বিশ্বজয় করেছেন যে ভারতীয় সুন্দরীরা

১৯৯৫ সালে ‘মিস বাংলাদেশ’ খেতাব জয় করেছিলেন সাথী বিলকিস ইয়াসমিন। বাংলাদেশ থেকে ‘মিস বাংলাদেশ’ হয়ে তিনি প্রথম ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

অনেক বছর পর এবার ‘মিস বাংলাদেশ’ হয়ে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গেছেন জেসিয়া ইসলাম। তবে বাংলাদেশের জন্য প্রথম বা দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণ হলেও, বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় পাশের দেশ ভারত থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন নারী মুকুট জয় করেছেন। তাদের নিয়ে এ প্রতিবেদন।

রিটা ফারিয়া : উপমহাদেশের প্রথম ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ রিটা ফারিয়া। তিনি ১৯৬৬ সালে মিস ওয়ার্ল্ড খেতাব জয় করেন। অর্ধশতাব্দী আগে মিস ওয়ার্ল্ড মুকুটধারী রিটা তখন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ভারতীয় হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

মিস ওয়ার্ল্ড খেতাব জয়ের পর রিটা মিডিয়া জগতে না এসে চিকিৎসাশাস্ত্রে মন দেন। রিটা ফারিয়া ১৯৭১ সালে আয়ারল্যান্ডের চিকিৎসক ডেভিড পাওয়েলকে বিয়ে করে সেখানেই স্থায়ী হন। দুই সন্তান আর পাঁচ নাতি-নাতনি নিয়ে সুখে আছেন সাবেক এই বিশ্বসুন্দরী।

জিনাত আমান : জিনাত আমান ১৯৭০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নারী হিসেবে ‘মিস এশিয়া প্যাসিফিক’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে শিরোপা জয় করেন। ১৯৭১ সালে ‘হালচাল’ ছবিতে ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। পর্দায় নিজেকে খোলামেলাভাবে উপস্থাপন করে অবেদনময়ী রুপকে শিল্পে উন্নীত করেছিলেন তিনি।

চলচ্চিত্রজীবনে শশী কাপুর, দেব আনন্দ, অমিতাভ বচ্চন, সঞ্জয় খান, জিতেন্দ্র, ধর্মেন্দ্রর মতো নায়কদের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’, ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’, ‘ইনসাফ কি তারাজু’, ‘হরে রাম হরে কৃষ্ণ’, ‘কুরবানি’, ‘ডন’।

১৯৮৫ সালে ছোট ও বড় পর্দার অভিনেতা মাযহার খানের সঙ্গে বিয়ে হয় জিনাতের। ১৯৯৮ সালে স্বামীর মৃত্যু হয়। বর্তমানে দুই ছেলে আজান ও জাহানকে নিয়ে বসবাস করছেন তিনি।

ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন : ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন ১৯৯৪ সালে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ মুকুট জয় করার পর ব্যাপক খ্যাতি পান। পরে প্রায় অর্ধশত হিন্দি, ইংরেজি, তামিল ও বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। মণি রত্নমের তামিল ছবি ‘ইরুবর’ (১৯৯৭) ছবিতে নায়িকা হিসেবে প্রথম অভিনয় করেন।

প্রথম বাণিজ্যিক সাফল্য পান তামিল ‘জিনস’ (১৯৯৮) ছবিতে। তিনি সঞ্জয় লীলা বানসালী পরিচালিত ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ (১৯৯৯) ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউডে জায়গা করে নেন। ঐশ্বরিয়া রাই ২০০৭ সালের ২০ এপ্রিল অমিতাভ-জয়া বচ্চনের ছেলে অভিষেক বচ্চনকে বিয়ে করেন।

সুস্মিতা সেন : বাঙালি বংশোদ্ভূত বলিউড তারকা সুস্মিতা সেন ১৯৯৪ সালে ‘মিস ইউনিভার্স’ খেতাব জয় করেন। এরপর ১৯৯৬ সালে সুস্মিতা সেন মহেশ ভাট পরিচালিত ‘দস্তক’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি মডেলিং ও ফ্যাশন জগতে কাজ করেছেন এই সুন্দরী।

সুস্মিতা ৩৬টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনিত প্রথম হিট ছবি ‘বিবি নাম্বার ওয়ান’। ২০০০ ও ২০১০ সালে তিনি দুই কন্যাসন্তান দত্তক নেন। জীবনের ৪২ বছর পার করলেও এখন পর্যন্ত বিয়ের পর্ব সারেননি সুস্মিতা। দত্তক নেওয়া দুই মেয়ে রিনি ও আলিশাকে নিয়েই তার জগৎ।

