বিলুপ্ত ধারা আরপিওতে সংযোজন তথ্যে উদ্বেগে বিএনপি

বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে বাদ দেয়া সাত ধারার অনুরূপ একটি ধারা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইন-আইরপিওতে সংযোজন করার চেষ্টা চলছে বলে তথ্য পেয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে বিএনপিতে। তারা এই উদ্যোগকে তাদের দলের দুই প্রধান নেতা বেগম খালেদা জিয়া তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হিসেবে দেখছে।

রবিবার নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ফখরুল। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার বিভিন্ন সংস্থাকে গিয়ে এই ধারা নিয়ে প্রতিবেদন করতে গণমাধ্যমকে চাপ দিচ্ছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা ঘোষণার আগে আগে বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এতে ৭ ধারাটি বাতিল করা হয়, যাতে বলা ছিল, রাষ্ট্রপতির আদেশ ৮ এর দায়ে দণ্ডিত, দেউলিয়া, উন্মাদ এবং দুর্নীতিপরায়ন ও কুখ্যাত ব্যক্তিদের বিএনপির সদস্য হতে পারবেন না।

এই ধারা বহাল থাকলে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের বিএনপির সদস্য হিসেবে থাকার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠত।

আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে আসছে, খালেদা জিয়ার সাজা হবে ধরে নিয়েই বিএনপি এই ধারাটি বাতিল করেছে। তাদের নেত্রীর দুর্নীতির বিষয়টি এভাবেই পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। আর এতে তারা যে দুর্নীতিবাজদের পক্ষে, সেই বিষয়টিও পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিয়েছে।

তবে ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার আগে সাত ধারা হঠাৎ বাতিল করা হয়নি। ২০১৬ সালে দলের জাতীয় সম্মেলনেই এই সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

ফখরুল বলেন, বিশ্বস্ত সূত্রে তারা জানতে পেরেছেন, বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে বিলুপ্ত ৭ নম্বর ধারার অনুরূপ একটি ধারা নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে আরপিও তে সংযোজন করার ‘অপচেষ্টা’ চলছে।

‘এরপর ওই ধারার দোহাই দিয়ে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরানোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

দুর্নীতির এক মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও অন্তত চারটি দুর্নীতির মামলাসহ ৩৪টি মামলা রয়েছে।

অন্যদিতে দুর্নীতির দুই মামলায় তারেক রহমানের মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও ২২ কোটি টাকারও বেশি জরিমানা হয়েছে। তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ছাড়াও মানহানি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তিসহ বিভিন্ন মামলার আসামি।

ফখরুল দাবি করেন, থেকে ৭ ধারা বিলোপ হরা হলেও গঠনতন্ত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের কথা বলা আছে। বলেন, “কাউন্সিলে দলীয় গঠনতন্ত্রের অংশ দলের সদস্য পদের আবেদনপত্র সংশোধন করে ‘আমি কখনই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না’ এই বাক্যটি সংযোজন করা হয়। আমাদের জানামতে কোন দলের গঠনতন্ত্রে সদস্য পদ লাভের জন্য এমন ঘোষণা দেয়ার বিধান নেই।’

৭ ধারা বাতিল নিয়ে ব্যাখ্যা নেই

ফখরুল তাদের গঠনতন্ত্রের আলোচিত ৭ ধারা কীভাবে বাতিল হয়েছে, সেটি বর্ণনা করলেও, কেন এই উদ্যোগ নেয়া হয়, সেটির কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিক্রমে সপ্তম ধারা বাতিলসহ দলের গঠনতন্ত্রে সর্বশেষ সংশোধন করা হয়। যা পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়।’

বিলুপ্ত ৭ ধারা নিয়ে ‘চক্রান্তে’ সরকার

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আকস্মিকভাবে কয়েকদিন ধরে বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা পরিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরই মধ্যে এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক ও সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ।’

‘এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সরকার তার বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিএনপির দলীয় গঠনতন্ত্র এবং নির্বাচন কমিশনের আরপিও সংক্রান্ত কিছু উদ্দেশ্যপূর্ণ রিপোর্ট গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করার জন্য মাঠে নেমেছে।’

‘সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো-বিএনপি গঠনতন্ত্র থেকে যে ধারা বিলুপ্ত করেছে তার সঙ্গে মিল রেখে অনুরূপ একটি ধারা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিওতে) অন্তর্ভূক্ত করার ক্ষেত্র তৈরি করা।’

‘বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে’ সরকারের ‘কোনো অশুভ নীল নকশার’ অংশ না হবার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।

ফখরুল বলেন, ‘বিএনপিকে বিপর্যস্ত করতে ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটছেন শেখ হাসিনা। মঈন-ফখরুদ্দীন যে কায়দায় বিএনপির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করেছিল সেই একই কায়দায় এখন পুনরায় বিছানো হচ্ছে ষড়যন্ত্রের জাল।’

‘বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অসংসদীয় কটুবাক্যের ধারাবর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন-বিএনপি গঠনতন্ত্রে ৭ ধারা পরিবর্তন করল কেন?’

‘প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্য উদ্ভট, অলীক ও অন্তসারশূন্য। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুধুমাত্র প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অসত্য, বানোয়াট অপপ্রচার।’

ফখরুল বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত থেকে দুর্নীতির দায়ে ১৩ বছরের সাজা পেয়েও আদালতকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করে আওয়ামী অবৈধ সরকারের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এখনো সংসদে, মন্ত্রিসভায় এবং আওয়ামী লীগে তার সদস্যপদ ও নেতৃত্ব বহাল রেখেছেন।’

‘অথচ সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র নিয়ে কাল্পনিক সিন্ডিকেট-সংবাদ পরিবেশন করার ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর একই রকম বক্তব্যে প্রমাণিত হয়-সরকার বিএনপি, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুটিল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।’