বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের রাখাইন এখন ভুতুড়েপল্লী

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের অনাবাদি জমি, আগুনে পুড়ে যাওয়া গ্রামগুলোতে এখন ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ঘরবাড়ি, আবাদি, অনাবাদি জমিতে দেখা যাচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষত। সেনাবাহিনীর অভিযানের পর কিছু কিছু এলাকায় এখনো অনেক রোহিঙ্গা আটকা পড়ে আছেন; বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য অর্থ এবং সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।

রোববার মিয়ানমার সেনাবাহিনী বিদেশি গণমাধ্যমের কর্মীদের বিরল এক সফরে নিয়ে গেছে সেখানে। রাখাইন সহিংসতার কেন্দ্রস্থল মংডু জেলায় সেনা হেলিকপ্টারে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সাংবাদিকরা দেখেছেন আটকে পড়া মানুষের অবর্ণনীয় দুর্দশা। রোহিঙ্গা গ্রাম ও ধানক্ষেতগুলো কালো ক্ষত নিয়ে সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর ধ্বংসযজ্ঞের জানান দিচ্ছে।

সেনাবাহিনীর পোড়া মাটি অভিযানের মুখে গত আড়াই মাসে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনে পাঠ্য বইয়ের উদাহরণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার রাখাইনে নৃশংসতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সংঘাতপূর্ণ এলাকায় চলাচল ও প্রবেশ ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রিত। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে ব্যতিক্রমী সফরও হয় মাঝে মাঝে।

সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার, সীমান্ত পুলিশের কড়া নজরদারির মাঝে রোববার বিদেশি সাংবাদিকরা রাখাইনের সৈকতের নিকটবর্তী আলে থ্যান কিয়াও গ্রামে শরণার্থী শিবিরে কয়েক শ’ রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছেন। এই রোহিঙ্গারা বলছেন, জলপথ পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশি বাংলাদেশে পালানোর আশা করছেন তারা।

ভয়াবহ সহিংসতা শেষ হয়ে গেলেও এখনো যারা রাখাইন ছাড়তে পারেননি তারা বলছে, তারা আটকা পড়ে আছেন। নৌকায় নাফ নদী পাড়ি দেয়ার জন্য ৫০ ডলার সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় মংডুতে আটকা আছেন তারা।

রাখাইনের অধিকাংশ রোহিঙ্গা ব্যবসায়ী এবং ভূমি মালিক বিতাড়িত হয়েছেন। মংডুর ২৫ বছর বয়সী রোহিঙ্গা যুবক ওসোমা বলেন, আমরা মাছ ধরা এবং জমি চাষের কাজ করতাম। কিন্তু বর্তমানে মালিকরা আমাদের কাজে নেন না।

তিন সন্তানের মা এক নারী, কাঁধে এক মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে পথ চলছেন। তিনি বলেন, তার পরিবার নিশ্চিত ছিল না যে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে তাদের জীবন ভাল হবে। বার্তাসংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, কিন্তু যারা এখানে আগে থেকেই আছে আমরা তাদের সঙ্গে থাকতে চাই।

মিয়ানমারের সরকারি তথ্য বলছে, দেশটির মোট ১১ লাখ রোহিঙ্গার তিন চতুর্থাংশের বসবাস ছিল রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের মংডু জেলায়। দাতা সংস্থাগুলো বলছে, বর্তমানে সেখানে অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে মাত্র দেড় লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন।

মংডুর আবাদি জমিগুলোতে কাজের জন্য স্থানীয় শ্রমিকদের পাওয়া যাচ্ছে না। মিয়ানমার বলছে, রাখাইনের পরিত্যক্ত ৭০ হাজার একর জমি চাষাবাদের জন্য দেশের অন্য প্রান্ত থেকে শ্রমিকদের আনা হচ্ছে। দেশটির ওপর ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোববার বিদেশি সাংবাদিকদের রাখাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। বুধবার মিয়ানমার সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের।

মার্কিন এই প্রভাবশালী কূটনৈতিক মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। এর আগে টিলারসন রাখাইন সঙ্কটের জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে দায়ী করেন।