বিএনপির যে শর্তে ২২ আসনেই রাজি হলো জামায়াত

নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার পর সব ঘাটের জল ঘোলা করেও শেষমেশ ২২ আসনে নির্বাচন করার ব্যাপারে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীকে। শনিবার থেকে কয়েক দফায় বৈঠক শেষে শর্ত সাপেক্ষে ২২ আসনে নির্বাচন করতে জামায়াতকে রাজি করেছে বিএনপি।

জামায়াতের শর্ত ছিল, যে ২২ আসনে জামায়াত নির্বাচন করবে সেখানে জোটের কিংবা বিএনপি’র কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে না। বিএনপি ওই শর্ত মেনে নিয়েছে বলে দাবি জামায়াতের। তবে জামায়াতকেও তাদের সকল স্বতন্ত্র প্রার্থীকে প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। তাতেও জামায়াত সম্মত হয়ে ৪৭ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে একটি বাদে সব প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ওই একটি আসনে বিএনপি-জামায়াত উন্মুক্ত নির্বাচন করবে।

যদিও ইশতেহার ঘোষণার পর জোটগতভাবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরীক দল বিএনপি’কে ৬০ আসনে প্রার্থীর তালিকা দিয়েছিল দলটি।

জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর জন্য ২২ আসনে নির্বাচন করা অনেক কষ্টের। গত ১০ বছরে জামায়াতকে অনেক খেসারত দিতে হয়েছে। এরপরও বৃহত্তর স্বার্থে বরাবর ছাড় দেয়ার রাজনীতি করে আসছে জামায়াত।

চূড়ান্তভাবে যে ২২ আসনে ধানের শীষে লড়বে জামায়াত

জামায়াতে ইসলামীর এ পর্যন্ত চূড়ান্ত হওয়া আসনগুলো হচ্ছে ঠাকুরগাঁও-২ মাওলানা আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ, দিনাজপুর-৬ মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, রংপুর-৫ অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান সরকার, সিরাজগঞ্জ-৪ মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-৫ মাওলানা ইকবাল হুসাইন, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, যশোর-২ আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ অধ্যাপক আবদুল আলীম, খুলনা-৫ অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী, ঢাকা-১৫ ডা. শফিকুর রহমান, কুমিল্লা-১১ ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, চট্টগ্রাম ১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম এবং কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আজাদ।

যে তিন আসন ছাড়ল জামায়াত

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দর কষাকষির পর চূড়ান্ত সমঝোতায় বিএনপির অটল অবস্থান ও অনুরোধে রবিউল বাশার (সাতক্ষীরা-৩), ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী (সিলেট-৫) ও হাবিবুর রহমান (সিলেট-৬) আসনগুলোতে ছাড় দিতে সম্মত হয়েছে জামায়াত। ইতোমধ্যে জামায়াত এ তিন প্রার্থীকে প্রতাহ্যার করে নিয়েছে।

এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, অনেক দর কষাকষির পর বৃহত্তর স্বার্থে জোটের স্বার্থে, দেশের গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে জামায়াতে ইসলামী ২২ আসনে নির্বাচন করার ব্যাপারে জোটগতভাবে সম্মত হয়েছে।

তবে এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর জামায়াতের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দীর্ঘ ১০ বছরে সরকার জামায়াতের সাথে যে রুঢ় আচরণ করেছে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে, প্রতীক বাতিল করেছে, শীর্ষ ৫ নেতাকে ফাঁসি দিয়েছে, অসংখ্য নেতাকর্মীকে ‘হত্যা’ করেছে, হাজার হাজার মামলা হয়েছে সবই জোটভিত্তিক রাজনীতির কারণে। জোটের সাথে না থাকলে এ পরিস্থিতি নাও হতে পারতো।

তিনি বলেন, এত কিছুর পরও নির্বাচনে আসন বণ্টনের ক্ষেত্র জামায়াতকে ঠিক সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। আমাদের অনেক জায়গায় বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, সিলেট, পাবনা এবং সাতক্ষীরার কিছু আসনে এককভাবে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও জোট থেকে সেগুলো পাওয়া যায়নি। এই নিয়ে আমাদের মাঝে চরম অসন্তুষ্টি থাকলেও জোটের বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ব্যস্ত থাকায় কথা বলতে পারছেন না বলে জানান।

একটি আসনে উন্মুক্ত লড়বে জামায়াত

২২টি আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নিবাচন করবে জামায়াত প্রার্থী। এর বাইরে একটি আসনে উন্মুক্ত নির্বাচন করবে বিএনপি-জামায়াত প্রার্থীরা। সেটি হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩। ওই আসনে জামায়াতের প্রার্থী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল এবং বিএনপি’র প্রার্থী দলটির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক এমপি হারুনুর রশীদ।

২০০৮ সালের নির্বাচনে ৫টি আসনে (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, রাজশাহী-৩, সিরাজগঞ্জ-৪, ঝিনাইহদ-৩, মেহেরপুর-১) এবং ২০০১ সালে একটি আসনে (চট্টগ্রাম-১৫ তৎকালীন ১৪) উন্মুক্ত নির্বাচন করেছিল জামায়াত। ওই সব আসনে জিততে পারেনি জামায়াত কিংবা বিএনপি’র কোনো প্রার্থী।