বিমান দুর্ঘটনা: নেপাল ট্যুর বাতিল করছেন পর্যটকরা

নেপালের কাঠমান্ডুতে অবস্থিত দেশটির একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ত্রিভূবনে বাংলাদেশি মালিকানাধীন বেসরকারি বিমান ইউএস বাংলার বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে অনেক পর্যটক নেপালে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশিদের মধ্যে এই হার বেশি।

ট্র্যাভেল এজেন্টরা বলছেন, বাংলাদেশের মধ্যেও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে অনেকেই ইউ-এস বাংলার টিকেট ফেরত দিয়ে অন্য কোন কোম্পানির ফ্লাইট নিচ্ছেন। আলিউল ইসলাম ভুঁইয়া নামক এক ব্যবসায়ী পরিবারসহ নেপাল বেড়াতে যাবেন বলে সব কিছু ঠিকঠাক করে ফেলেছিলেন।

কিন্তু কাঠমান্ডুতে বিমান দুর্ঘটনার পর পরিবারের সবাই মিলে সেই পরিকল্পনা ভয়ে বাতিল করে দিয়েছেন।

তিনি জানান, ছেলে আর মেয়ে দুই বাচ্চার ২৩ তারিখ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত স্কুল বন্ধ। এত অল্প সময়ে কোথায় যাওয়া যায়? আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে নেপালে যাবো। কিন্তু বাচ্চারা এবং আমার স্ত্রী এরা দুর্ঘটনার পর সেটি নিয়ে শোনার পরেই প্রোগ্রাম ক্যান্সেল করে দিয়েছে।

তিনি জানান, একটা ভুলের কারণে এত বড় একটা দুর্ঘটনা হল, এতগুলা প্রাণ চলে গেলো এতে ওদের মনের ভেতরে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। নেপালে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ভিসা জটিলতা কম। বিমান বন্দরে নেমেও ভিসা নেয়া যায়। আর বিমানে যাওয়া ও থাকা-খাওয়ার খরচ তুলনা মূলক বাংলাদেশের চেয়ে একটু বেশি।

এ কারণেই সবাই নেপাল ভ্রমণে যায়। কিন্তু বিমান দুর্ঘটনার পরে নেপাল বিমান বন্দর যে ঝুঁকিপূর্ণ, তা আবার বিশ্বের কাছে নতুন করে উঠে এসেছে। এজন্য নেপালে যাওয়া পর্যটকরা কাঠমান্ডুতে নেমে আর অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানে চলাচল করেন না। কষ্ট হলেও বাসে যাতায়াত করেন।

বাংলাদেশের কক্সবাজার ভ্রমণে যাতায়াত ভাড়া ও একটা ভালো হোটেল সহ সবমিলিয়ে যা খরচ নেপালে সেইরকম খরচে বিদেশ ভ্রমণ বিশেষ করে হিমালয়ের দেশ এমন অনেক কিছুর কারণেই অনেকে বাংলাদেশ থেকে নেপালে বেড়াতে যেতেন।

কিন্তু এখন শুধু বিমানে চড়ার আতঙ্ক নয়, এই দুর্ঘটনার পর পাহাড়ে ঘেরা ত্রিভুবন বিমানবন্দর যে বিশ্বের সবচাইতে বিপজ্জনক বিমানবন্দরের তালিকায় উঁচুর দিকে রয়েছে এমন খবর বের হওয়ার পর সেটিও চিন্তার বিষয় বলে জানালেন মি. ভুঁইয়া।

কিন্তু বিষয়টি কি আরো অনেকের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে?

জানতে কথা বলেছি ঢাকার কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সির সাথে। আকাশবারী হলিডেজ নামের একটি এজেন্সির সহকারী ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান বলছেন, তাদের ক্লায়েন্টদের অনেকেই নেপাল ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল করে অর্থ ফেরত নিয়েছেন। যারা নেপাল কাস্টোমার ছিল তাদের মধ্যে চারজন রিফান্ড নিয়েছে। এখন আর কাস্টোমার নেপাল যেতে চাচ্ছে না সেটা যে এয়ারলাইন্সই হোক না কেন।

ট্যুর অপারেটররা মনে করছেন, অন্তত কিছু দিনের জন্য হলেও নেপাল ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হবে বাংলাদেশীরা। কিন্তু বাংলাদেশের ভেতরেও বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে আপাতত অনেকেই পিছপা হচ্ছেন বলে তারা তথ্য দিচ্ছেন।

নিয়মিত বিমানে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ভ্রমণ করেন একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা শামিম আহমেদ। তিনি জানান, ১৯ তারিখ আমার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার কথা। এর মধ্যে দুর্ঘটনার কথা শোনার পর একটা ভয় কাজ করছে যে এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটলো আবার এখনই প্লেনে জার্নি করবো। তাই আপাতত সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবারে ঢাকায় না হয় বাসেই যাবো।

ট্র্যাভেল এজেন্টরা বলছেন, বিমান যাত্রার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মধ্যেও ডোমেস্টিক ফ্লাইটে অনেকেই ইউ-এস বাংলার টিকেট ফেরত দিয়ে অন্য কোন কোম্পানির ফ্লাইট নিচ্ছেন।

জাস ট্রাভেলস নামে একটি এজেন্সির সিনিয়র টিকেটিং ও রিজার্ভেশন অফিসার সাগর আহমেদ বলছেন, ডোমেস্টিকেও দেখা যাচ্ছে যে অনেকের টিকিট করা ছিল। সেগুলো তারা কেউ পুরো ক্যান্সেল করছেন বা বদলে অন্য এয়ারলাইন্সের টিকেট নিচ্ছেন।

ঠিক কী পরিমাণে টিকেট রিফান্ড দিতে হচ্ছে তা জিজ্ঞেস করলে মি. আহমেদ জানান, সেটি তার ক্ষেত্রে প্রায় ৩০ শতাংশের বেশি। তবে এই পরিস্থিতি একদম সাময়িক বলে মনে করছে ইউ-এস বাংলার কর্তৃপক্ষ। কোম্পানিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কারণে তাদের কাঠমান্ডু ফ্লাইট অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

তবে তাদের অন্য আর সকল ফ্লাইট ও কর্মকাণ্ড ঠিকঠাক মতোই চলছে।

তিনি বলছেন, এখন একটা আতঙ্ক তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। তার মানে এই না তারা ইউ-এস বাংলাকে পুরোপুরি ডিনাই করছে। আমাদের সময় ও নিরাপত্তা সব দিক দিয়ে একদম ঠিক ছিল এবং আছে। ১২ তারিখ যেটা ঘটেছে তা শুধুমাত্র দুর্ঘটনা।

তিনি বলছেন, ইউ-এস বাংলা নিয়ে কোন ধরনের আশংকা বোধ করছি না। এখন হয়ত পুরো এভিয়েশন নিয়ে আতঙ্ক শুরু হয়েছে যেমন মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনার পরও একইভাবে ভয় পেয়েছেন অনেকে।

টিকেট ফেরত ঠিক কতটা আসছে তার হিসেব ঠিক এখনি দিতে পারেননি মি. ইসলাম। তিনি বলছেন, তাদের মনোযোগ এখন মূলত দুর্ঘটনা-পরবর্তী বিভিন্ন বিষয়ের দিকেই রয়েছে।