বিখ্যাত সেই যৌন কেলেঙ্কারির নায়িকা ক্রিস্টিন কিলারের মৃত্যু

গত শতাব্দীর ষাটের দশকে সারা বিশ্বে বিপুল আলোড়ন তুলেছিল এক যৌন কেলেংকারির ঘটনা। সে ঘটনায় এমনকি ব্রিটিশ সরকারের গদিও টালমাটাল হয়ে পড়েছিল।

সেই যৌন কেলেঙ্কারির নায়িকা ছিলেন ক্রিস্টিন কিলার।

ক্রিস্টিন কিলার মঙ্গলবার ৭৫ বছর বয়সে মারা গিয়েছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি গত কয়েক বছর ধরে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত জটিল ক্রনিক রোগে ভুগছিলেন।

ষাটের দশকে ক্রিস্টিন কিলার নামে এক তরুণী গুপ্তচর ব্রিটিশ মন্ত্রীর শয্যাসঙ্গিনী হয়েছেন, এ খবরে যুক্তরাজ্যের যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী জন প্রফিউমোকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। জানা গিয়েছিল, তার যোগাযোগ ছিল একজন রুশ গুপ্তচরের সঙ্গেও।

কীভাবে শুরু হয়েছিল ওই প্রণয় কাহিনি ও তা গড়িয়েছিল রাজনৈতিক এক কেলেংকারিতে? ক্রিস্টিন কিলারের বান্ধবী ম্যান্ডি রাইসের জবানিতে জানিয়েছেন সেই তথ্য।

১৯৬১ সালের গ্রীষ্মে অভিনেত্রী ও মডেল- ম্যান্ডি রাইস ডেভিস জানতে পারেন তার বান্ধবী ক্রিস্টিন কিলারর একজনের সঙ্গে মেলামেশা করছেন – যার নাম জন প্রফিউমো – সেসময়কার ব্রিটেনের যুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।
লন্ডনের একটি নৈশক্লাবে নর্তকী হিসাবে কাজ করতেন ম্যান্ডি আর ক্রিস্টিন – দুই বান্ধবী। ক্ষমতাবান লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা তাদের জন্য খুব অস্বাভাবিক কোনো ব্যাপার ছিল না।

ক্রিস্টিনের বয়স তখন ১৯, ম্যান্ডির ১৬। সুন্দরী দুই নর্তকীর সঙ্গে বন্ধুত্ব হল স্টিভেন ওয়ার্ড নামে এক হাড়ের ডাক্তারের, যাঁর ওঠাবসা ছিল সমাজের ওপরতলার বহু মানুষের সঙ্গে।

খুবই প্রভাবশালী, সুপুরুষ আর বুদ্ধিমান স্টিভেনের একটা শখ ছিল তার বন্ধুদের সঙ্গে তারই অন্য বন্ধুদের আলাপ পরিচয় করিয়ে দেওয়া। বিশেষ করে তার তরুণী বন্ধুদের সঙ্গে কিছুটা বয়স্ক ও ক্ষমতাশালী পুরুষদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে তিনি বিশেষ আনন্দ পেতেন ।

ওয়ার্ডের বন্ধুদের মধ্যে একজন ছিলেন লর্ডস সভার সম্মানিত সদস্য ভাইকাউন্ট অ্যাস্টর , যাঁর বাগানবাড়ি ক্লিভড্‌নে নিয়মিতভাবে অল্পবয়সী মেয়েদের থাকার জন্য তিনি আমন্ত্রণ জানাতেন । এই ক্লিভড্‌নেই বিংশ শতাব্দীর ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক মহলের অন্যতম সবচেয়ে কুখ্যাত এক প্রণয়ের সূচনা হয়েছিল।

ওই ক্লিভড্‌নের সুইমিং পুলে প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় সাঁতার কাটতে গিয়ে দৈবচক্রে তার মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয় ব্রিটিশ মন্ত্রী জন প্রফিউমোর সঙ্গে আর ওই সাক্ষাতের মধ্যে দিয়েই সরকারি মন্ত্রী প্রফিউমো আর ক্রিস্টিনের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রণয়।

একই সময়ে ম্যান্ডি আর ক্রিস্টিন স্টিভেনের আরেক বন্ধুর কাছে ঘনঘন যাতায়াত করতেন। তিনি ইউজেন আইভানফ – রুশ দূতাবাসে নৌবাহিনীর একজন উর্ধ্বতন অ্যাটাশে- আসলে এক গুপ্তচর, যিনি ছিলেন দারুণ আকর্ষণীয় এক মানুষ।

ক্রিস্টিন আর ইউযেন আইভানফ মাত্র একটা রাত একসঙ্গে কাটিয়েছিলেন। এর কিছুদিন পরেই জন প্রফিউমোর সঙ্গে ক্রিস্টিনের সম্পর্কের ইতি ঘটে – এবং সেটা ঘটে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশেই । এই কাহিনির ইতিও সেখানেই ঘটার কথা ছিল। কিন্তু সরকারের একজন মন্ত্রী এবং সোভিয়েত এক গুপ্তচরের সম্পর্ককে ঘিরে নানা রসালো গুজব তখন লন্ডনের বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে।

ঘটনা কাগজে প্রকাশ হওয়ার পর জন প্রফিউমোর জন্য গোটা ব্যাপারটা হয়ে দাঁড়াল প্রচন্ড অস্বস্তির। সংসদের কমন্সসভায় উঠে দাঁড়িয়ে জন পুরোপুরি অস্বীকার করলেন ক্রিস্টিনের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা।

কিন্তু ৩ মাস ধরে ক্রমাগত চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত ৫ই জুন পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন জন প্রফিউমো। স্বীকার করতে বাধ্য হলেন যে ক্রিস্টিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে তিনি আসলেই মিথ্যে কথা বলেছিলেন।
তিন দিন পর গ্রেপ্তার হলেন স্টিভেন ওয়ার্ড।

তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলা ছিল সংবাদমাধ্যম ও জনসাধারণের জন্য খুবই মুখরোচক। কারণ ওই মামলায় সাক্ষী দিতে আসতেন তার সুন্দরী, তরুণী বন্ধুরা- সেখানে তারা শোনাতেন সমাজের ক্ষমতাশালী মানুষদের নিয়ে নানাধরনের যৌন পার্টির নানা ন্যাক্কারজনক ও রসালো ঘটনার বিস্তারিত। আর মানুষজন আদালতের বাইরে ভিড় করত কেলেংকারির নায়ক-নায়িকা নামীদামী এসব মানুষদের এক নজর দেখার জন্য।
এই ঘটনার জেরে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করেন স্টিভেন ওয়ার্ড।

সূত্র : বিবিসি ও এমএসএন