বিএনপির স্থায়ী কমিটির শূন্য পদে যারা আসতে পারেন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চরম সাংগঠনিক ব্যর্থতা প্রদর্শনের পর দল গোছানোর দিকে মন দিচ্ছে বিএনপি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা একমত যে, নির্বাচনে প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের আগ্রাসী ভূমিকার বিপরীতে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। এ উপলব্ধি থেকেই দলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকায় দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমানের নির্দেশনায় দল চলছে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার কারাবন্দি জীবনের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। এই ১১ মাস ধরে তারেক রহমানের নির্দেশনায় দলের স্থায়ী কমিটিই বিএনপিকে পরিচালনা করেছে। এর সমন্বয় করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপিতে স্থায়ী কমিটি বরাবরই একটি আকর্ষণীয় ও মর্যাদাসম্পন্ন পদ। আজীবন বিএনপির রাজনীতি করা পোড় খাওয়া নেতাদের টার্গেট থাকে শেষ জীবনে হলেও স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া। দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে এ ফোরামে সাংগঠনিকভাবে যোগ্য, পরীক্ষিত, ত্যাগী ও দলে তুলনামূলক গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদেরই স্থান হয়। তাই প্রায় সব জ্যেষ্ঠ নেতার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়া।

এ কমিটি নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত, কর্মসূচি প্রণয়ন থেকে শুরু করে সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজগুলো করে। স্থায়ী কমিটির সুপারিশের আলোকেই বেশিরভাগ সময় বিএনপির শীর্ষ নেতারা সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। অন্তত খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে।

বিএনপির কাউন্সিলের কথা উঠলেই অনেকে স্থায়ী কমিটির পদ বাগিয়ে নিতে নানা কৌশল ও তদবির শুরু করেন। এবার বিএনপির কাউন্সিল কবে হবে তা নিয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।

কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া জাতীয় কাউন্সিল করার কথা ভাবছে না বিএনপি। আগের কমিটি ঠিক রেখে কমিটির শূন্যপদগুলো পূরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাই দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির পাঁচটি শূন্যপদ পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে শীর্ষ নেতৃত্ব।

ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে সম্মতিও দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য রাজনীতি থেকে অবসর নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষিত ও ত্যাগী প্রবীণ নেতার পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নেতাদেরও স্থায়ী কমিটিতে স্থান দিতে চায় দলটি।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নীতিনির্ধারক বলেন, মার্চে দলের নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কিন্তু আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দির এক বছর পূর্ণ হবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও দেশের বাইরে রয়েছেন। লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, তারা ঘরে থাকতে পারছেন না।

হাজারও নেতাকর্মী রয়েছেন কারাগারে। এমন অবস্থায় নতুন করে দলের জাতীয় কাউন্সিল করার মতো পরিস্থিতি নেই। তাই এখন স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির শূন্যপদ পূরণের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পরামর্শ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছি আমরা। অনুমতি পেলেই শূন্যপদগুলো পূরণ করা হবে।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করেছিল বিএনপি। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় নির্বাহী কমিটি তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হবে এবং পরবর্তী জাতীয় নির্বাহী কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত এ কমিটিই দায়িত্ব পালন করবে।

কমিটি ঘোষণার সময়ই ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির দুটি পদ ফাঁকা ছিল। বাকি ১৭ সদস্যের মধ্যে তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ ও এমকে আনোয়ার মারা গেছেন। ফলে বর্তমানে পাঁচটি পদ ফাঁকা। লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া অসুস্থতার কারণে নিয়মিত সময় দিতে পারছেন না। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ কমিটি ঘোষণার আগে থেকেই ভারতের শিলংয়ে আছেন। তিনি কমিটির একটি বৈঠকেও যোগ দিতে পারেননি।

সূত্র জানায়, মঙ্গলবার গুলশান কার্যালয়ে নীতিনির্ধারকদের এক বৈঠকে দলের জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে অলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটির একজন সিনিয়র সদস্য বিষয়টি বৈঠকে তোলেন। তবে অন্য সদস্যদের এ ব্যাপারে আগ্রহ না থাকায় এ নিয়ে বেশি আলোচনা হয়নি।

বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির শূন্যপদ পূরণের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহাসচিবকে নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দেখা করতে পারেন। সে সময় চেয়ারপারসনের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়েও আলাপ করার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার কথা ভাবছেন। এ নিয়ে ওই দুই নেতা তাদের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথাও বলেছেন।

সব মিলিয়ে স্থায়ী কমিটিতে সাতটি পদ ফাঁকা হচ্ছে। এসবের অন্তত পাঁচটিতে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। বাকি দুটি পদ ফাঁকাই রাখা হতে পারে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির শূন্যপদে আসতে পারেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সেলিমা রহমানের মতো প্রবীণ নেতারা।

একটি পদে জিয়া পরিবারের সদস্য ও তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবায়দা রহমানের অন্তর্ভুক্তির দাবি রয়েছে বিভিন্ন পর্যায় থেকে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হওয়া ক্লিন ইমেজের ডা. জোবায়দা দলকে গোছাতে পারবেন বলে ধারণা অনেকের।

গতবার কাউন্সিলের আগে স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আলোচনায় ছিলেন প্রবীণ নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। আলোচনায় ছিলেন ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও ড. ওসমান ফারুক। এ দুজনই এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তাই শূন্যপদে তাদের কারোরই অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা নেই।

ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টামণ্ডলী থেকে অন্তত দুজনকে স্থায়ী কমিটিতে আনা হবে। চট্টগ্রামের প্রবীণ বিএনপি নেতা এম মোরশেদ খান ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান জিয়া পরিবারের বিশ্বস্ত। তাদের কোনো একজনকে দেখা যেতে পারে স্থায়ী কমিটিতে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম চাচ্ছে দূরদর্শী ও মাঠে থাকার মতো নেতারা স্থায়ী কমিটিতে আসুক। সেই বিবেচনায় দুজন অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নেতাকেও এ পদে অন্তর্ভুক্ত করার কথা উঠছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কোনো মন্তব্য করতে চাননি।