বিএনপির কাছে যে ১০০ আসন চাইবে ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা

নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসার ঘোষণার পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হচ্ছে এ আশা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

আওয়ামী লীগদলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষ করেছে। অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন ফরম বিক্রি চলছে। বৃহৎ এ দুদলের নেতৃত্বাধীন জোটেও নির্বাচনী হাওয়া বইছে। প্রধান শরিক দল থেকে কত আসন ভাগিয়ে নেয়া যায় সেই হিসাব-নিকাশ করছেন জোটের শরিকরা।

রোববার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এর পর দিন থেকেই আসন নিয়ে দরকষাকষি শুরু করেছে ফ্রন্টের শরিক দলগুলো।

ঐক্যফ্রন্টের শরিক বেশ কয়েকটি দল ইতিমধ্যে নিজ দলের প্রার্থী তালিকা তৈরি করে ফেলেছে। দু’একটি দল প্রার্থী তালিকা তৈরির কাজে হাত দিয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে এসব তালিকা জোটের প্রধান শরিক দল বিএনপি মহাসচিবের হাতে তুলে দেয়া হবে।

এর পরই কে কতটি আসনে নির্বাচন করবে, সেটি নিয়ে বৈঠক হবে। বৈঠকে বসবেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন এ জোটের শীর্ষ নেতারা।

বিএনপি ছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কোন প্রতীকে নির্বাচন করবে, এখনও ঠিক হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে-নির্বাচনী কৌশল ও ভোটের জটিল হিসাব-নিকাশে শেষ পর্যন্ত তারা ধানের শীষ প্রতীকেই নির্বাচন করবেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঐক্যফ্রন্টের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে ১০০ আসন দাবি করবে শরিকরা। এ নিয়ে দরকষাকষি হবে। দরকষাকষির চূড়ান্ত পর্যায়ে ন্যূনতম চাহিদা পূরণ হলে সমঝোতায় আসবে জোটের শরিকরা।

ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা যে ১০০ আসন চাইবে, সেগুলোর মধ্যে গণফোরাম প্রাথমিকভাবে ৪৫ প্রার্থীর তালিকা তৈরি করেছে।

ফ্রন্টের অন্যতম শরিক আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি তৈরি করেছে ২৫ জনের প্রার্থী তালিকা।

মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য ১৫, বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ ১০ আসনে প্রার্থী তালিকা ঠিক করেছে।

এর বাইরে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে পাঁচজনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক গণফোরাম সভাপতি ড. কামালের ডাকে সাড়া দিয়ে বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী ও সাবেক আমলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। তারা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে নির্বাচন করবেন।

এদের মধ্যে রয়েছেন-ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রমুখ।

জানা গেছে, সোমবার দুপুরে ড. কামাল হোসেনের মতিঝিল চেম্বারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় শরিক দলগুলোর নেতারা কে কোন আসন থেকে নির্বাচন করতে চান, তার তালিকাও চাওয়া হয়।

সিদ্ধান্ত হয়, দু-একদিনের মধ্যে জোটের শরিকরা যার যার দলের তালিকা চূড়ান্ত করবে। এর পর ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে। হাতে সময় কম থাকায় যত দ্রুত সম্ভব প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করারও সিদ্ধান্ত হয় এ বৈঠকে।

এ তালিকা আসার পর প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি। এ কমিটিতে জোটের সব দলের প্রতিনিধি রয়েছেন। তবে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নির্বাচনে শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের মত প্রাধান্য পাবে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী (ঢাকা-৬), সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু (ঢাকা-২ অথবা ঢাকা-৩), জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব (লক্ষ্মীপুর-৪), কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী (টাঙ্গাইল-৮ ও ৪), নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-২) এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মোহাম্মদ মনসুর (মৌলভীবাজার-২) আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর সোমবার বলেন, ‘আমি মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলাম। জোট মনোনয়ন দিলে আগামীতেও এ আসন থেকে নির্বাচন করব।

তবে শোনা যাচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন সিলেট-১ আসন থেকেও সুলতান মোহাম্মদ মনসুর নির্বাচন করতে পারেন। আবার এও শোনা যাচ্ছে, এই আসন থেকে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচন করতে পারেন।

ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক ড. কামাল হোসেন আগে থেকেই বলে আসছেন নির্বাচন করবেন না। শারীরিক অসুস্থতা ও বয়সের কারণে তিনি নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে চাইছেন। তবে গণফোরাম ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা চান তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। কিন্তু ড. কামাল হোসেন এখনও এতে সায় দেননি। তিনি সম্মত হলে (ঢাকা-৮) নির্বাচন করতে পারেন।

গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু ঢাকা-২ অথবা ঢাকা-৩ আসনের মধ্যে যে কোনো একটি থেকে নির্বাচন করবেন। দু-তিন দিনের মধ্যে তারা তাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবে বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।

জানা গেছে, আ স ম আবদুর রব ছাড়াও জেএসডির প্রার্থীদের খসড়া তালিকায় আরও রয়েছেন-দলটির সহসভাপতি তানিয়া রব (ঢাকা-১৮), সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন (কুমিল্লা-১), আবদুল জলিল (নোয়াখালী-২), অ্যাডভোকেট বেলায়েত হোসেন বেলাল (লক্ষ্মীপুর-২), নাজমুল হক শিকদার (নরসিংদী-৫), অ্যাডভোকেট আবু ইসাহাক (সিরাজগঞ্জ-৪), দবিরউদ্দিন জোয়ার্দার (ঝিনাইদহ-১), নুরুল ইসলাম (বরিশাল-৬), আলহাজ আবছার আলী (সাতক্ষীরা-২), মির্জা আকবর (চট্টগ্রাম-২), শহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন (ফেনী-১), কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী (ঢাকা-১৪), শাহ আলম (ঢাকা-৬), শামসুল আলম নিক্সন (ঢাকা-১৫) এবং এমএ ইউসুফ (ঢাকা-৯)।

মাহমুদুর রহমান মান্না ছাড়াও নাগরিক ঐক্যের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন- দলটির উপদেষ্টা এসএম আকরাম (নারায়ণগঞ্জ-৫), অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সরকার (চাঁদপুর-৩), মোমিনুল ইসলাম (লক্ষ্মীপুর-১), জিন্নুর আহম্মেদ চৌধুরী (সিলেট-৬), নঈম জাহাঙ্গীর (জামালপুর-৩), মোফাখ্খারুল ইসলাম নবাব (রংপুর-৫), দিদারুল আলম বাবুল (বাগেরহাট-৩) এবং সাদাকাত হোসেন খান সাক্কু (ঢাকা-১৬)।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ছাড়াও কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের প্রার্থী তালিকায় আছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খোকা (টাঙ্গাইল-৭), যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী (গাজীপুর-৩) এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার (নারায়ণগঞ্জ-৪)।

প্রার্থী তালিকা ঠিক করার পর দু-একদিনের মধ্যেই বিএনপির সঙ্গে দরকষাকষি শুরু করবে জোটের শরিক দলগুলো। সেই দরকষাকষিতে ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করা হবে।

ঐক্যফ্রন্টের আসন ভাগাভাগির হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে জানতে চাইলে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু সোমবার বলেন, আমরা দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করছি। অন্যরাও তাদের তালিকা তৈরি করছে। এর পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বসে প্রার্থী ঠিক করবেন।