করেন শামসুন্নাহার সিনিয়র।

৭২ মিনিটে আবারও দূর পাল্লার শর্টে দুর্দান্ত এক গোল। এবারও দুর পাল্লার শটে গোল করেন মারিয়া মান্দা। বক্সের বাইরে থেকে বাংলাদেশ অধিনায়কের ডান পায়ের শট পোস্টের কোন দিয়ে চলে যায় জালে। ব্যবধান দাঁড়ালো ৯-০ গোলের। ব্যবধান ১০-০ গোলে উন্নীত করেন তহুরা। ৮১ মিনিটে সাজেদা বল নিয়ে ঢুকে পড়েন বক্সে। এরপর বল চলে যায় তহুরার কাছে। গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে বল জালে পাঠান এ ফরোয়ার্ড।