ডায়ানা হেইডেন : ১৯৯৭ সালে তৃতীয় ভারতীয় হিসেবে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ খেতাব জয় করেন ডায়ানা হেইডেন। তিনিও পা রেখেছিলেন সিনেমা জগতে। ২০০৩ সালে তার অভিনীত ‘তেহজাব’ সিনেমা ব্যবসা করতে না পারায় বলিউডে আর এগোতে পারেননি হায়দরাবাদের মেয়েটি। পরে মার্কিন স্বেচ্ছাসেবী কলিন ডিককে বিয়ে করেন। এক কন্যাসন্তানের মা তিনি।

যুক্তামুখী : ১৯৯৯ সালে ভারতের হয়ে চতুর্থবার ‘মিস ওয়ার্ল্ড’-এর মুকুট পরেন যুক্তামুখী। ৬ ফুট ১ ইঞ্চি লম্বা এই বিশ্বসুন্দরীকে উচ্চতা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। ২০০২ সালে ‘পিয়াসা’ সিনেমা দিয়ে বলিউডে অভিষেক যুক্তামুখীর। বক্স অফিসে ছবিটি ছিল ‘সুপার ফ্লপ’।

এরপর কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করলেও সিনেমা জগতে স্থায়ী হতে পারেননি। চলচ্চিত্রে স্থায়ী হতে না পারার জন্য নিজের উচ্চতাই দায়ী বলে মনে করেন তিনি। প্রিন্স টুলি নামের এক শিল্পপতিকে বিয়ে করেন, কিন্তু স্বামীর নির্যাতনের কারণে সেই সংসার ভেঙে যায়। এক পুত্রসন্তান নিয়ে এখন তিনি সমাজসেবামূলক কাজে ব্যস্ত আছেন।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া : প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ২০০০ সালে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ খেতাব পান। ২০০২ সালে তামিল ‘ঠামিজান’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। তিনি সানি দেওলের বিপরীতে ‘দ্য হিরো’ ছবির মাধ্যমে ২০০৩ সালে বলিউডে প্রবেশ করেন।

একই সালে অক্ষয় কুমারের বিপরীতে ব্যবসাসফল ‘আন্দাজ’ ছবিতে অভিনয় করেন। ২০০৪ সালে ‘আন্দাজ’ ছবির জন্য সেরা নবাগতা অভিনেত্রী হিসেবে ‘ফিল্মফেয়ার’ পুরস্কার পান। ২০০৮ সালে ‘ফ্যাশন’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন।

২০১৬ সালে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ভারত সরকারের দেওয়া চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী অর্জন করেন। একই বছর ‘টাইম’ ম্যাগাজিন প্রকাশিত তালিকায় শীর্ষ ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় ছিল তার নাম।

লারা দত্ত : লারা দত্ত ২০০০ সালে ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতায় জয়ী হন। ২০০৩ সালে অক্ষয় কুমারের বিপরীতে ব্যবসাসফল ‘আন্দাজ’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন।

প্রথম ছবিতে অভিনয় করে তিনি সেরা নবাগতা অভিনেত্রী হিসেবে ২০০৪ সালের ‘ফিল্মফেয়ার’ পুরস্কার পান। লারা দত্ত এ পর্যন্ত ৩৩টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ২০১১ সালে তিনি ভারতের জনপ্রিয় টেনিস খেলোয়াড় মহেশ ভুপতিকে বিয়ে করেন। তাদের এক কন্যাসন্তান রয়েছে।

দিয়া মির্জা : দিয়া মির্জা ২০০০ সালে ‘মিস এশিয়া প্যাসিফিক’ খেতাব অর্জন করেন। দিয়া মির্জা ২০১৪ সালে দীর্ঘদিনের প্রেমিক প্রযোজক ও পরিচালক সাহিল সাংঘাকে বিয়ে করেন।

তিনি তার স্বামী সাহিল সাংঘার সঙ্গে বর্ন ফ্রি এন্টারটেইনমেন্ট প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। তাদের প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘লাভ ব্রেকআপস জিন্দেগি’ ২০১১ সালের ৭ অক্টোবর মুক্তি পায়। দিয়া মির্জা অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘রেহনা হ্যায় তেরে দিল মে’, ‘তুমসে নেহি দেখা’, ‘আলাগ’ উল্লেখযোগ্য।

নিকোল ফারিয়া : নিকোল ফারিয়া প্রথম ভারতীয় হিসেবে ২০১০ সালে ‘মিস আর্থ’ খেতাব পান। ২০১৪ সালে নারী নির্মাতা দিব্যা খোসলা কুমারের ‘ইয়ারিয়া’ সিনেমা দিয়ে তিনি বলিউডে পা রাখেন। এরপর ২০১৬ সালে তুরস্কের চলচ্চিত্র ‘বীর বাবা হিন্দু’তে অভিনয় করেন।