বিএনপির লবিস্ট নিয়োগের খবরে চিন্তিত নয় আ.লীগ

একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ভিত্তিক দু’টি লবিস্ট ফার্মকে নিয়োগের খবরে চিন্তিত নয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দেশের মানুষের কাছে আস্থা হারিয়ে বিদেশিদের কাছে ধরনা দেওয়ার যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিএনপি সম্প্রতি সময়ে দেখিয়েছে, লবিস্ট নিয়োগ সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।

এ প্রসঙ্গে তারা ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ের বৈঠকে কথা তুলে ধরেন। তাদের দাবি, ওই সকল বৈঠকে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে হাজারো মিথ্যা অভিযোগের ঢালি খুলে বসে। এসকল বৈঠককে বিএনপির নালিশী বৈঠক বলে অভিহিত করেন তারা।

দলটির একাধিক নেতা বলছেন: আন্তর্জাতিক মহলে বিএনপির নালিশী রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে চিন্তিত নন তারা। মাঠের রাজনীতিতে ব্যর্থতা এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে দিশেহারা বিএনপি এ পথ বেছে নিয়েছে। এর মধ্যদিয়ে দলটির রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব সকলের সামনে উন্মোচিত হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

বিএনপি এখন জামায়াতের দেখানো পথে হাঁটছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা। এ প্রসঙ্গে, যুদ্ধাপরাধী বিচার শুরু হলে তা বানচালে আন্তর্জাতিক মহলকে দিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে জাতিসংঘ-যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন জায়গায় দলটির লবিস্ট নিয়োগের উদাহরণ তুলে ধরেন।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য পলিটিকো’র সংবাদে বলা হয়, আবদুস সাত্তার নামের এক ব্যক্তি বিএনপির পক্ষ থেকে ‘ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিক’ ও ‘রাস্কি পার্টনার্স’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছেন।

ওই লবিস্ট ফার্ম দু’টি বিএনপির হয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াও কংগ্রেসম্যান, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা, নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক, পাবলিক পলিসি ইনস্টিটিউটসহ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বিএনপির হয়ে কাজ করবে।

যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি’র লবিস্ট নিয়োগে আওয়ামী লীগ কী ভাবছে? জানতে চাইলে দলটির অন্যতম মুখপাত্র ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন: জন্মলগ্ন থেকেই বিএনপির ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে আসছে। এটা তারই ধারাবাহিকতার অংশ। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে আমরা এবং দেশবাসী এ তথ্য জানতে পেরেছি।

এ ঘটনায় লন্ডনে পালিয়ে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান জড়িত বলে দাবি করেন তিনি। বলেন: আমরা জানতে পেরেছি দুর্নীতি করে আদালতের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত লন্ডনে পলাতক তারেক রহমান লন্ডন ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এখন সেই যুক্তরাষ্ট্র থেকেই খবর এলো লবিস্ট নিয়োগের! লন্ডনে সে এতদিন সরকার এবং দেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করেছে।

তারেক রহমান এখন লন্ডনের পর ওয়াশিংটনেও ষড়যন্ত্রের জাল ছড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে উদাহরণ তুলে ধরে ক্ষমতাসীন দলের এ নেতা বলেন: এর আগে আমরা দেখেছি লর্ড কার্লাইল, টবি ক্যাডম্যানদের নিয়োগ দিয়ে তারা আন্তর্জাতিক মহলে সরকার এবং দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। সরকারের সুনাম নষ্টের চেষ্টা করেছে। দেশের মানুষের আস্থা হারিয়ে, রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব থেকে বিএনপি এখন লবিস্ট নিয়োগ করছে বলে মনে করছেন হানিফ।

দলটির তিনবারের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলছেন: অগ্নি সন্ত্রাস, হরতালের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারার, দুর্নীতিসহ রাজনীতির নামে অপরাজনীতির কারণে বিএনপি জনগণের আস্থা হারিয়েছে। আর আওয়ামী লীগ সব সময় দেশের জনগণের জন্য রাজনীতি করে আসছে। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করি।

জনগণ না চাইলে বিদেশি কারও অনুগ্রহে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া সম্ভব নয় মন্তব্য করে হানিফ বলেন: আওয়ামী লীগের রাজনীতি জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের রাজনীতি। আর বিএনপির রাজনীতি মিথ্যাচার আর লুটপাটের রাজনীতি। দেশটা ১৬ কোটি মানুষের। দেশের জনগণ ঠিক করবে কে সরকার পরিচালনা করবে। বাইরের কেউ নয়।

‘বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ এখন ব্যবহার করছে। তাদের জনগণের ওপর বিশ্বাস নেই। তাই, লবিস্ট নিয়োগ করেছে। আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত নোই। সামনের দিনগুলোতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা হবে।’

তিনি আশা প্রকাশ করেন: চলমাল অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে জনগণ একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেবে।

লবিস্ট নিয়োগ প্রসঙ্গে দলটির অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন: যাদের অঢেল অবৈধ অর্থ আছে তারাই লবিস্ট নিয়োগ করতে পারে। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হয়ে কারাগারে। তার ছেলে তারেক রহমানকেও দুর্নীতির দায়ে সাজা দিয়েছে আদালত। সাজা এড়াতে সে এখন সেই বিদেশে পালিয়ে রয়েছে। ক্ষমতায় থাকতে তারা দেশের সাধারণ জনগণের ভাগ্য উন্নয়ন বাদ দিয়ে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন এবং অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়তে ব্যস্ত ছিলো।

‘বিএনপি হয়তো সেই অবৈধ পথে অর্জিত অর্থ ঢেলে লবিস্ট নিয়োগ করছে। অপপ্রচার এবং মিথ্যাচারের মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বিভ্রান্ত করে সরকারের ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইছে।’

দেশের জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে দাবি করে খালিদ মাহমুদ বলেন: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য নিয়ে রাজনীতি করে। দেশের উন্নয়ন এবং উন্নতির কথা চিন্তা করে। আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষকে শোষণ করে, অবৈধ পথে অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়তে ব্যস্ত থাকে।

মুখোশ উন্মোচিত হওয়ায় জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সেই সঙ্গে যোগ করে: জনগণকে পাশে নিয়ে বিএনপির সকল প্রকার মিথ্যাচার, অপপ্রচার এবং ষড়যন্ত্রকে রুখে দেবে আওয়ামী লীগ। জনবিচ্ছিন্ন বিএনপির লবিস্ট নিয়োগে আমরা চিন্তিত নোই।

এদিকে, লবিস্ট নিয়োগের খবর প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি ‘দ্য পলিটিকো’র প্রতিবেদনকে বিএনপির বিরুদ্ধে অপ-প্রচারের অংশ হিসেবে দাবি করেছেন দলটির নেতারা। জাতিসংঘের আমন্ত্রণে দলটির মহাসচিব (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) যখন নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন, তখন এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ।