বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি : আরও সময় পেল রাষ্ট্রপক্ষ

অধস্তন (নিম্ন) আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি গেজেট আকারে প্রকাশ সংক্রান্ত মামলার শুনানি আরও দুই সপ্তাহ সময় পেল রাষ্ট্রপক্ষ। রোববার (৬ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এই আদেশ দেন।

আদালতের শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। শুনানির সময় আদালত বলেন, ‘আমরা তো আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসতে চাই। আইনমন্ত্রী অসুস্থ এটা পেপার পড়ে জেনেছি। ওনি (আইনমন্ত্রী) অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন নাকি বাসায় ছিলেন। আমরা তো দেখতে যেতে পারতাম।’
মামলার খসড়া প্রধান বিচারপতির কাছে হস্তান্তরের পর তা গেজেট আকারে প্রকাশ সংক্রান্ত বিষয়ে গত ২৩ জুলাই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। তারপর সেটা আবারও পরবর্তী শুনানির জন্য আজ (৬ আগস্ট, রোববার) দিন ঠিক করেন আদালত।

এর আগে অধস্তন (নিম্ন) আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি গেজেট আকারে প্রকাশ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করার জন্য গত ৩ আগস্ট বিকেলে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে আইনমন্ত্রীর বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আইনমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় নির্ধারিত দিনে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়নি।

তারও আগে ৩০ জুলাই শুনানিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার খসড়া গ্রহণ করেনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ওইদিন খসড়ার বিভিন্ন ধারার অসঙ্গতি তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেন, আমার সঙ্গে আলোচনা করে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, সব অসঙ্গতি দূর হবে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের প্রণীত এই খসড়ায় সেটার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। কেন আপনারা পুরোপুরি ইউটার্ন নিয়ে এ ধরনের একটা খসড়া প্রণয়ন করলেন।

একই সঙ্গে খসড়া নিয়ে আইনমন্ত্রী, আপিল বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ড্রাফটিং উইংয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেছেন প্রধান বিচারপতি। সেদিন আদালত বলেছিলেন, সপ্তাহের যেকোনো দিন বৈঠকের দিনক্ষণ ঠিক করতেও বলেছেন অ্যাটর্নি জেনারেলকে। তার আগের বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ খসড়া হস্তান্তর করেন আইনমন্ত্রী।

২৩ জুলাই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের এই বেঞ্চে বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে মামলার শুনানিতে সর্বশেষ এক সপ্তাহ সময় দেন আদালত। ২০ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, চলতি সপ্তাহ নাগাদ বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি তৈরির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

তারপর ২৭ জুলাই প্রধান বিচারপতির খাস কামরায় তার সঙ্গে আবারও দেখা করেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। ওইদিন তিনি জানান, অধস্তন (নিম্ন) আদালতের বিচারকদের চাকরি সংক্রান্ত শৃঙ্খলাবিধির খসড়া প্রধান বিচারপতির কাছে জমা দিয়েছি। এখন উনি (প্রধান বিচারপতি) সেটা দেখবেন, তারপর নিয়ম অনুযায়ী খসড়াটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। প্রধান বিচারপতির যদি কোনো বিষয়ে সুপারিশ থাকে তবে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। তিনি এ বিষয়টি দেখবেন এবং সেটার গেজেট চূড়ান্ত আকারে প্রকাশ করা হবে।

তবে এর আগেও গেজেট প্রকাশে দফায় দফায় সময় নেয় সরকার। তারও আগে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর তলবও করেছিলেন আপিল বিভাগ। ২০১৬ সালের ৭ নভেম্বর বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা ২৪ নভেম্বরের মধ্যে গেজেট আকারে প্রণয়ন করতে সরকারকে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি আপিল বিভাগ বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সংক্রান্ত চারটি বিধিমালা সাতদিনের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশের নির্দেশ দেন। তবে এ সংক্রান্ত মামলাটি এখনও আপিল বিভাগে বিচারাধীন। ১২ দফা নির্দেশনার যেসব দফা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য তাগিদ রয়েছে।