বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ, তিন মাসে আক্রান্ত ৩০০০

রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিশ মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন গতানুগতিকভাবে মশা নিধনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

চলতি বছরে ঢাকাসহ সারা দেশে জানুয়ারি মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩ হাজারের অধিক মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এমন তথ্য জানিয়েছেন রোগ নিয়ন্ত্রণ, রোগ তত্ব ও গবেষণা (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

তবে সব থেকে বেশি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে জুলাই মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব প্রথম দেখা যায় বাংলাদেশে।

এদিকে ডেঙ্গু জ্বর ও চিকুনগুনিয়া মোকাবেলায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ব্যাপক প্রস্তুতি নিলেও তা বাস্তবায়নে বরাবরের মতো ঢিলেমি দেখা যায়।

বর্তমানে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় মশা নিধনের জন্য ক্রাশ ও লার্বি সাইড ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম চলছে। সপ্তাহে দুই দিন পালা করে এই কার্যক্রম চালানো হয়।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় (ডিএসসিসি) প্রতি দুই বাড়ির একটিতে এডিশ মশার লার্ভা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন মেয়র সাঈদ খোকন।

বাসা বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা নষ্টে অভিযান পরিচালনার কার্যক্রম শুরু করে এপ্রিল মাসে। তবে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে জেল ও জরিমানার মতো শাস্তি ঘোষণা করায় তা নাগরিক প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ফলে এর কার্যক্রম থেমে যায়।

তবে কোনো ধরনের শাস্তি ছাড়া ধানমন্ডির কিছু বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হলেও তা বেশিদিন কার্যকর হয় নাই।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেখ সালাহ উদ্দিন বলেন, বাড়ির ভেতর ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানো সম্ভব হয় না। এরপর কেউ বাসায় ওইভাবে যেতে দেয় না। সব কিছু মিলিয়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আনা কষ্টকর।

তিনি বলেন, নাগরিক সচেতন না হলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কারণ এই মশা বাসা বাড়ির স্বচ্ছ পানিতে বংশ বিস্তার করে। তবে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কেউ সেবা চাইলে বিনামূল্যে দিবে ডিএসসিসি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাকির হাসান বলেন, এডিস মশা ঘরের ভেতর বংশ বিস্তার করে। ঘরের ভেতরের স্বচ্ছ পানি জমতে দিলে এই মশা বংশ বিস্তার করবে। এ ক্ষেত্রে নাগরিকদের সব থেকে বেশি সচেতন হতে হবে।

এছাড়া ডিএনসিসি এলাকায় নিয়মিত মশক নিধনের কার্যক্রম সম্পন্ন হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে চলতি বছরে রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সাত জন মারা গেছেন।

এ বিষয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণ, রোগ তত্ব ও গবেষণা (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, যে সাত জন মারা গেছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ দ্বিতীয়বার আক্রান্ত। ডেঙ্গু প্রথমবার যতোটা সমস্যার হয় এর থেকে দ্বিতীয়বার বেশি সমস্যা হয়। অনেক আগে থেকে এই রোগ থাকায় এখন অনেকের দ্বিতীয়বার হচ্ছে।

বর্তমান অবস্থায় একদিন জ্বর হলেও ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের জ্বরের ওষুধ সেবন থেকেও বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এই তিনি।