বিশ্বকাপ সেভাবে টানছে না ব্রাজিলিয়ানদের

বিশ্বকাপ শুরু হতে আর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি। ব্রাজিলের সামনে এবার ‘হেক্সা’ বা ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি। অনেকেই ভাবতে পারেন, বিশ্বকাপ সামনে রেখে ব্রাজিলিয়ানরা বুঝি খুব রোমাঞ্চিত। এমনটা ভাবলে ভুলই করবেন। বিশ্বকাপ নিয়ে এবার ব্রাজিলিয়ানদের আগ্রহ অনেক কম! দেখে মনে হবে ব্রাজিলিয়ানদের বিশ্বকাপ-উৎসবের সুর তাল-লয় কেটে গেছে!

বাছাইপর্বে দুর্দান্ত খেলেছে ব্রাজিল। তিতের স্কোয়াডে তারকারও অভাব নেই। কিন্তু ব্রাজিল দলের মার্চেন্ডাইজিং-পণ্য (জার্সি, স্কার্ফ, টুপি ইত্যাদি) বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, বিক্রি-বাট্টায় ভাটা চলছে। ব্রাজিল দলের স্মারক জার্সি কিংবা স্কার্ফ কেনায় কারও তেমন আগ্রহ নেই। এর মানে কি ব্রাজিলিয়ানরা নেইমারদের হাতে কাপ ওঠার সম্ভাবনা দেখছেন না? ব্যাপারটা তেমন কিছু না হলেও ফুটবল–পাগল হিসেবে পরিচিত ব্রাজিলিয়ানদের বিশ্বকাপ নিয়ে আগ্রহ নেই—এটা অবিশ্বাস্যই মনে হবে অনেকের কাছে।

জরিপে কিন্তু আনাগ্রহের কথাই উঠে এসেছে। ৬৬ শতাংশ ব্রাজিলিয়ানেরই বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। ১৪.৫ শতাংশ ব্রাজিলিয়ানই জানেন না এবারের বিশ্বকাপ কোথায় অনুষ্ঠিত হবে! তবে ব্রাজিলের পারানা ইনস্টিটিউটের চালানো একটি মন্তব্যনির্ভর জরিপে দুই-তৃতীয়াংশ ব্রাজিলিয়ান মনে করেন, শিরোপাটা নেইমারদের হাতেই উঠবে। নেইমার টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হবেন তা মনে করছেন জরিপের ৩৫ শতাংশ ব্রাজিলিয়ান। একই জরিপে ৩০ শতাংশ ব্রাজিলিয়ানের বিশ্বাস, এবার সেরা খেলোয়াড় হবেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

ব্রাজিলকে এখনো অনেকে ফুটবলের দেশ হিসেবেই চেনেন। বিশ্বকাপ নিয়ে এ দেশের মানুষের আবেগ নিয়ে নতুন করে বলারও কিছু নেই। কিন্তু এবার হঠাৎ করেই আগ্রহ কমে যাওয়ার নেপথ্য কারণটা সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানালেন সেরাফিম ফার্নান্দেজ। পেশায় তিনি একজন গাড়িচালক। ৬২ বছর বয়সী ফার্নান্দেজ এ জন্য দায়ী করেছেন দেশের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থাকে। প্রায় দুই বছর যাবৎ মন্দা চলছে ব্রাজিলে। এ ছাড়া রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি নিয়েও মানুষ বীতশ্রদ্ধ। ফার্নান্দেজ বলেন, ‘আগের মতো আগ্রহ আর নেই। মানুষ ভুগছে।’

চার বছর আগের টুর্নামেন্টে কিন্তু একেবারেই ভিন্ন দৃশ্য ছিল। দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ ঘিরে ব্রাজিলিয়ানদের আনন্দ-উল্লাসের কমতি ছিল না। রাস্তায় রাস্তায় হুল্লোড়-মাস্তি করেছেন ব্রাজিলিয়ানরা। ঘর-বাড়ির দেয়ালগুলো সাজানো হয়েছিল বাহারি সব ‘গ্রাফিতি’তে (দেয়ালচিত্র)। অনেকে ভাবতে পারেন, দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ বলেই হয়তো সেবার ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে উৎসবের মাত্রা বেশি ছিল। কথাটা ঠিক, আবার পুরোপুরি ঠিকও নয়। কারণ, বিশ্বকাপ এলেই ব্রাজিলে উৎসব শুরু হয়। ম্যুরাল, গ্রাফিতিতে ভরে যায় রাস্তাঘাট। এটা ব্রাজিলীয় সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু এবার সেই সংস্কৃতি যেন উধাও!

বিশ্বকাপ এলে রিও ডি জেনিরোয় একটি ‘স্ট্রিট পার্টি’র আয়োজন করা হয়, যার নাম ‘আলজেইরো’। ৪০ বছর ধরে এই পার্টি আয়োজন করা হচ্ছে ব্রাজিলে। কিন্তু অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো, এবার তা না–ও দেখা যেতে পারে! ‘আলজেইরো’কে ছেড়ে গেছে স্পনসর—পানীয় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যামবেভ। আয়োজকদের বিবৃতি, ‘অ্যামবেভের হতাশাজনক আচরণের পর আমরা এবার অনুষ্ঠানটি আয়োজনের জন্য লড়াই করছি।’
রিও ডি জেনিরোয় ফুটবল সরঞ্জাম বিক্রির দোকানপাটের অভাব নেই। বিশ্বকাপ এলেই বিক্রি-বাট্টা হু হু করে বেড়ে যায় সেখানে। কিন্তু এবার ভীষণ মন্দা চলছে ফুটবল সরঞ্জাম বিক্রির দোকানগুলোতে। পাওলো সান্তোস সিলভা নামে এক দোকানমালিকের উক্তি, ‘আগে ৫০০০ জার্সি কিনলেও বিক্রির নিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু এখন ঝুঁকি রয়েছে। তাই এক শ করে কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে। ব্রাজিল ম্যাচ জিতলে হয়তো দুই শ জার্সি কিনব।’

৬০ বছর বয়সী সিলভার মতে, বিশ্বকাপ নিয়ে ব্রাজিলিয়ানদের আগ্রহে ভাটা পড়ার নেপথ্যে অর্থনৈতিক মন্দাই একমাত্র কারণ নয়। গত বিশ্বকাপের লজ্জাজনক হারের পর রাশিয়ার টুর্নামেন্ট ব্রাজিলিয়ানদের আর সেভাবে টানছে না বলেই মনে করেন পাওলো সান্তোস সিলভা, ‘সেই হারটা ব্রাজিলিয়ানদের স্মৃতিতে খোদাই হয়ে গেছে।’