বিরতি থেকে ফিরেই নেইমারের গোলে ব্রাজিলের লিড

মেক্সিকো-ব্রাজিল ম্যাচের প্রথমার্ধ ছিল ভারসাম্যপূর্ণ। দুই দল যথেষ্ট আক্রমণ করলেও গোল পায়নি। ০-০ নিয়ে বিরতিতে। কিন্তু বিরতি থেকে ফিরে তৃতীয় মিনিটেই নেইমার গোলের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন কুতিনহোকে। হয়নি। ৫১ মিনিটে নেইমার এবারের বিশ্বকাপে তার দ্বিতীয় গোলটি করলেন। তাতে সামারায় রাশিয়া বিশ্বকাপে সোমবার শেষ ষোলর চলমান ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে ১-০ গোলে এগিয়ে গেল ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল।

প্রথমার্ধের শুরু থেকে দুর্ধর্ষ গতিতে আক্রমণ করে যাওয়া মেক্সিকানদের কিছুটা ক্লান্ত করে তবেই চূড়ান্ত আক্রমণে গিয়েছিলেন নেইমাররা। কয়েকটি সুযোগ তাতে তৈরি হলেও গোল হয়নি। কিন্তু এবারের আসরে অনেকটা অনুজ্জ্বল উইলিয়ান পেনাল্টি বক্সের মধ্যে দুর্দান্ত একটু সুযোগ তৈরি করলেন। গোলমুখে অপেক্ষমান নেইমারকে নিচু করে ঠেলে দিলেন দ্রুত। চোখের পলকে গোলকিপার ওচোয়াকে সুযোগ না দিয়ে সেই বল জালে জড়িয়ে ১-০ গোলের লিড এনে দিলেন নেইমার। তাতে নেইমার ব্রাজিলের ইতিহাসের একটি অংশ হলেন, ঢুকলেন রেকর্ডের পাতায়। এটি বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ২২৭তম গোল। এতদিন টুর্নামেন্টের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলের মালিক জার্মানিকে নেইমারের গোলেই ছাড়িয়ে গেল ব্রাজিল।

মেক্সিকান গোলরক্ষক ওচোয়া বেশ সেভ করছিলেন। গোলশূন্য প্রথমার্ধ থেকে ফিরেই প্রবল আক্রমণ শুরু ব্রাজিলের। নেইমার কর্নার নিয়েছিলেন। ম্যাচ উইনার হিসেবে পরিচিতি পাওয়া কুতিনহো ছিলেন লক্ষ্য। কুতিনহোর শটের লক্ষ্যও ছিল ঠিক। কিন্তু গুইলেরমো ওচোয়া ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই বল সেভ করে দিলেন। কি হতাশা কুতিনহোর!

প্রথমার্ধের লড়াই হলো সমানে সমান

মেক্সিকোর প্রবল গতির জবাব শুরুতে দেয়নি ব্রাজিল। তাদের কিছুটা ক্লান্ত করে নিয়ে তারপর নেইমার-কুতিনহো-জেসুসরা আক্রমণের ঝড় বইয়ে দিলেন প্রতিপক্ষের উপর দিয়ে। মেক্সিকো শুরুতে গোলের সুযোগ পেয়েছে। এরপর একের পর এক আক্রমণে কয়েকটি সুযোগ তৈরি করেও ব্রাজিল গোল পায়নি। সামারায় সোমবার বিশ্বকাপের শেষ ষোলর ব্রাজিল-মেক্সিকো ম্যাচের প্রথমার্ধ তাই ০-০। গতিময় ফুটবল চলছিল। বিরতির পর কোন রোমোঞ্চ অপেক্ষায় কে জানে!

ম্যাচটা শুরুই হয়েছে দারুণ উত্তেজনায়। আক্রমণ, প্রতি আক্রমণ। তবে প্রথম সুযোগটা মেক্সিকো তৈরি করে। আন্দ্রেস গুয়ারদাদোর তোলা ক্রস পাঞ্চ করে লোজানোর নাগালের বাইরে পাঠান ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক আলিসন। প্রায় সাথে সাথেই জবাব দেন ব্রাজিলিয়ানরা। নেইমারের নেওয়া শট মেক্সিকান গোলকিপার ওচোয়াকে কাঁপিয়ে দেয়।

গতিময় খেলা শুরু থেকেই। রোমাঞ্চ ছড়ানো ইঙ্গিত। মেক্সিকো যেন শুরু থেকেই সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আক্রমণের সর্বোচ্চটা তখনো শুরু করেননি নেইমার-কুতিনহোরা। ব্রাজিলের এই আসরে খেলা দলগুলোর মধ্যে এই মেক্সিকানদেরই সবচেয়ে প্রতিভাবান বলতে হবে। প্রথম ২০ মিনিটে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষকেই ভালো দল মনে হয়েছে। ২২ মিনেটে তো হেক্টর হেরেরা প্রথম সুযোগে শট না নিয়ে গোলের একটি সম্ভাবনা নষ্ট করলেন।

কিন্তু এটা ব্রাজিল দল। ২৬ মিনিটে বাঁ দিক থেকে আক্রমণ করে নেইমার আতঙ্ক ছড়ালেন মেক্সিকোর বক্সে। এডসন আলভারেজকে আগেই ছিটকে ফেলেছিলেন। কিন্তু গোল করার জন্য ওটা ছিল কঠিন একটি অ্যাঙ্গেল। তবু নেইমার চেষ্টা করলেন। পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়ে যে শট নিলেন তা গোলকিপার ধরে ফেললেন। এরপরই নেইমারের ফ্রি-কিক থেকে উড়ে যাওয়া বল জেসুসের ছোঁয়া পেলেও ওচোয়া বাঁচিয়েছেন দলকে।

প্রথমার্ধের ২০/২৫ মিনিটের খেলা দেখে মনে হয়েছে মেক্সিকানরা যে প্রবল গতিতে শুরু করেছিলেন সেটারই জবাব ভিন্ন কৌশলে দিলেন ব্রাজিলিয়ানরা। সামারায় গরম খুব। আর্দ্রতাও বেশি। ব্রাজিল অপেক্ষাকৃত কম গতিতে আক্রমণে গিয়ে বল দখলে রাখছিল বেশি। মেক্সিকানদের দ্রুত ক্লান্ত করে দিয়ে তারপর যা করার কৌশল। এবং দেখা গেল প্রথমার্ধের শেষ ১৫ মিনিট ব্রাজিলই আক্রমণের পর আক্রমণ করে গেল। চাপে পড়ে গেল মেক্সিকো। গ্যাব্রিয়েল জেসুস বক্সে ঢুকে শট নিলেন। ওচোয়া দুর্দান্তভাবে ঠেকালেন। কিন্তু রাখতে পারলেন না। ব্রাজিলিয়ানের পরের দুর্বল শটটি গালার্দো ঠেকালেন। এরপর কুতিনহো দুর থেকে শট নিলেও তা ডিফেন্সে গিয়ে ফিরল।