বিদেশি কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে বিএসইসির উদাসীনতা

সরকার বিদেশি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নিলেও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উদাসীনতায় তা আলোর মুখ দেখছে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বারবার তাগাদা দেয়া হলেও বিদেশি কেম্পানিগুলোকে কীভাবে তালিকাভুক্ত করা যায় সে বিষয়ে কোনো সুপারিশ বা জবাব দেয়নি বিএসইসি। শেয়ারবাজারের স্বার্থে সরকারের এমন উদ্যোগে বিএসইসির নীরবতাকে সংস্থাটির চরম ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, দেশের শেয়ারবাজারের স্বার্থে এমন উদ্যোগে বিএসইসির নীরব থাকা কিছুতেই উচিত হচ্ছে না।

তাদের দাবি, বর্তমানে শেয়ারবাজারের গভীরতা খুব বেশি নয়। ভালো কোম্পানি বিশেষ করে বিদেশি কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে বাজারের গভীরতা বাড়বে। শক্তিশালী হবে বাজারের ভীত। ইতিবাচক প্রভাব পড়বে সার্বিক শেয়ারবাজারে, যার সুফল পাবেন বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে তাগাদা দেয়ার পরও বিএসইসির কোনো সাড়া না পেয়ে গত ৩১ জুলাই আবারও বিদেশি কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে সুপারিশ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তাগাদা দেয়া হয়েছে। সহকারী সচিব মো. আবুল কাসেম স্বাক্ষরিত ওই তাগিদ পত্রে সাত কার্যদিবসের মধ্যে সুস্পষ্ট সুপারিশসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে কীভাবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে গত ২০ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিএসইসিকে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে কীভাবে তালিকাভুক্তি করা যায় সে বিষয়ে সুপারিশ চেয়ে ১৫ কার্যাদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

কিন্তু সময় অতিক্রান্ত হলেও বিএসইসি এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে মন্ত্রণালয় থেকে বিএসইসিকে আবারও তাগিদ দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশে অনেকগুলো বহুজাতিক কোম্পানি ব্যবসা করলেও তারা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। সরকারি কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি দেশে কর্মরত বিদেশি কোম্পানিগুলোর শেয়ার ছাড়ার জন্য বার বার উদ্যোগ নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। মূলত শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির উদাসীনতার কারণেই পদক্ষেপটি আলোর মুখ দেখছে না।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সরকার বিদেশি কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনতে আনেকবার উদ্যোগ নিয়েছে। বিদেশি কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনতে আট মাস আগে একটি বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকের পর বিএসইসিকে এ বিষয়ে সুপারিশ আকারে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় বিএসইসি থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তাই বিএসইসিকে আবারও তাগিদ দেয়া হয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে নিঃসন্দেহে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ বাজারের পরিসর বাড়ানোর জন্য ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার দরকার আছে। তবে বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাজারে আনতে হবে। তাদের ট্যাক্স সুবিধা বাড়ানো যায় কি না সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে।

মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ চাওয়ার পরও বিএসইসি কোনো জবাব না দেয়ায় বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, কীভাবে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে সুপারিশ তৈরি করতে তো এতো বেশি সময় লাগার কথা নয়। বিএসইসি থেকে সুপারিশ না পাঠানো কিছুতেই ঠিক হচ্ছে না। যেটাই হোক বিএসইসির একটি মন্তব্য পাঠানো উচিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড পাবলিক পলিসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ খুবই ভলো পদক্ষেপ। ভালো বিদেশি কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা গেলে বাজারের গভীরতা বাড়বে এবং বাজারের উন্নয়নে সহায়ক হবে।

তিনি আরও বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হতে চায় না। না হওয়ার পিছনে কোম্পানিগুলো এক ধরনের ব্যাখ্যা দেয়, আবার পলিসি মেকাররা এক ধরনের ব্যাখ্যা দেয়। বাস্তবতা হলো তালিকাভুক্ত হলে স্বচ্ছতা বাড়বে। তাই বিদেশি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির জন্য সরকারের আরও জোরাল ভূমিকা পালন করা উচিত।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা খুবই ভালো পদক্ষেপ। এতে বাজার শক্তিশালী এবং গভীরতা বাড়বে। ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে ভালো বিনিয়োগকারীও বাজারে আসবেন।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে (বিদেশি কোম্পানি তালিকাভুক্ত) প্রথমে যে পদক্ষেপটা নেয়া যেতে পারে তাহলো বিদেশি অনেক কোম্পানির শেয়ার সরকারের হাতেও আছে, প্রথমে এখান থেকে শেয়ার ছেড়ে দিতে হবে। পাশাপাশি চিঠি চালাচালি না করে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে কিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে তালিকাভুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে তারা যদি ব্যবসা বাড়াতে চায়, তাহলে অবশ্যই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে এ ধরনের শর্তজুড়ে দিতে হবে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তির বিষয়ে মন্ত্রণালয় সুপারিশ চেয়ে যে চিঠি দিয়েছে তার জবাব দেয়া হয়েছে কিনা সঠিক বলতে পারছি না। আর নতুন করে যদি কোনো সুপারি মন্ত্রণালয় থেকে চাওয়া হয়, তবে অবশ্যই তার উত্তর দেয়া হবে। জাগো নিউজ