বিশ্বের কম ওজনের শিশু জন্মহারে শীর্ষে বাংলাদেশ

বিশ্বের ১০টি দেশে সবচেয়ে কম ওজন নিয়ে নবজাতকের জন্ম হয় বেশি। এসব দেশের মধ্যে এমন শিশুর জন্ম সবচেয়ে বেশি হয় বাংলাদেশে। এর পরই রয়েছে আফ্রিকার দেশ কমোরস ও নেপাল। তালিকার শীর্ষে থাকা ১০টি দেশই দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দ্য ল্যানচেট গ্লোবাল হেলথ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জন্মের সময় নবজাতকের গ্রহণযোগ্য ওজন ২.৫ কিলোগ্রাম। কিন্তু ২০১৫ সালে বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ২৭ ভাগ অর্থাৎ ৮ লাখ ৬৪ হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে এই ওজনের নিচে। ২০০০ সালে কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে শতকরা ৩৬ ভাগ শিশু। কমোরোস ও নেপালে এই হার যথাক্রমে শতকরা ২৩.৭ এবং ২১.৮ ভাগ। ফিলিপাইন, লাওস ও মৌরিতিয়াস যথাক্রমে ৫ম, ৭ম ও ১০ম অবস্থানে রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রহণযোগ্য ওজনের কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশুর মৃত্যুহার অনেক বেশি। তাদের শারীরিক বৃদ্ধিতে নানা রকম ঝুঁকির সঙ্গে জটিল রোগ হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।

এতে আরও বলা হয়েছে, প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী মোট ২৫ লাখ শিশু জন্ম নেয়। এর মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয় কম ওজনে জন্মগ্রহণের কারণে। বিশ্বে কম ওজনে জন্ম নেয়া মোট শিশুর অর্ধেকই আছে দক্ষিণ এশিয়ায়। ২০১৫ সালে এমন শিশুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৯৮ লাখ।

গবেষণায় দেখা গেছে, সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনেও কম ওজন নিয়ে লাখো শিশু জন্মগ্রহণ করছে। ২০১৫ সালে দেশটিতে ১ কোটি ৭ লাখ ২১ হাজার ৬০০ শিশুর জন্ম হয়েছে, যাদের মধ্যে কম ওজনে জন্ম নিয়েছে ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৯০০ শিশু। এদিকে মানসম্পন্ন তথ্যের ঘাটতি থাকায় ভারতে এ সংখ্যা হিসাব করতে পারেননি গবেষকরা।

লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ম্যাটারনাল অ্যাডোলেসেন্ট রিপ্রোডাকটিভ অ্যান্ড চাইলড হেলথের পরিচালক জয় লন বলেন, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি শিশুর জন্ম হয় ভারত ও চীনে। ভারতে আংশিক তথ্য রয়েছে। তাই এ বিষয়ে সেখানে আমরা কোনো রিপোর্ট করতে পারিনি।

অভিবাসন ও উচ্চ প্রজনন হারের কারণে সাব সাহারান আফ্রিকায় কম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়া শিশুর সংখ্যা ৪৪ লাখ থেকে বেড়ে ৫০ লাখে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে প্রায় ১৯৫টি দেশ কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণকারী শিশুর জন্ম ২০২৫ সাল নাগাদ শতকরা ৩০ ভাগ কমিয়ে আনতে চেয়েছে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে এই হার খুব ধীরগতিতে কমছে। ২০০০ সালে এই হার ছিল শতকরা ১৭.৫। ২০১৫ সালে তা কমে শতকরা ১৪.৬ ভাগে দাঁড়িয়েছে।

গবেষণার প্রধান ও লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ডা. হান্নাহ ব্লেনকো বলেন, কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণকারী শিশুর হার কমিয়ে আনতে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও আমাদের ধারণা, জাতীয় পর্যায়ের সরকারগুলো কম ওজনে জন্ম নেয়া শিশুর সংখ্যা কমাতে সেভাবে কাজ করছে না।

সূত্র : সিজিটিএন