বিদেশি চ্যানেলের বদলে কী বিজ্ঞাপন পাবে দেশি চ্যানেলগুলো?

বাংলাদেশে ১লা এপ্রিল থেকে ডাউনলিঙ্ক করা বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।।

শনিবার (৩০শে মার্চ) এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, এপ্রিল থেকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করা হলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।

তথ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করা বন্ধ করা হলে দেশীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপনের হার বাড়বে এবং দেশের টেলিভিশন শিল্প আর্থিকভাবে লাভবান হবে।

এর আগেওএ ধরণের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তাতে বিদেশী চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ হয়নি।

বিজ্ঞাপন শিল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা মনে করেন এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হলে দেশের টেলিভিশন শিল্প যে খুব বেশি লাভবান হবে, তাও নয়।

বিজ্ঞাপন নির্মাতা সংস্থা গ্রে অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেডের কান্ট্রি ডিরেক্টর গাউসুল আজম শাওন বলেন, ”বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করে দিলে ঐ অর্থের পুরো অংশই যে বাংলাদেশের টেলিভিশন খাতে প্রবাহিত হবে, সে ধারণা অমূলক”।

“প্রশ্ন হলো, যে টাকাটা একটি প্রতিষ্ঠান বিদেশি চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য খরচ করছে, সেই টাকা খরচ করার যদি সুযোগ না থাকে তাহলে তা দেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য খরচ করা হবে কিনা।”

মি. শাওন মনে করেন বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখে, বিজ্ঞাপন দেয়ার সুযোগ না থাকলে সেই অর্থের কিছু অংশ দেশের বাজারে ফেরত আসতে পারে; তবে শতভাগ নয়।

“বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিলে তা যে পরিমাণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারতো, বাংলাদেশের চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিয়ে যদি সেই পরিমাণ মানুষের কাছ পর্যন্ত পৌঁছানো না যায় তাহলে হয়তো প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপনের জন্য ঐ পরিমাণ খরচই করবে না।”

তবে বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে চ্যানেলগুলোর দূরদর্শিতা এবং গবেষণার অভাবকে দায়ী করেন মি. শাওন।

“একটি চ্যানেল যদি তাদের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দর্শক আকর্ষণ করতে না পারে তাহলে বিজ্ঞাপনদাতারাও ঐ চ্যানেলের পেছনে টাকা লগ্নি করতে চাইবে না।”

মি. শাওন মনে করেন চ্যানেলের কাছ থেকে দর্শকরা কী চায়, সে বিষয়ে গবেষণা করা হয় না বলেই টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দর্শক আকর্ষণ করতে পারছে না এবং এর কারণে বিজ্ঞাপনদাতারাও দেশের টেলিভিশন চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

“ভারতের জনপ্রিয় চ্যানেলগুলো প্রতিদিন রিসার্চ করে যে তাদের দর্শক কী দেখা বাড়িয়ে দিলো, কী দেখা কমিয়ে দিলো। সেদিক থেকে হিসেব করলে আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে দর্শকদের প্রত্যাশার প্রতিফলন হয় না একেবারেই।”

মি. শাওন বলেন, “টেলিভিশনগুলো যদি দর্শককেন্দ্রিক অনুষ্ঠান তৈরি করতে পারে, তাহলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনে বেশী অর্থ ব্যয় করে হলেও টেলিভিশনেই বিজ্ঞাপন দেবে।”

টেলিভিশনের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি কমেছে কেন?

ইন্টারনেট এবং সামাজিক মাধ্যমের ব্যাপক প্রসারের সাথে সাথে টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব আগের চেয়ে কমে গেছে বলে জানান বিভিন্ন বিজ্ঞাপন নির্মাণ সংস্থায় কাজ করা ব্যক্তিরা।

বিজ্ঞাপন নির্মাণ সংস্থা ইন্টারস্পিডের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর সাব্বির হোসেন বলেন, “ভিন্ন ভিন্ন পণ্যের জন্য ভিন্ন ধরণের এবং ভিন্ন মাধ্যমের বিজ্ঞাপন তৈরি করা হয়। তবে গত কয়েকবছরে টেলিভিশনের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করার হার কমে গেছে।”

মি. হোসেন বলেন ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমের প্রসার হওয়ায় টেলিভিশনে প্রচারের জন্য ভিডিও তৈরি করার চেয়ে অনলাইনের জন্য ভিডিও তৈরি করায় বেশী আগ্রহী থাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো।

“একটি বিজ্ঞাপন তৈরি ও তা বাজারে ছাড়ার ক্ষেত্রে প্রধান যে বিষয়টির দিকে নজর রাখা হয় তা হলো, বিজ্ঞাপনটি কত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে।”

দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জনপ্রিয়তা দিন দিন কমতে থাকায় টেলিভিশনের জন্য বিজ্ঞাপন নির্মাণ করার যৌক্তিকতাও কমছে বলে মনে করেন মি. হোসেন।