‘বিএনপি আর কখনো ক্ষমতায় আসতে পারবে না’

বিএনপি-জামায়াতকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ এই স্বাধীনতা বিরোধী, দুর্নীতিবাজ, আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা এবং যুদ্ধাপরাধীদের মদদদানকারীদের কখনো ভোট দেবে না। এরা আর কখনো ক্ষমতায়ও আসতে পারবে না। রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

জাতির বীর সন্তানদের ত্যাগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সৃষ্টি করে এবং ত্যাগ স্বীকার করে, তাদের যে আন্তরিকতা থাকে, এটা উড়ে এসে অবৈধভাবে ক্ষমতায় জুড়ে বসাদের মধ্যে থাকে না। তারা ভোগ-বিলাসে জীবন কাটায়। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে।’

জিয়া পরিবারের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘পাচারের কথা আমাদের না। সিঙ্গাপুর ও আমেরিকার ফেডারেল কোর্টই বলেছে খালেদা জিয়ার ছেলেরা মানি লন্ডারিং করেছে, যে টাকা পরে আমরা উদ্ধার করেছি। তারা এখন কোন মুখে জনগণের কাছে ভোট চাইবে?’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি, আজকে দেশে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এবারের বিজয় দিবস ব্যাপকভাবে পালন হয়েছে। এদের তরুণ সমাজ মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার চেতনায় নতুনভাবে উজ্জীবিত হয়েছে, জাগ্রত হয়েছে। এটাই হচ্ছে আশার আলো। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, উন্নত সমৃদ্ধ হবে।’

বাংলার মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না উল্লেখ করে তিনি বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার সুফল আজ বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছেছে। এই সুফল নিয়ে, বাংলার মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কখনো কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধী এবং যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি, তাদের রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না। রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। দুর্ভাগ্য আমাদের! বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাজাপ্রাপ্ত সকল আসামিকে মুক্তি দেয়া হয়। বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসে আলবদর-আলশামস, যারা আমাদের মা-বোনদের পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছিল।

‘কি দুর্ভাগ্য আমাদের! যারা রক্ত দিল এবং যুদ্ধ করল, তারা অপরাধী হয়ে গেল। আর যারা হানাদার বাহিনীর দালালি করলো এবং গণহত্যা চালালো, তাদেরই ক্ষমতায় বসানো হলো। বসিয়ে ছিল কে? সেও একজন মুক্তিযোদ্ধা’ যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তাকে বড় খেতাবও দেয়া হয়েছিল। ছিল একজন মেজর, জাতির পিতাই তাকে পদোন্নতি দিয়ে দিয়ে বানালো মেজর জেনারেল। সেই বেইমান, মুনাফিক জিয়াউর রহমান এদেরকে (যুদ্ধাপরাধী) প্রতিষ্ঠিত করল বাংলাদেশে।’

তিনি বলেন, এরপর জাতির পিতার হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করা হল। বিদেশে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের যোগ্যতা ছিল- তারা খুনি। জিয়াউর রহমান একাই নয়, জিয়া-এরশাদসহ সবাই এদের তোষামোদি করেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরপর খালেদা জিয়া এসে আরও একধাপ উপরে উঠালো। তিনি এসে তাদের গাড়িতে তুলে দিলেন পতাকা, মন্ত্রী বানালো। আমি ওয়াদা দিয়েছিলাম জনগণের কাছে, ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব। আমরা সেই বিচার করেছি, রায় হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যারা স্বাধীন দেশের বিশ্বাস করে, তারা কী করে মেনে নিতে পারে- যুদ্ধপরাধীদের মন্ত্রী পরিষদের সদস্যই নয় শুধু, তাদের নিয়ে দলও গঠন করা। আবার তাদের ছেলেদের নিয়ে তাদের দলের সদস্য করেন। তাদের জ্ঞান বা বোধশক্তি নেই? তাদের বিবেক বলে কিছু নেই?’

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছেন এই খালেদা জিয়া। গাড়িতে আগুন, গাছপালা কাটাসহ কী না করেছেন তারা? আমরা গড়ি, তারা ধ্বংস করে। এভাবে তারা এদেশকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। জনগণ যখন প্রতিরোধ করেছে, তখন বাধ্য হয়েছে থামতে।’

জিয়া পরিবারের দুর্নীতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের মানিলন্ডারিং মামলায় সাত বছরের সাজা হয়েছে। দশ ট্রাক অস্ত্র, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা থেকে শুরু করে এদেশের যত অপকর্ম, দুর্নীতি তার সঙ্গে সে জড়িত।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একসময় তার ভাঙ্গা সুটকেস থেকে জাহাজ বের হয়েছে- কোকো-১, কোকো-২ নামে। শিল্প প্রতিষ্ঠান বেরিয়েছে। এখন আবার দেখি শপিং মল বের হচ্ছে, ফ্ল্যাট বের হচ্ছে। আর হাজার হাজার কোটি টাকা বের হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাংক থেকে যারা ৯৫০ কোটি টাকা লুটে নিয়েছে, তারা আবার স্বপ্ন দেখে ক্ষমতায় যাওয়ার, রাজনীতি করার!’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে শিক্ষা নিয়ে দেশের মানুষ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই উন্নয়ন যারা চান, তারা কি কখানো ওই যুদ্ধাপরাধীদের লালন-পালন করা এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে যারা মানুষ হত্যা করে, তাদেরকে কি কখনো সমর্থন করতে পারে? না ভোট দিতে পারে?’

তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার এগিয়ে যাওয়ার একটি মাত্র কারণ, জাতির পিতার গঠন করা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এই আওয়ামী লীগ ক্ষতায় থাকলে দেশের উন্নতি হয়।

রোববার বিকাল ৩টা ২০মিনিটে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা শুরু হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মৃণাল কান্তি দাস, ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, সাদেক খান, শাহে আলম মুরাদ, সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন।