বিএনপি জনগণকে কী আশার বাণী শোনাবে

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রূপকল্প- ২০৩০ এর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলা, সংসদ সদস্য হত্যাসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কাজে যারা পারদর্শী তারা আবার জনগণকে কী আশার বাণী শোনাবে? তাদের রূপকল্প মূলত আমাদের রূপকল্প- ২০২১ এর প্রতিচ্ছবি।’

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্বাধিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত নারী সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে একথা জানান প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উত্থাপিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রূপকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজন উপযুক্ত কৌশল, যোগ্য নেতৃত্ব, সুসংগঠিত দল- সর্বোপরি দেশবাসীর আস্থা। এজন্য আগে তাদের (বিএনপি) প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে, অতীতের নেতিবাচক রাজনীতি, অনিয়মতান্ত্রিক তৎপরতায় তারা আর ফিরে যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি তাদের রূপকল্প- ২০৩০ এ যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছে এর অধিকাংশই আমাদের সরকার ইতোমধ্যে পূরণ করেছে এবং আগামী অর্থবছরে আমরা বাকি কাজগুলো শেষ করব। রূপকল্প- ২০২১ বাস্তব রূপান্তরের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে আগামী দিনের বাংলাদেশকে বিশ্বে অগ্রগামী ও উন্নত জনপদে পরিণত করতে আমরা জাতিকে আমাদের এ মেয়াদের মধ্যেই রূপকল্প- ২০৪১ উপহার দেব।’

শেখ হাসিনা বলেন, রূপকল্পের নামে বিএনপিনেত্রী ক্ষমতায় গেলে তারা কী কী করবেন তার দীর্ঘ ফর্দ দেয়া হলেও কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে এটা বাস্তবায়ন করা হবে, কীভাবে অর্থায়ন করা হবে- তা স্পষ্ট নয়। এটি অনেকটা নির্বাচনী ইশতেহারের মতোই হয়ে গেছে। এ ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে হলে তাদের আগে ক্ষমতায় যেতে হবে। শুধু তাই নয়, পার্লামেন্টারি পদ্ধতি ও গণভোট পদ্ধতির পরিবর্তনসহ আরও যেসব মৌল পরিবর্তন তারা আনতে চাচ্ছেন, তার জন্য তো সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট লাগবে।’

তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ে বিএনপি তাদের শাসনামলে অনিয়ম-দুর্নীতি, জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতার যে দৃষ্টান্ত রেখেছে, এরপর ক্ষমতায় বাইরে থেকে জ্বালাও-পোড়াওসহ অনিয়মতান্ত্রিক তৎপরতা দিয়ে যে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করেছেন তা কাটিয়ে উঠে এতটা জনআস্থা অর্জন তাদের জন্য যে কঠিন চ্যালেঞ্জ তা বলাই বাহুল্য।’

সরকারি দলের সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামালের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুনি মোশতাক ও তার দোসর জিয়াউর রহমান ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড চালায়। বাংলাদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়। জিয়া নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে ঘোষণা দেন। আমি ও রেহানা দেশে ফিরতে চাইলে আমাদের বাধা দেয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত আমাদের বিদেশের মাটিতেই পড়ে থাকতে হয়। খুনি জিয়া আমাকে ও আমার বোন শেখ রেহানাকে দেশে আসতে দেয়নি। ওই সময় সমগ্র বাংলাদেশকেই কয়েদখানায় পরিণত করা হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসি। জিয়াউর রহমান আমাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি। কারণ বাংলাদেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মীবাহিনী সব বাধা উপেক্ষা করে আমাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন।’

তিনি বলেন, ‘দেশে এসে আমি যখন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে প্রবেশ করতে যাই, আমাকে ওই বাড়িতে যেতে দেয়া হয়নি। পিতা-মাতা, ভাইদের জন্য একটু দোয়া করার সুযোগও দেয়া হয়নি। পুলিশ পাহারা ও গেটে তালা দিয়ে আমার পথ রূদ্ধ করা হয়। আমি রাস্তার ওপরই বসে পড়ি এবং আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে মিলাদ ও দোয়া পড়ি।’

তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট শুধু যে ঘাতকরা হত্যাকাণ্ড করেছে তাই না, তারা বাড়িতে লুটপাটও করে। ১৯৮১ সালের ১২ জুন পর্যন্ত ওই বাড়িতে আওয়ামী লীগের কোনো মানুষকে ঢুকতে দেয়া হয়নি।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের একজন সাধারণ নাগরিকেরও অবাধে চলাচলের অধিকার থাকে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে আসার পর আমাকে ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়নি। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের ১২ জুন হঠাৎ করে এক ঘণ্টার নোটিশে বাড়িটি আমাকে তাড়াহুড়ো করে হস্তান্তর করা হয়। খুনি, ষড়যন্ত্রকারীরা জনমানুষের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। আর আমি ও আমার বোন শেখ রেহানা এর ব্যতিক্রম ছিলাম না।’