বিজেপির ডাকাতদের দিদি ভয় পায় না, মোদিকে মমতার জবাব

ভারতের লোকসভা নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাকযুদ্ধে জড়াচ্ছেন দেশটির বাঘা বাঘা নেতারা। তারা ‘রাজপথের যুদ্ধ’ জমিয়ে তুলেছেন। কেউ কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলছেন না। কটাক্ষ ও তির্যক আক্রমণ শানাচ্ছেন পরস্পরের বিরুদ্ধে। প্রতিপক্ষ নেতা বা নেত্রীকে লক্ষ্য বানিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করছেন। এবার সেই মিছিলে যোগ দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে তিনি বলেছেন, বিজেপির ডাকাতদের দিদি ভয় পায় না; বরং রুখে দাঁড়ায়। নরেন্দ্র মোদির কটাক্ষের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। খবর জিনিউজের।

মোদির উদ্দেশে তিনি বলেন, দিদির সারা শরীর মারে ক্ষতবিক্ষত। আপনাদের মতো ডাকাতদের দিদি ভয় পায় না; বরং দিদি ডাকাতদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এত আন্ডারএস্টিমেট (ছোট ভাবার) করার কোনো কারণ নেই।

রোববার ময়নাগুড়ির চূড়াভাণ্ডারের জনসভায় তিনি মোদিকে ‘বসন্তের কোকিল’ আখ্যা দেন। বলেন, ‘মোদি ভোটের সময় বসন্তের কোকিলের মতো আসেন। নাটক করেন।’

মমতার বক্তৃতায় মোদির স্লোগান চৌকিদারের সমালোচনাও উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ‘মোদি সাড়ে চার বছর বিদেশে ঘুরেছেন, ছয় মাস ধরে চৌকিদার সেজেছেন। ভোটের পর চৌকিদারের চৌকি থাকবে, দ্বার থাকবে না। কারণ আমরা আসল চৌকিদার চাই- নকল চৌকিদার নয়।’

প্রসঙ্গত রোববার সকালে কোচবিহারে রাসমেলার মাঠে এক নির্বাচনী সভায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেন নরেন্দ্র মোদি। বলেন, মোদির স্লোগান শুনলে একজনের ঘুম ভেঙে যায়। তিনি পশ্চিমবঙ্গের দিদি, তিনি আমাকে ভয় পান। বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গকে দিদি ও ভাইপোর জুটি গুণ্ডা, তোলাবাজ, অনুপ্রবেশকারীদের স্বর্গরাজ্য বানিয়ে তুলেছেন। এতে করে রাতে শান্তিতে ঘুমোতে পারছেন না তিনি।’

এর জবাব দেন মমতা ব্যানার্জি। লোকসভা নির্বাচনে অযোগ্যদের মোদি প্রার্থী করেছেন মন্তব্য করে মমতা বলেন, ‘বিজেপি কোচবিহারে এক অস্ত্র বিক্রেতাকে প্রার্থী করেছে। জঞ্জাল বলে তাকে আমরা দল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। তাকেই এখন বিজেপি কোলে নিয়ে নাচছে।’

মমতা যোগ করেন, ‘আসলে বিজেপির লোকই নেই। ওরা মানুষের জন্য কাজ করে না।’

মোদি সরকারের সমালোচনা করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে মোদি কী করেছেন, তার জবাব তাকে দিতে হবে।

সার না পেয়ে ও দ্রব্যের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কৃষক আত্মহত্যা করেছে উল্লেখ করে মমতা বলেন, মোদির আমলে দুই কোটি চাকরি গেছে। ১২ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। অথচ বাংলার কৃষক ভালো আছেন। গত ৫ বছরে এক কোটি নতুন কর্মসংস্থানও হয়েছে।

৫০০ ও এক হাজার টাকার নোট বাতিলের প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘নোটবন্দির নামে জনগণের টাকা লুটে সেই টাকায় ক্যাডারদের রাস্তায় নামিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করছেন মোদি।’

মোদি থেকে অমিত শাহ বিজেপির সবাই বারবার পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি চালুর কথা বলছেন। জবাবে মমতা বলেন, ‘শুনে রাখুন- এখানে এনআরসি করতে দেব না।’

মোদি যে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা বলেছেন, সেই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘জওয়ান মেরে জওয়ান প্রেম দেখাচ্ছে বিজেপি! সেনাবাহিনীর নামে মিথ্যে কথা বলছে।’

প্রসঙ্গত এবার সাত ধাপে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রথম দফায় আগামী ১১ এপ্রিল ২০টি রাজ্যের ৯১ আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে। ১৮ এপ্রিল দ্বিতীয় ধাপে ১৩ রাজ্যের ৯৭ আসনে, ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ধাপে ১৪ রাজ্যের ১১৫ আসনে, ২৯ এপ্রিল চতুর্থ ধাপে ৯টি রাজ্যের ৭১ আসনে, ৬ মে পঞ্চম ধাপে ৭ রাজ্যের ৫১ আসনে, ১২ মে ষষ্ঠ ধাপে ৭ রাজ্যের ৫৯ আসনে এবং ১৯ মে সর্বশেষ ধাপে ভোট হবে ৮ রাজ্যের ৫৯ আসনে।