বিশ্বসেরা শিক্ষকের পুরস্কার পেলেন যিনি

প্রত্যন্ত একটি গ্রামে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান পড়াতেন তিনি। শিক্ষকতা করে যে টাকা উপার্যন করতেন তার আশি ভাগ গরীব দুঃখী মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। অথচ এই মানুষটিই জিতেছেন বিশ্বের সেরা শিক্ষকের পুরস্কার।

আফ্রিকার দরিদ্র দেশ কেনিয়ায় জন্ম গ্রহণ করা এই শিক্ষক পুরুস্কার হিসেবে পেয়েছেন এক মিলিয়ন ডলার।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন তার প্রতিবেদনে বলছেন, ক্যাথলিক চার্চকেন্দ্রিক ধর্মীয় গোষ্ঠী ফ্যান্সিসক্যানের সদস্য সেই শিক্ষকের নাম পিটার তাবিচি। রোববার দুবাইয়ে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বের সেরা শিক্ষক হিসেবে পিটার তাবিচির নাম ঘোষণা করা হয়। এসময় তাকে ভার্কি ফাউন্ডেশনের গ্লোবাল টিচার প্রাইজ দেওয়া হয়।

সেরা শিক্ষকের পুরস্কার পাওয়া পিটার কেনিয়ার পওয়ানি নামক গ্রামে অবস্থিত একটি গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। যেখানে প্রতি ৫৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র একজন শিক্ষক ছিলেন। খুবই সল্প শিক্ষাসামগ্রী নিয়ে কোনোমতে চলে স্কুলটি। তাছাড়া যেখানকার অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ছিলো এতিম।

স্কুলটিতে নানান সমস্যার মধ্যে খাদ্যের অভাব, মাদকাসক্তি, কম বয়সে গর্ভধারণ ও বাল্যবিবাহ সমস্যায় ভুগতে হয়েছে পিটারকে। তবে এতকিছুর পরেও গত ৩ বছরে স্কুলটিতে শিক্ষার্থী বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আর সেখান থেকে পাস করা বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এখন মাধ্যমিকে পড়ছে।

স্কুলটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য নামমাত্র একটি সায়েন্স ক্লাব ছিল। যেখানে দুই-তিনটি কম্পিউটার থাকলেও কাজ করার উপযোগী ছিল মাত্র একটি। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে তিনি বিভিন্নভাবে বিজ্ঞানের উপকরণ সংগ্রহ করার চেষ্টা করতেন। তার একান্ত প্রচেষ্টায় স্কুলটির শিক্ষার্থীরা এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রি থেকেও পুরস্কার এসেছে তাদের ঘরে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে বিখ্যাত সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইনটেলের আয়োজনে ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনায়িরারিং ফেয়ারে অংশগ্রহণের জন্য সম্প্রতি মনোনীত হয়েছে স্কুলটির শিক্ষার্থীরা।

পিটারকে বিশ্বের সেরা শিক্ষকের পুরস্কার দেয়া লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভার্কি ফাউন্ডেশন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বিশ্বের ১৭৯টি দেশের ১০ হাজার শিক্ষককে পেছনে ফেলে পুরস্কার জিতেছেন পিটার তাবিচি।

পুরস্কার গ্রহণের পর পিটার বলেন, আফ্রিকায় প্রতিদিন আমরা নতুন নতুর অধ্যায়ের সূচনা করছি। আজ তেমনি একটি দিন। এই পুরস্কার শুধু আমাকে মূল্যায়ন করা নয় বরং এই মহাদেশের (আফ্রিকা) সমস্ত তরুণের মূল্যায়ন।

পুরস্কারের প্রবর্তক ও ভার্কি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সানি ভার্কি বলেন, পিটারের এই অর্জন অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে। আর কেনিয়াসহ বিশ্বজুড়ে শিক্ষকরা যে অবিশ্বাস্য কাজ করছে তা গুরুত্ব পাবে।