বিএনপিকে চোখ উপড়ানোর হুমকি দেয়া কে এই মেয়র?

সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ মিয়ার বিতর্কিত বক্তব্যে নিজ দলে ও প্রতিপক্ষ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দিরাইয়ের জারুলিয়া জলমহালে আলোচিত ট্রিপল মার্ডার মামলার পলাতক ও আদালত অবমাননার দায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি ওই আওয়ামী লীগ নেতা মোশাররফ।

কিন্তু আদালতের পরোয়ানা নিয়ে সরকারদলের প্রভাব দেখিয়ে তিনি প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করে বেড়াচ্ছেন।

এদিকে মঙ্গলবার তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য নিয়ে উপজেলাজুড়ে তোলপাড় ও সমালোচনার ঝড় বইছে। অনেকেই এটাকে সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বিনষ্ট করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির আলামত হিসেবে দেখছেন।

দিরাই উপজেলা সদরে সুনামগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জয়া সেন গুপ্তার সমর্থনে আয়োজিত এক নির্বাচনী সমাবেশে মেয়র মোশাররফ মিয়া হুমকি দিয়ে বলেন, ‘নৌকার পক্ষে আসনের সব ভোটকেন্দ্র দখল করা হবে এবং এতে বিএনপি নেতাকর্মীরা বাধা দিলে তাদের চোখ উপড়ে ফেলা হবে।’

তিনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘বিএনপিকে কোনো সেন্টারে আধিপত্য বিস্তার করতে দেয়া যাবে না, ওদের প্রত্যেকটি সেন্টার আমাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। সুতরাং যারা ছাত্রলীগ আছ, তোমাদের পড়াশোনা করেই এবার নির্বাচন করতে হবে। কোনো সেন্টার বিএনপিকে দেয়া যাবে না । এতে বিএনপির কোনো কর্মী, কোনো নেতা যদি চোখ রাঙায় তাহলে তার চোখ তুলে দেবে। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা কোনো কর্মীকে একটা কথা বললে তার চোখ উপড়ে ফেলা হবে। সুতরাং নির্বাচনে সবকটি সেন্টার আমাদের দখলে থাকবে।’

দিরাই পৌর মেয়রের প্রকাশ্যে এমন হুমকির ভিডিও ক্লিপসহ বুধবার বিভিন্ন অনলাইনে নিউজটি প্রকাশিত হওয়ার পর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওসহ নিউজটি অসংখ্যবার শেয়ার হয়। পৌর মেয়রের বক্তব্যটি দিরাইয়ে ‘টক অব দ্য উপজেলা’ হিসেবে স্থান পায়।

বৃহস্পতিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রকাশিত হয়। ঘটনাটি দিরাইয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

এ ব্যাপারে দিরাই উপজেলা বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাইয়ূম বলেন, মেয়র মোশাররফ মিয়ার বক্তব্য উসকানিমূলক। রাজনৈতিক সচেতন হিসেবে দিরাইয়ের মানুষের একটা ঐতিহ্য যেমন রয়েছে, তেমনি এ অঞ্চলে সহনশীল রাজনীতিরও দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য রয়েছে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি- মেয়র মোশাররফের উসকানিমূলক বক্তব্যের জবাব মানুষ আগামী ৩০ ডিসেম্বর ব্যালটের মাধ্যমেই দেবে।

দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলতাব উদ্দিন মাস্টার বলেন, ‘দিরাই-শাল্লায় ভোটের রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা রয়েছে। এখানে যুগ যুগ ধরে রাজনৈতিক সহনশীলতার নজির রয়েছে। দিরাই পৌরসভার মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদকেরও দায়িত্বে আছেন। এ রকম দুটি দায়িত্বপূর্ণ পদে থেকে উসকানিমূলক বক্তব্য শোভা পায় না ’

তিনি বলেন, ‘এ বক্তব্যে আসন্ন নির্বাচনে দলের প্রার্থীর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এটা দলের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। এ ধরনের বক্তব্য কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’

বৃহস্পতিবার দিরাইয়ের আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলমতের মানুষের সঙ্গে কথা বলে মেয়র মোশাররফ মিয়ার ব্যাপারে আর্ও অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উসকানিমূলক বক্তব্য ছাড়াও উপজেলা সদরে কৃষকের ওপর হামলা, বৃক্ষ নিধনসহ নানা অভিযোগে তিনি ও তার ছেলে এর আগে একাধিকবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তার ক্ষমতার দাপটে অসহায়।